দুই দিনে নিহত ৫৮, ২৭ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে : ভয়াল রূপে বন্যা আরো অবনতির শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০১৭
দেশ, ১৫ আগস্ট: দেশের অভ্যন্তরে টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে উত্তরাঞ্চলের ২০টি জেলা। গত দু’দিনে মারা গেছেন ৫৮ জন। এর মধ্যে রোববার মারা যায় ২৬ জন এবং গতকাল মারা যায় ৩২ জন। অন্যদিকে বন্যায় ভেঙে গেছে বেশ কয়েকটি নদী রক্ষার বাঁধ। পানির স্রোতের তীব্রতায় হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা ব্যারেজ এলাকা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। রেললাইন ও মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়াসহ মহাসড়কের কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে উজানের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও গঙ্গা অববাহিকা থেকে প্রচুর পানি ধেয়ে আসার খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থা। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র (জেআরসি) তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে গত শুক্রবার থেকে পানি বাড়ছে। আগামী ১৯শে আগস্ট পর্যন্ত এই পানি বাংলাদেশের ভাটির দিকে প্রবাহিত হবে। রিপোর্টে বলা হয় বিগত ১০০ বছরের মধ্যে তিব্বতের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে চলতি বছর। ৯৮ বছরের মধ্যে চলতি বছর সব চেয়ে বেশি পানি বেড়েছে তিস্তা অববাহিকায়। এবং ৭৫ বছরের মধ্যে চলতি বছর সব চেয়ে বেশি পানি বেড়েছে গঙ্গা অববাহিকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলের অবস্থা খুবই খারাপ। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও তিস্তা অববাহিকা থেকে একযোগে পানি নেমে আসায় চলতি বছরের বন্যা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী সোমবার পর্যন্ত দেশের ৯০টি পানি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ২৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৬৫টি পয়েন্টে। সংস্থাটি বলছে আগামী তিনদিন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।
সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেছেন, আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী বন্যায় ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলের ২০টি জেলার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উজানের এই পানি নেমে দেশের মধ্য ও নিম্নাঞ্চলের আরো ৯টি জেলাসহ ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এগুলোসহ মোট ৩৩টি জেলাব্যাপী চলতি বছর বন্যা হতে পারে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে ১০ হাজার ৬৩০ টন চাল ও ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আমদানি ও টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ৯৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৬ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন। প্রত্যেকটি লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এবং মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রিপোর্টারদের পাঠানো সংবাদে দেখা যায়, দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় পানিতে ডুবে, সর্পদংশন এবং দেয়াল চাপায় ১৪ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম।
কুড়িগ্রামে সোমবার মারা গেছেন সর্বমোট ১০ জন। এর মধ্যে হাতিয়া ইউনিয়নের উঁচা ভিটা গ্রামের মিষ্টার আলীর পুত্র নাজমুল হক (৪) বন্যার পানিতে ভেসে নিখোঁজ হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তারা মারা গেছেন। জেলার রাজারহাটের ছিনাই এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আরো ২টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে। এছাড়া, ফুলবাড়ী উপজেলার ঘোগারকুটি এলাকার রইচ উদ্দিনের স্ত্রী হালিমা বেগম (৩৫) ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নজরমামুদ গ্রামের মৃত. আবুল হোসেনের ছেলে আজাহার আলী (৭০), নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জে মিজানুরের প্রতিবন্ধী পুত্র আবদুল করিম ওরফে মনসুর (১৪) ও ফান্দের চর জামাল গ্রামের কোরবান আলীর কন্যা প্রতিবন্ধী ফুলবানু (৩১), ভুরুঙ্গামারীর দেওয়ানের খামার এলাকার জামাল উদ্দিনের পুত্র মজিবর রহমান (১৮) এবং উলিপুরের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকার বানভাসা রহমান (৬৫)। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া, জেলার ভুরুঙ্গামারীতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় পাইকেরছড়া ইউনিয়নের আড়ায়ারপার বিলের কাছে রাস্তা পারাপারের সময় দেওয়ানের খামার গ্রামের মজিবর রহমান(১৫) স্রোতের টানে পানিতে ডুবে মারা যায়। অন্যদিকে সোনাহাট সেতুর নিকট সাবমেরিন কেবলের খুঁটি স্রোতের টানে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দুধকুমর নদের পূর্ব তীরের ছয়টি ইউনিয়ন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীতে মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে সৈয়দপুরের চওড়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের সাতপাই গ্রামে জাকারিয়া (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পাটোয়ারী পাড়ায় খরখরিয়া নদীতে ডুবে ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তারাও মারা গেছেন।
রংপুরে বন্যায় ৪ উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ২ শিশু। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আজপুর গ্রামে বন্যার পানিতে তলিয়ে মৃদুল মিয়া (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার গামারীতলা ইউনিয়নে বন্যার পানিতে তলিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার গোয়াতলা হরিপুর গ্রামের ওই শিশু মারা যায়।
উলিপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৭৭ সেঃ মিটার উপর এবং ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি সামান্য কমলেও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নদীর অববাহিকার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, হাতিয়া, দলদলিয়া, থেতরাই, গুনাইগাছ ও বজরাসহ ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক চর ও দুইশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এদিকে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ চরের কৃষক বানভাসা (৬৫) ও হাতিয়া ইউনিয়নের উচা ভিটা গ্রামের মিষ্টার আলীর পুত্র নাজমুল হক (৪) বন্যার পানিতে ভেসে নিখোঁজ হয়েছেন। বন্যায় উপজেলার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ১০ হাজার হেক্টর রোপা আমন, বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে ও ১৬৫টি পুকুরের প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর দুটি স্থানে মূল বাঁধ এবং ৬টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে ৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকা এক থেকে দেড় ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আক্রান্ত এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার বিঘা ফসলি জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মান্দায় ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
সৈয়দপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি পানি সম্পদমন্ত্রীর এলাকা পরিদর্শন
নীলফামারীর সৈয়দপুরে শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে শহরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাছ ধরতে যেয়ে চওড়া নদীতে ডুবে কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের সাতপাই গ্রামে জাকারিয়া (৪৫) নামে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও পাটোয়ারী পাড়ায় খরখরিয়া নদীতে ডুবে ২ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে সোমবার সকাল ১১টায় পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ শওকত চৌধুরী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার ও সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধটিসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সব বাঁধ প্রথমে সংস্কার এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হবে। এজন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
রাজশাহীতে নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হাজারও মানুষ পানিবন্দি
রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীর মোহনপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কয়েকশ’ পরিবারের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত রোববার বিকালে উপজেলার ভীমনগর এলাকার এই শিবনদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে অদ্যাবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি রাজশাহীর পানি উন্নয়ন বোর্ড । ফলে প্রবল স্রোতের তোড়ে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন জানান, উপজেলার ভীমনগর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এই পর্যন্ত ৬শ’ ৭৯ বিঘা জমির ফসল প্লাবিত হয়ে গেছে। এরমধ্যে উঠতি রোপা-আমন, রোপা-আঊশ, পটল, করলা, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত রয়েছে। আর কেবল পান বরজই রয়েছে ২ হেক্টর জমিতে। এই তথ্য এর মধ্যে জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় প্রায় কয়েক‘শ কোটি টাকার ক্ষতি আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে বেড়িবাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল স্রোতে হু-হু করে পানি ঢুকছে। ওই পয়েন্টে থাকা একটি গভীর নলকূপের কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক খুঁটি বিলমাইল বিলে বিলিন হয়ে গেছে। গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার পর্যন্ত ধুরোইল ইউনিয়নেরর ভীমনগর, লক্ষীপুর, পালসা, খানপুর, মজলিশ বাড়ী, মল্লিকপুর, পিয়ারপুর এবং ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের মহিষকুণ্ডী, শ্যামপুর, আতা নারায়নপুর, ঘাষিগ্রাম, পাইকপাড়াসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে মোহনপুর উপজেলার বাকশিমুইল, জাহানাবাদ, রায়ঘাটি, মৌগাছি ইউনিয়নসহ পশ্চিম বাগামারা। এখনই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলে এই গ্রামগুলোসহ আরো নতুন নতুন এলাকা শিবনদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে যাবে বলে বর্তমানে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধের ওই পয়েন্টে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে। স্রোতের তোড়ে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই মুহূর্তেই নিতে পারছেন না তারা। তবে এজন্য বর্তমানে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ তৈরী করা হচ্ছে। স্রোত একটু কমলেই বস্তা ফেলে মেরামতের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা সকালে ঘটনাস্থলে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এখন বিষয়টি তাদের। তার যেভাবে চাইবেন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেভাবেই সহযোগিতা করা হবে। এর আগে গত রোববার বিকেলে পানি ঢোকার স্থানটি এক সাথে ২০ থেকে ২৫ ফুট ভেঙ্গে যায়। খবর পেয়ে এলাকাবাসী গাছ কেটে ভাঙ্গা স্থানে ফেলে বাঁধের পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিবনদীর বেড়িবাঁধের স্লুইচগেট দিয়ে পানি নিস্কাশন পথ বন্ধ করে বিশ্বজিৎ নামের এক ব্যক্তি বিলমাইল বিলে মাছ চাষ করছিল। এরফলে বন্ধ থাকা স্লুইচগেটের পাশ দিয়ে ছোট ছোট গর্ত দিয়ে পানি বের হতে থাকে। এরইমধ্যে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদী ফেঁপে গিয়ে ওই স্থানটি পানির চাপে ভেঙ্গে যায়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, শিবনদীর বেড়িবাঁধে কয়েকটি স্লুইচগেট পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে বিলমাইল বিলে উপজেলার মেলান্দী গ্রামে বিশ্বজিৎ নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার কৃষকরা প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি।
ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান কাজিমউদ্দিন সরকার বলেন, বেড়িবাঁধের স্লুইচগেটের তাদারকি করার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তা করেনি। সারা বছরেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা মিলে না। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবহেলার কারণেই আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, প্লাবিত এলাকা থেকে বাঁধের পশ্চিম পাশে পানির অবস্থা প্রায় ৭ থেকে ৮ ফুট উচু। এই পানি সমান হলে এলাকার মানুষদের অন্যত্র আশ্রয় নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।