শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
গণভবনের ভেতরে অন্ধকার। প্রায় ১৫০ জন কর্মী গণভবনের ভেতরে পুকুর পরিষ্কার করা ছেড়ে একজনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। তাদেরই একজন বলে উঠলেন, ‘মা, বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনার সঙ্গে কথা বলছি।’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘বিশ্বাস না হওয়ার কী আছে! আমি শেখ হাসিনা।’ প্রধানমন্ত্রী এভাবেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে মাঝে মধ্যেই চলে আসেন মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের নেত্রী। আমাকে দূরের মানুষ করো না।’
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৯তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মানুষের জন্যই প্রতিদিনের প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগানোর পণ তার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যেন জাতির জনকের স্বপ্নকে সফল করার প্রত্যয়েই এগিয়ে চলেছেন। তাই দেশের সাধারণ মানুষ ভালোবেসে তাকে ডাকেন ‘শেখের বেটি’।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি বেশি কথা বলতে চাই না। বাংলাদেশের জন্যই শেখ হাসিনার বেঁচে থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জন্য তার নির্বিঘ্ন ও সুস্থ জীবন প্রয়োজন। এ মুহূর্তে এ ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। তিনি দীর্ঘ জীবন লাভ করুন এটাই এখন একমাত্র চাওয়া।’
গণভবন সূত্র জানায়, শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ, ভোরে কোরআন তেলাওয়াত ও ফজরের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় শেখ হাসিনার। এরপরে এক কাপ চা আর এক বাটি মুড়ি নিয়ে পেপার পড়েন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রেস উইং সকাল সাতটায় পেপার কাটিং প্রস্তুত করে যতক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায় ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদপত্র পড়া হয়ে যায়। এমনকি সেসব পড়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়ে দেন কখনো কখনো। এই সময়ে পুনঃপ্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো দেখেন টেলিভিশনে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে পরিণত করেছে এক আধুনিক ও অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় তিনি দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাণ্ডারি। এই অভিযাত্রায় তিনি বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ও ভরসাস্থল। অথচ ব্যক্তি শেখ হাসিনা যেন খুব সাধারণ একজন মানুষ। এ জন্যই আমাদের কাছে তিনি আরো বেশি সম্মানের, শ্রদ্ধার মানুষ হয়ে ওঠেন। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তার। তাদের কথা দরদ নিয়ে শোনেন। অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী তিনি। কিছু ভোলেন না। আর কোনো সময় নষ্ট করেন না।
রাষ্ট্র পরিচালনার সীমাহীন ব্যস্ততার মাঝেও প্রচুর বই পড়েন প্রধানমন্ত্রী। ভালোবাসেন কবিতা পড়তে। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে সেলিনা হোসেন, হরিশংকর জলদাস, আনিসুল হকের লেখা পড়েন। গান শোনেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ। পছন্দের গান ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’। কাজের ফাঁকেই ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র কাজ করেছেন। এখন দেখছেন ‘বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি’।
ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হয়ে শেখ হাসিনা যখন জেলে সেই সময় তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করেছেন। ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে রূপকল্প সেটা তখনই স্থির করেছিলেন তিনি। শিক্ষকদের প্রতি, প্রবীণ নেতাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য কেন প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ জীবন প্রয়োজন তারই ব্যাখ্যা দিলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এই ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পেলেন তা তো মানুষের জন্য কাজ করবারই স্বীকৃতি। দেশ থেকে মঙ্গা দূর করেছেন, না খেয়ে দেশে মানুষ আর মরে না। দক্ষ হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তিনি দেশের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তিনি দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের যে বঞ্চনা ও ক্ষোভ জমে ছিল তা দূর করেছেন। দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে চলেছেন। যদি তিনি দীর্ঘ সময় দেশ পরিচালনা করতে পারেন, যদি তিনি নেতৃত্বে থাকেন তবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব— এটা আমি বিশ্বাস করি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বললেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাঙালিয়ানার ধারক। সহজ নিরাভরণ জীবনযাপন করেন তিনি। সাধারণ খাবার খান। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। দেশের প্রতিটি খাত নিয়ে তার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা মতো তিনি এগিয়ে চলেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত মানবিক ও আন্তরিক। তার সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায় তার পড়াশোনার পরিধি ব্যাপক, রাষ্ট্র পরিচালনার মতো ব্যস্ত সময়ের মাঝেও তিনি প্রতিটি অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখেন। সাহিত্যচর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। প্রতিবছর বইমেলায় তার রচিত গ্রন্থ প্রায় নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।’
বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুত্ফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাই-বোন। অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। ভাই-বোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া সবাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের হাতে নিহত হন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষই যেন ধ্যান-জ্ঞান হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনার!
কর্মসূচি:
জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হবে। আজ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে।
এছাড়া শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, আওয়ামী ওলামা লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ।