১০০ দিন পূর্তিতে ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিইও জুনায়েদ আহমদ : আমরা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে চাই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
ইসলামি মূল্যবোধ ও শিক্ষার প্রসারে বাতিঘরের ভূমিকা পালন করবে ইস্ট লন্ডন মসজিদ বলে মন্তব্য করেছেন মসজিদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জুনায়েদ আহমেদ। সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সিইও হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সম্মানিত বোধ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইস্ট লন্ডন মস্ক ধর্ম, কমিউনিটি সেবা ও ঐক্যের বাতিঘর । আমার প্রথম ১০০ দিনের কাজ নতুন দৃষ্টিতে এবং গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আমরা বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা ও গতিশীলতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি।’
ইস্ট লন্ডন মস্ক ট্রাস্টের একজন সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বহু বছর ধরে ইএলএম-এর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ সংস্থার ভেতরে ঢুকে এর কাজ করার ধরন দেখার অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন।
তিনি মনে করেন, প্রতিটি দিনই অনন্য, বৈচিত্রময় চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা নিয়ে সামনে আসে। কমিউনিটিতে মসজিদের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে এই চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা । এছাড়া ইএলএম-এর প্রাতিষ্ঠানিক মিশনের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য গত ১০০ দিনে বহু স্টেইকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
মসজিদের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীদের আন্তরিকতা তাঁকে উৎসাহিত ও আনন্দিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি । সেবা, শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার ব্যাপারে তাদের যে আগ্রহ ও প্রত্যয় তা রীতিমতো উৎসাহব্যঞ্জক। ইএলএম-এর গত কয়েক বছরে নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প, সেবা ও সফল পার্টনারশিপের সাফল্যের পিছনে তারাই প্রধান চালিকাশক্তি।

মসজিদের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০ বছর আগে লন্ডন মুসলিম সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় সেবার পাশাপাশি কমিউনিটিতে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে । সপ্তাহে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের আসা-যাওয়ার মধ্যদিয়ে এই মসজিদ ও সেন্টার দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রথম ১০০ দিনের ফোকাস সম্পর্কে তিনি জানান, আমি মসজিদের কাজগুলোকে একত্রিত ও স্থিতিশীল করতে চেয়েছি । ২০২৪ সালে আমাদের মূল কৌশলগত গুরুত্বও হবে এই বিষয়ের ওপরই । এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ফাউন্ডেশনকে আরো শক্তিশালী করা, স্ট্রিমলাইনিং প্রসেস এবং সম্পদের বণ্টনকে আরো সুসংহত করা । গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া এর মধ্যে অন্যতম।
তিনি জানান, ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে সব সময়ই চেষ্টা ছিল উন্নয়ন ও সবচেয়ে ভালো কাজের চেষ্টা অব্যাহত রাখা । যেন প্রত্যেক কর্মী নিজেদের সেরাটুকু দেয়ার চেষ্টা করেন।
এরপরও সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংস্থার টেকসই অবস্থা এবং মূল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে সম্পন্ন করার চেষ্টা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি । জুনায়েদ আহমদ বলেন, এ বছরের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে নারী ও পুরুষের নামাজের হলগুলোকে আরো সম্প্রসারিত করা।
তিনি জানান, কৌশলগত পরিকল্পনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর দিকেও আমাদের নজর রয়েছে । বিশেষ করে প্যালেস্টাইন ইস্যু নিয়ে কমিউনিটির সবার মধ্যেই উদ্বেগ রয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের খাদ্য, ওষুধ আর পানির জন্য এ পর্যন্ত ১৩০ হাজার ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে । এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ১০০ দিনের কর্মতৎপরতায় শুধু যে শিখেছি বা বুঝেছি তা নয়- এ সময়ের মধ্যে পরিবর্তনশীল ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু দর্শনও তৈরি হয়েছে। আমার মধ্যে ব্যাপক আশাবাদ তৈরি হয়েছে । সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রত্যয়ও রয়েছে। আমাদের সামনে যে পথ রয়েছে তা গতিশীলতার, নতুনত্বের এবং কাজের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ের। আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ শুধু বর্তমানের যে সেবাগুলো চালু রয়েছে সেগুলো বৃদ্ধি করার জন্যই নয়, বরং একটি প্রাণবন্ত মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে একটি মসজিদের ভূমিকা কতটা বিস্তৃত হতে পারে তাও নিশ্চিত করে দেবে । ‘এ সময় তিনি মদিনাতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ইসলামের প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, ইস্ট লন্ডন মসজিদ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে এবং সবার অগ্রভাগে থাকবে এই প্রতিষ্ঠান । ইসলামি মূল্যবোধ, শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ এবং কমিউনিটির তৎপরতার ব্যাপারে বাতিঘরের ভূমিকা পালন করবে এই মসজিদ।’
তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে চাই, যা শুধু আমাদের কমিউনিটির উপকারই করবে না, বৈশ্বিক স্তরেও সহায়ক হবে । তিনি কমিউনিটি সেবা, আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি এবং অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনে নিজের প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইএলএমকে উৎকর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। আমরা আমাদের সব স্টেইকহোল্ডারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই। যাদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চাই এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে চাই।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই যাত্রাপথে জীবনে কৌশলগত অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে, সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপ দিলে আকাঙ্খাগুলোর বাস্তবায়নের কাজ সহজ হবে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরিফে বলেছেন, মানবতার উন্নয়নে তোমরাই হচ্ছ সর্বশ্রেষ্ঠ কমিউনিটি-তোমরা ভালো কাজকে উৎসাহিত করবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহ’র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।
তিনি পরিবর্তনের এই যাত্রায় যে কোনও নতুন ভাবনা, পরামর্শ এবং সহযোগিতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন । তিনি জানান, এর আলোকে তিনি সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা হলো, কমিউনিটি কনভার্সেশন নামে একটি বৈঠক আয়োজন। এতে করে উপস্থিত সবাই তাদের ব্যক্তিগত মতামত দেয়ার সুযোগ পান । এছাড়াও তিনি যে কোনো প্রয়োজনে বা মতামত দেয়ার জন্য ইমেইলে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানান। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

