সিলেটে হামলায় মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ গুরুতর আহত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সিলেট প্রতিনিধি:: আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটে সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে শুক্রবার ভোরে নগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আর চিকিৎসা নিয়ে মিসবাহ সিরাজ অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন।
৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আত্মগোপনে রয়েছেন।
স্বজনদের বরাতে জানা গেছে, তিনি নিজ বাসায় না থেকে নগরের সুবিদবাজার এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। ভোর চারটার দিকে নগরের সাগরদিঘীর পাড় এলাকায় মিসবাহ সিরাজ রক্তাক্ত অবস্থায় রয়েছেন বলে খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এরপর একটি বেসরকারি হাসপাতালের এম্বুলেন্স যোগে তাকে নগরের সুবহানীঘাটের আল হারমাইন হাসপাতালে এনে ভর্তি করান।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভোররাত ৪টার দিকে এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার হাত ও পা রক্তাক্ত অবস্থায় জখম ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাত-পায়ে আঘাত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এরপর মিসবাহ সিরাজকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে মিসবাহ সিরাজকে কোথায় নেয়া হয়েছে সেটি কেউ বলতে পারছেন না। ঘটনা সম্পর্কে জানতে মিসবাহ সিরাজ সহ তার পরিবারের একাধিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কয়েকজন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তারাও শুনেছেন মিসবাহ সিরাজের উপর নগরের সুবিদবাজার এলাকায় হামলা হয়েছে। তবে কোথায় কখন তিনি আহত হয়েছেন সেটি গত রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তার পরিবারের তরফ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নগর পুলিশের কাছেও নেই।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত একটি খবর তারাও শুনেছেন। কিন্তু কোথায়, কিভাবে ঘটেছে সেটি জানেন না। এ ব্যাপারে পুলিশের তরফ থেকে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মিসবাহ সিরাজের স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সিলেটে দায়ের করা কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন মিসবাহ সিরাজ। এ কারণে তিনি নগরীর ফাজিলচিস্ত আবাসিক এলাকার বাসাতে না থেকে সুবিদবাজার এলাকার একটি বাসায় বসবাস করতেন। একমাত্র পরিবারের সদস্যরা তার খবর জানতেন।
শুক্রবার দুপুরের পর তারা আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ভোরাতে নগরের সুবিদবাজারের পাশ্ববর্তী সাগরদিঘীর পাড় এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে শুনেছেন। তার স্ত্রী ও সন্তান গিয়ে কয়েক জন যুবকের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় ওই যুবকদের চাহিদা মতো টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে বলে তারা জেনেছেন। তারা জানিয়েছেন, মিসবাহ সিরাজ সুবিদবাজার এলাকার বাসা থেকেই মিসবাহ সিরাজকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে মিসবাহ সিরাজের ফোন থেকেই স্ত্রী ও সন্তানকে মোবাইল ফোনে ফোন দেয়া হয়। এরপর ওই যুবকদের তথ্য মতে, তাকে নগরের সাগরদিঘীরপাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের শরীরের আঘাত গুরুতর। হাতে ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কয়েকটি রগ কেটে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখন তাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থনে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সিলেটের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আফতার হোসেন খান ও পলাতক সন্ত্রাসী পাঙ্গাস ছিলেন মিসবাহ সিরাজের অনুসারী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারা মিসবাহ সিরাজের শেল্টারে হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ এলাকায় বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি বিরোধী বলয়ের বাসা বাড়িও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এছাড়া পিপি হিসেবে নানা সময় বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন এডভোকেট মিসবাহ সিরাজ। এসব ঘটনার কারণে আওয়ামী লীগ শাসনের শেষ দিকে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে সিলেটে অবস্থান করলেও রাজনীতি থেকে দুরে তিনি।