ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইফতার মাহফিল: ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড করজে হাসানা পরিশোধে সাহায্যের আহ্বান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মার্চ ২০২৫
লন্ডন, ১৪ মার্চ ২০২৫ :: ইস্ট লন্ডন মসজিদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও ক্বরজে হাসানা পরিশোধে কমিউনিটির মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান।
এতে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান ডক্টর আব্দুল হাই মুর্শেদ, অনারারী সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম হীরা, সিইও জুনায়েদ আহমদ এবং ইমাম ও খতিব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মসজিদের হেড অব অ্যাসেটস এন্ড অপারেশন্স আসাদ জামান। ইফতার মাহফিলের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মিশর থেকে আগত তারাবিহের ইমাম হাফিজ মু’তাজ আল ঘান্নাম ও শায়খ হাজেম সায়েফ।
মসজিদের চেয়ারম্যান ডক্টর আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, ফেইজ-থ্রি খুলে দেওয়ার পর এখন অতিরিক্ত আরো ১ হাজার মুসল্লিসহ সারা মসজিদে প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ একসাথে জামাতে নামাজ পড়তে পারছেন । এই সম্প্রসারিত অংশ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২.২ মিলিয়ন পাউণ্ড । এর মধ্যে ৯শ’ হাজার পাউন্ড এসেছে ডনেশন থেকে এবং বাকি ১.৩ মিলিয়ন পাউণ্ড করজে হাসানা । ক্বরজে হাসানা পরিশোধে এই রামাদ্বানে কমিউনিটির মানুষ এগিয়ে আসবেন বলে আমরা আশাবাদী।
সিইও জুনায়েদ আহমদ ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণের জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলা মিডিয়া ইস্ট লন্ডন মসজিদের কার্যক্রমকে কমিউনিটিতে তুলে ধরে যেভাবে সহযোগিতা করছে এ জন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ । আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, ১৫ মার্চ শনিবার বিকেল ৩টা থেকে ফজর পর্যন্ত চ্যানেল এস টেলিভিশনে লাইভ ফান্ডরেইজিংয়ে অংশ নেবে ইস্ট লন্ডন মসজিদ । ফান্ডরেইজিংয়ে তিন ক্যাটাগরিতে অ্যাপিল রয়েছে । মুসল্লার জন্য ৩০০ পাউন্ড, ডেনার ওয়ালের জন্য ১০০০ পাউন্ড এবং খাদিম প্রোগ্রামের জন্য জনপ্রতি ৫০০ পাউণ্ড। লাইভ ফান্ডরেইজিংয়ে অংশগ্রহণ করে বেশি করে দান করতে আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদে সারাবছর বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালিত হয় । ৫ শতাধিক মানুষের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় । প্রায় ৪০০ নন-মুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন । প্রতি সপ্তাহে দুইটি করে চ্যারিটি সংগঠনকে বিভিন্ন মানবিক কাজের জন্য ফান্ডরেইজিংয়ের সুযোগ দেয়া হয় । বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষের পদচারণা ঘটে।
মসজিদের অনারারী সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম হীরা সাংবাদিকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, রামাদ্বান আমাদেরকে একত্রে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয় । ইফতারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা পারস্পারিক কুশল বিনিময় করতে পারি । প্রতি বছরই আমরা বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে ইফতার মাহফিল আয়োজন করি এবং আমাদের বহুমুখী কার্যক্রমের আপডেট দিয়ে থাকি । সাংবাদিকগণ সারাবছর মসজিদের বহুমুখী কার্যক্রমের সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করে এই মসজিদের অগ্রযাত্রায় ভুমিকা রেখে থাকেন । ইস্ট লন্ডন মসজিদ ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ও ধর্মীয় সেন্টার হওয়ার পেছনে সাংবাদিকদের ভুমিকা অগ্রগণ্য। তিনি বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদ পুর্ব লন্ডনের মুসলিম কমিউনিটির একটি প্রাণকেন্দ্র। শুধু নামাজের মধ্যেই এই মসজিদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়, এখানে অনেকগুলো প্রজেক্ট পরিচালিত হয়। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সেবাগুলোর প্রয়োজন তার অধিকাংশই মসজিদ থেকে প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, পবিত্র রমজানে মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইস্ট লন্ডন মসজিদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । মিশর থেকে আগত দুইজন হাফিজসহ মোট চারজন হাফিজ তারাবিহের নামাজ পড়াচ্ছেন । প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি পুরুষ-মহিলার জন্য পৃথক হলে ফ্রি ইফতার সরবরাহ করা হচ্ছে । আসরের নামাজের পর কুরআন তেলাওয়াত, তারাবিহের নামাজের পুর্বে পবিত্র কুরআনের তরজমা ও তাফসীর, তাছাড়া রমজানের শেষ দশদিন ই’তেকাফ ও জামাতে তাহাজ্জদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে।
আজ থেকে ১১৫ বছর আগে ১৯১০ সালে ‘লন্ডন মস্ক ফাণ্ড’ গঠন করে ইস্ট লন্ডন মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । ১৯৪১ সালে পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের একটি ছোট্ট ঘরে শুরু হয় ইস্ট লন্ডন মসজিদের কার্যক্রম । পরবর্তীতে হোয়াইটচ্যাপেল রোডে একটি পোর্টাকেবিনে মসজিদটি স্থানান্তরিত হয় । একপর্যায়ে পোর্টাকেবিনটি ভেঙ্গে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় আজকের ইস্ট লন্ডন মসজিদ । সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মসজিদটি আরো সম্প্রসারণের প্রয়োজন দেখা দেয় । তাই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় লন্ডন মুসলিম সেন্টার । এরপর মহিলাদের নামাজের সুব্যবস্থা করতে ২০১৩ সালে প্রতষ্ঠা করা হয় মারিয়াম সেন্টার । মারিয়াম সেন্টারের কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের মধ্যখানে অবস্থিত সিনাগগ ভবনটি দেড় মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয়ে ক্রয় করা হয়। এরপর মারিয়াম সেন্টারের নিচে অবস্থিত নামাজের মুল হল বামদিকে সম্প্রসারনের কাজ শুরু হয়। চলিত রমজানের আগে এই সম্প্রসারিত অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে ।
ইস্ট লন্ডন মসজিদে বহু প্রজেক্ট পরিচালিত হয় । যেমন জন্মের পর শিশুর আকিক্বা ও খৎনা করানোর ব্যবস্থা, আরবী শিক্ষার জন্য ইভনিং মাদ্রাসা, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আল-মিজান প্রাইমারি স্কুল, সেকেন্ডারি শিক্ষার জন্য লন্ডন ইস্ট একাডেমি, লেখাপড়া শেষে জীবনসঙ্গী বেছে নিয়ে আল-এসহান ম্যারেজ ব্যূরো, বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজনে লন্ডন মুসলিম সেন্টার ভেন্যূ, বয়স্কদের সেবার জন্য ইএলএম সিনিয়র সিটিজেন্স ফোরাম, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ‘ফেইথ ইন হেলথ প্রজেক্ট, সর্বোপরি মৃত্যূর পর দাফন কাফনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রয়েছে তসলিম ফিউনারেল সার্ভিস। হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে আসা, গোসল দেওয়া এবং জানাজা শেষে গোরস্থানে নিয়ে সমাহিত করার কাজ করে থাকে তসলিম ফিউনারেল সার্ভিস । সপ্তাহের প্রতিদিনই একাধিক জানাজা হয়ে থাকে । বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার ৪/৫ জন মানুষের জানাজা ও দাফনকার্য সম্পাদন করে থাকে তসলিম ফিউনারেল সার্ভিস।
এছাড়াও, মানুষের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে কীভাবে অরো নতুন নতুন সার্ভিস চালু করা যায়- এ ব্যাপারে রয়েছে বহুমুখী পরিকল্পনা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি