২৫০ জনকে সীমান্তে জড়ো করেছে ভারত, শিগগিরই ‘পুশইন’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৫
দেশ ডেস্ক:: ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে প্রায় ২৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই অভিযানে অংশ নেয় ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ), গুজরাট পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গুজরাট পুলিশের দাবি, প্রায় দুই মাস ধরে ‘অবৈধভাবে বসবাসকারী’ বাংলাদেশিদের শনাক্ত করতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়। এরপর শুরু হয় তাদের ‘ফেরত পাঠানোর’ প্রক্রিয়া।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, সরকারি প্রোটোকল অনুযায়ী এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আটক ব্যক্তিদের আইএএফের এয়ারবাস A321 বিমানে করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের স্থলপথে বাংলাদেশে পাঠাবে। ভাদোদরার বিমান ঘাঁটি থেকে কথিত বাংলাদেশিদের এই বিশেষ ফ্লাইটে তোলা হয়।
গুজরাট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা বাংলাদেশি। তাঁদের অস্থায়ী আটক কেন্দ্রে রাখার পর থেকেই ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। এ কাজে বিএসএফ যুক্ত থাকায় গুজরাট পুলিশ ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (FRRO) ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।’
তিনি আরও বলেন, এপ্রিল মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতজুড়ে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশনা জারি করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএসএফ এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করেছে। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
এই পদক্ষেপ ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের ভেতরে অবৈধ অভিবাসন ও সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট উদ্বেগের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সমন্বয় ছাড়া এরূপ পদক্ষেপ ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও তারা সতর্ক করছেন।
ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের বক্তব্য, ‘কোনো নাগরিকের পরিচয় যাচাই ছাড়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই কাউকে অন্য দেশে পাঠানো মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
এপ্রিলে গুজরাট পুলিশের এক অভিযানে সাড়ে ৬ হাজার মানুষকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়। পরে তদন্তে দেখা যায়, আটক অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক। একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে আসাম রাজ্যেও, যেখানে শুধু মুসলিম ও বাংলা ভাষাভাষী হওয়ার ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদেরও বাংলাদেশি দাবি করে সীমান্তে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিএসএফ।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রবণতা শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, প্রতিবেশী বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

