জয়ের স্বপ্ন দেখছেন এরদোয়ান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২৩
দেশ ডেস্ক:: তুরস্কে আজ দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট আয়োজিত হচ্ছে। এবারের এ নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। প্রথম দফা ভোটেও তিনি এগিয়ে ছিলেন। এখন এরদোয়ানের ২০ বছরের ক্ষমতার দৌড় আরো দীর্ঘায়িত হবে কি না, তা নির্ধারিত হবে আজ দ্বিতীয় দফা ভোটে।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারুলু, যিনি বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের জোটের সমর্থনপুষ্ট। তিনি এ ভোটকে তুরস্কের ভবিষ্যতের নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন।
এখনও পর্যন্ত এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানই জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন বলে সনে হচ্ছে। সমর্থকদের ‘নতুন যুগ’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এ তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
তবে এ দফায়ও নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা মানে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এটা চলবে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা তুর্কি নাগরিকদের ভোট নেওয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
নির্বাচনের প্রথম ধাপে বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছিলেন, যা শতকরা হিসেবে মোট ভোটারের ৮৮.৮ শতাংশ।
দুই প্রার্থীর নজরই এবার ৮০ লাখ ভোটারের দিকে, যারা আগেরবার ভোট দেননি কিন্তু এবার ভোট দিতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগে কিলিচদারুলু তার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।
তার অভিযোগ, ভোটারদের কাছে তার পাঠানো টেক্সট মেসেজ ব্লক করা হয়েছে, আর এরদোয়ানের পাঠানো টেক্সট মেসেজ স্বাভাবিকভাবেই পৌঁছেছে।
কোনো জায়গায় যেন ভোট জালিয়াতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিরোধী জোট রীতিমত স্বেচ্ছাসেবকদের বাহিনী মাঠে নামিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনে এরদোয়ান তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে জনসমর্থনে এগিয়ে ছিলেন।
এদিকে প্রচারণার শেষ দিনে বিরোধী জোটের নেতা কিলিচদারুলু বেশ অভিনব ধরনের প্রেসিডেন্সির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমার প্রাসাদে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি আপনাদের মতো সাধারণভাবে থাকতে চাই…আর আপনাদের সমস্যা সমাধান করতে চাই।”
এই মন্তব্য আসলে এরদোয়ানের বর্তমান বাসভবনকে কটাক্ষ করেই করা হয়েছে।
২০১৪ সালে এরদোয়ান যখন প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রেসিডেন্ট হন, তখন আঙ্কারার ঠিক বাইরে বিশাল এক প্রাসাদে তার বাসভবন স্থানান্তর করেন।
তুরস্কের মানুষের মতামত এই মুহূর্তে দুই মেরুতে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে, বিরোধী নেতা কিলিচদারুলুর সমর্থকরা মূলত ধর্ম নিরপেক্ষ – তবে তাদের মধ্যে অনেক জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সমর্থকও রয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আগে টানা কয়েক দিন ধরে দুই ব্যক্তিই একে অপরকে খোঁচা দিয়ে মন্তব্য করেছেন।
কিলিচদারুলু প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তিনি ভীতু, তাই নিরপেক্ষ নির্বাচন থেকে দূরে পালাচ্ছেন।
অন্যদিকে এরদোয়ান তার প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তাকে ‘উগ্রবাদী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে এমন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান ইস্যু ছিল জিনিসপত্রের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি।
তুরস্কে মূল্যস্ফীতির হার উঠেছে ৪৪ শতাংশে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কমেছে এবং বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে।
সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২০০২ সালের পর থেকে প্রথমবার নেতিবাচক হয়েছে।
এরদোয়ানের সময়কালে অর্থনীতির এই অবস্থা হওয়ার কারণে অনেকেই তার প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ।
কিন্তু এই জনসংখ্যারই একটা বড় অংশ আবার এরদোয়ানের ওপরই আস্থা রাখছেন। অনেকেই মনে করেন, বিরোধী জোটের সঙ্গে উগ্রবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে, যেমনটা এরদোয়ান অভিযোগ করেছেন।
তবে তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল এইচডিডি পার্টি উগ্রবাদী গোষ্ঠী পিকেকে’র সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এই বিরোধী জোটেরই প্রধান দলের সঙ্গে উগ্রবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে, রোববারের নির্বাচনে যে দল বা জোটই জিতুক, তুরস্কের সংসদের দখল এরই মধ্যে এরদোয়ানের ইসলামপন্থী একে পার্টি এবং দক্ষিণপন্থী এমএইচপি পার্টির কাছে রয়েছে।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে এরদোয়ানের জোট ৪৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যদিকে কিলিচদারুলু প্রথম ধাপে ভোট পেয়েছিলেন ৪৪.৯ শতাংশ, অর্থাৎ এরদোয়ানই এগিয়ে আছেন।
কিলিচদারুলুর প্রতি সমর্থন রয়েছে ছয়-দলীয় বিরোধী জোটের। তুর্কি জনগণকে তিনি বিভিন্ন আশার বাণী শুনিয়েছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবার নির্বাচিত হলে একটি নতুন তুর্কি শতাব্দীর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি আরও উন্নয়ন, আরও শক্তিশালী এক তুরস্ক উপহার দেবেন।
সূত্র : বিবিসি