টিকা যেভাবে শিশুদের সুরক্ষা দেয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মার্চ ২০২৩
এনএইচএস ভ্যাকসিন যে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার
ব্যাপারে নিরাপদ, বিষয়টি আমরা কী করে বুঝবো?
স্কুলে এনএইচএস ভ্যাকসিন দেয়া হয় । স্কুলে যে ভ্যাকসিনগুলো দেয়া হয় সেগুলো নিবীড়ভাবে পরীক্ষা করা। দেশের লাখ লাখ মানুষ এই ভ্যাকসিন দিয়েছে । আমাদের কমিউনিটিরও অনেকেই দিয়েছেন। মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার রেগুলারিটি এজেন্সি (এমএইচআরএ) ভ্যাকসিনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন। এগুলোর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তার ওপর নজরদারি করার দায়িত্বও তাদের । হাতে একটি গুটা ওঠার মতো সাধারণ লক্ষণগুলোও তারা বিচার করে।
অভিভাবক হিসেবে, সন্তানদের টিকা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি নিশ্চিন্ত। এটি অ্যালার্জি বা অন্য কোন সমস্যা তৈরি করে না। ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারে বহু বিভ্রান্তি রয়েছে। আপনার যদি এই বিষয়ে উদ্বেগ থাকে তাহলে আপনার জিপি, স্কুলের নার্স বা ফার্মাসিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা সব সময় আপনাদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত।
আমি কি আমার শিশুকে ভ্যাকসিন দেব?
এটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত। ভ্যাকসিন না দেয়া কোনো শিশু যদি হাম বা এ ধরনের কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্তের কাছাকাছি যায় তাহলে তারও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাম একটি মারাত্মক ব্যাধি। এর কারণে নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার পর কয়েক বছর পর্যন্ত এটি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে রাখে। সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্তির সবচেয়ে নিরাপদ উপায় টিকা দেয়া। এমএমআর ভ্যাকসিন আপনার শিশুকে হাম, মামপস এবং রুবেলার মতো রোগ থেকে সুরক্ষা দেবে। একই সঙ্গে এ গুলোর ছড়িয়ে পড়াও আটকে দিতে সক্ষম। ফলে যারা ভ্যাকসিন নেয়ার সুযোগ পায়নি তাদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব
টিকা কী করে কাজ করে?
টিকা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সুনিদির্ষ্ট সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার প্রশিক্ষণ দেয়। শরীরে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে। শরীরে জীবাণু, ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশেষ কোষ সৃষ্টি করে। এগুলো আপনাকে গুরুতর রোগের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।আমার শিশু কোনো ভ্যাকসিন গ্রহণ থেকে বাদ
পড়লো কিনা তা কি আমি জানতে পারবো?
হ্যা, পারবেন। আপনার শিশুর ডিজিট্যাল হেলথ রেকর্ড বা তাদের রেডবুক জানিয়ে দেবে তাদের কবে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এছাড়া আপনি আপনার জিপির সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তাদের কাছেও আপনার শিশুর ভ্যাকসিনেশনের রেকর্ড রয়েছে।
আমার শিশুর ভ্যাকসিনের তারিখ
পার হয়ে গেলে করনীয় কী?
আমাদের সন্তানরা স্কুল ছাড়ার আগেই তাদের ১৮ ধরনের গুরুতর রোগের ভ্যাকসিন দেয়ার কথা। আপনার শিশুর যদি একটি ভ্যাকসিন বাদ পড়ে থাকে তাহলে আপনার জিপির সঙ্গে কথা বলুন। তিনি আপনাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন। আপনার শিশু যদি হোম স্কুলিং করে অর্থাৎ বাসায় মা-বাবার তত্ত্বাবধানে লেখাপড়া করে বা মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে না থাকে তাহলে অথবা যদি তার সব ভ্যাকসিন দেয়া না হয় তাহলে স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন । শিশুদের ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাওয়া বলতে কিছু নেই।
ভ্যাকসিন কি হালাল বা ভ্যাজিটেরিয়ান?
নানা উপকরণ দিয়ে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয়। খুব অল্প ভ্যাকসিনেই প্রাণিজ পদার্থ যেমন জেলেটিন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কিছু ভ্যাকসিনে ডিমের মতো পণ্য ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকসিন দেয়ার আগে আপনাকে যে সম্মতিপত্র পাঠানো হবে সেখানে এ ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। এছাড়া যিনি ভ্যাকসিন দিতে আসবেন তার কাছ থেকেও আপনি জানতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প আছে কিনা তাও তিনি আপনাকে জানিয়ে দেবেন। এছাড়া আপনি আপনার ধর্মীয় নেতার কাছ থেকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা জানতে চাইতে পারেন।
আমার শিশুর কি বিসিজি
ভ্যাকসিনের প্রয়োজন আছে?
বিসিজি ভ্যাকসিন (বিসিলাস ক্যালমেট-গুরিন) টিউবার কোলোসিস বা যক্ষ্মার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এটা নিয়মিত সব শিশুকে দেয়া হয় না। টিবির ঝুঁকি রয়েছে এমন শিশুদের এটা দেয়া হয়। যেসব শিশু টিবি আক্রান্তদের কাছাকাছি থাকে অথবা যারা ইউকে’র টিবি আক্রান্ত এলাকায় থাকে অথবা যেসব শিশুর মা-বাবা বা তাদের দাদা-দাদি, নানা-নানি এমন কোনো দেশ থেকে এসেছেন যেখানে টিবির প্রাদুর্ভাব রয়েছে তাদের এই টিকা দেয়া হয় । জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে এ টিকা দেয়া হয়ে থাকে। শিশুর মা-বাবা বা তাদের দাদা-দাদি, নানা-নানির জন্ম যদি এমন কোনো দেশে হয় যেখানে টিবির প্রাদুর্ভাব রয়েছে বা ওই ধরনের কোনো দেশে তারা যদি তিন মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় কাটিয়ে থাকেন তাহলে সেসব শিশুর বয়স বেশি হয়ে গেলেও এ টিকা দেয়া হয়।
আমার সন্তানকে কি
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেব?
২০২২ সালের ৩১ আগস্টের পর পাঁচ ও তার বেশি বয়সী সব শিশুকে দুই ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ বছর ৩০ জুন পর্যন্ত এ নিদের্শনা বহাল থাকবে। অন্যদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলে বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে বা তারা যদি এমন কারো সঙ্গে বাস করেন যাদের কোভিডের ঝুঁকি রয়েছে তাদের এ ভ্যাকসিন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর যাদের ইমিউন সিস্টেম খুব বেশি দুর্বল তারা তৃতীয় ডোজ নিতে পারবেন।
আমার সন্তান কি স্ট্রেপ এ ও স্কারলেট
ফিভারের ভ্যাকসিন নিতে পারবে?
গত কয়েক মাসে আপনি হয়তো স্ট্রেপ-এ ও স্কারলেট জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। এগুলোর কোনো ভ্যাকসিন নেই। অবশ্য এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্ট্রেপ-এ ইনফেকশন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। আপনার শিশুর যদি স্কারলেট জ্বরের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে জিপি প্র্যাক্টিশনার অথবা ১১১-এ ফোন করুন। এই ফোন করতে কোন খরচ হবে না। স্কারলেট জ্বরের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে, জ্বর, গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে সমস্যা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। এছাড়াও এতে শরীরে ফুসকুড়ি বের হতে পারে।
বড়রা কি তারিখ পার হয়ে যাওয়ার
পরও ভ্যাকসিন দিতে পারবেন?
ছোট বেলায় বা বড় হওয়ার পরও আপনার যদি কোনও ভ্যাকসিন মিস হয়ে থাকে তাহলে আপনি জিপি প্র্যাকটিশনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ নিতে পারেন। আপনা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি আপনাকে জানাবেন। যেমন বলা যায়, নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেয়া হয় ৬৫ বছর বয়সে । আপনার যদি এই ভ্যাকসিন মিস হয়ে থাকে তাহলে বয়স ৭০ পার হলেও আপনি এটি পাবেন। এ ব্যাপারে আরো জানতে www.nhs.uk/vaccinations ওয়েবসাইট ভিজিক করুন।
এক বছরের কম বয়সীদের জন্য
* ৮, ১২ ও ১৬ সপ্তাহ বয়সে একের ভেতর ছয় ভ্যাকসিন
এগুলো ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস বি, হিব, পোলিও, টিটেনাস, হুপিং কফের ভ্যাকসিন* ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ বয়সে রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন
এই সংক্রামক পেটের পীড়া থেকে সুরক্ষা দেয়
* ৮-১৬ সপ্তাহ বয়সে ম্যানবি ভ্যাকসিন
ম্যানিনগোকোক্যান গ্রুপের বি ব্যাক্টেরিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়
*১২ সপ্তাহে নিউমোকোক্যাল (পিসিভি) ভ্যাকসিন
নিউমোনিয়া, ম্যানিনজাইটিস ও সেপসিস থেকে সুরক্ষা দেয়
এক থেকে দেড় বছর বয়সীদের শিশুদের জন্য:
১ বছর: হিব/ম্যান সি ভ্যাকসিন- একের ভেতর ছয় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ম্যানিনজাইটিস সি’র বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করে।
ম্যানবি ভ্যাকসিন- শিশুদের ম্যানবি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
নিউমোকোক্যাল (পিসিভি) ভ্যাকসিন-পিভিসি ভ্যাকসিনের সুরক্ষা বাড়ায়।
এমএমআর ভ্যাকসিন- মিসেলস, মাম্পস ও রুবেলার বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাড়ায়
তিন বছর ও চার মাস: একের ভেতর চার প্রাক স্কুল ভ্যাকসিন- একের ভেতর ছয় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
এমএমআর ভ্যাকসিন- শিশু বয়সে দেয়া এমএমআর ভ্যাকসিনের সুরক্ষা বাড়ায়
১২-১৩ বছর বয়সীদের জন্য ভ্যাকসিন: এইচপিভি ভ্যাকসিন- হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়
১৪ বছর: একের ভেতর তিন টিনএইজ বুস্টার- এটা একের ভেতর ছয় এবং একের ভেতর চার প্রিস্কুল ভ্যাকসিনকে শক্তিশালী করে।
ম্যানএসিডাব্লিউওয়াই- চার ধরনের ম্যানিনগোকোক্যাল ব্যাক্টেরিয়া- এ, সি, ডাব্লিউ এন্ড ওয়াইয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়; এগুলোর কারণে ম্যানিনজাইটিস হয় এবং রক্ত বিষাক্ত হয়ে পড়ে।