বৃটেনের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা : বাড়ি কেনায় স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০১৭
০ সর্বনিম্ন মজুরী বৃদ্ধি
০ বছরে ৩ লাখ ঘর নির্মাণ
০ তরুণদের জন্য সাশ্রয়ী রেলকার্ড চালু
০ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ও ম্যাথস শিক্ষায় নতুন বরাদ্দ
দেশ রিপোর্ট: তরুণদের বাড়ি কেনায় উৎসাহিত করতে ফার্স্ট টাইম বায়ারদের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সর্বনিম্ন মজুরি বৃদ্ধি এবং আবাসন সংকট নিরসনে প্রতি বছরে তিন লাখ নতুন ঘর নির্মাণের ঘোষণাসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চ্যান্সেলার ফিলিপ হ্যামন্ড। ২১ নভেম্বর বুধবার হাউজ অব কমন্সে এক ঘন্টারও বেশি সময় নিয়ে বাজেট প্রস্তাব ঘোষণার সময়ে তিনি ওইসব প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের যেকোনো এলাকায় ৩শ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত মূল্যের বাড়ি কিনতে ফার্স্ট টাইম বায়ারদের স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে না। আর লন্ডনের মতো উচ্চ মূল্যের বাজারে ৫শ হাজার পাউন্ডের বাড়িতে ফার্স্ট টাইম বায়ারদের জন্য একই নিয়ম কার্যকর হবে। নতুন নিয়মটি বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হিসাবে ধরে নেয়া হবে।
এদিকে, আবাসন সংকট কাটাতে ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর নতুন ৩ লাখ ঘর নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছে চ্যান্সেলার ফিলিপ হ্যামন্ড। নতুন ঘর নির্মাণ ও স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফের ঘোষণা দিয়ে চ্যান্সেলার বলেন: “আগামী প্রজন্মের কাছে দেয়া আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ এটি। এর মাধ্যমে বাড়ির মালিক হওয়ার বিষয়টি আবারও বাস্তব হয়ে ধরা দেবে তরুণ প্রজন্মের কাছে”। চ্যান্সেলার বলেন: লন্ডনে ২৭০ হাজার আবাসিক ঘর নির্মাণের প্ল্যান ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়ে পড়ে আছে, কিন্তু নির্মাণ কাজ এগোচ্ছে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্যার অলিভার লেটউয়িনের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠণের ঘোষণা দেন তিনি। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ এ বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন চ্যান্সেলার। আগামী এপ্রিল মাস থেকে সর্বনিম্ন জাতীয় মজুরী ঘন্টাপ্রতি ৭.৫০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৭.৮৩ পাউন্ডে উন্নীত করার ঘোষণা এসেছে বাজেট প্রস্তাবে। ইউনিভার্সেল ক্রেডিট পদ্ধতিকে সংস্কার করার অংশ হিসাবে ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দের ঘোষণা দিয়ে চ্যান্সেলার বলেন, বেনিফিটের আবেদনের পরে আর সাত দিনের অপেক্ষা করতে হবে না; আবেদন করার দিন থেকেই বেনিফিট প্রদান শুরু হয়ে যাবে।
তরুণদের যাতায়াতের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়স্কদের জন্য নতুন একটি রেলকার্ড চালু করার ঘোষণা এসেছে। ওই কার্ড ব্যবহার করে অফ পীক সময়ে ট্রেন যাতায়াতে তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া ছাড় পাবেন তরুণেরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিক সময়েও ট্রেন ভাড়ায় ছাড় পাওয়া যাবে। বিদ্যুতচালিত গাড়িকে উৎসাহিত করতে গাড়ি চার্জ করার অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্লাগ-ইন-কার গ্রান্ট এবং চার্জিং বিষয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড। শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্যই সুবিধা থাকছে না। পেট্রোল ও ডিজেলের উপর আগামী এপ্রিল মাস থেকে যে ডিউটি বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল তাও বাতিল করেছেন চ্যান্সেলার। কিন্তু ডিজেলচালিত গাড়িকে উচ্চ হারে রোড ট্যাক্স দিতে হবে। গণিত (ম্যাথস) শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে স্কুল, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য নতুন বরাদ্দ রেখেছেন চ্যান্সেলার। ইংল্যান্ডের যে সকল স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা সিক্সথ ফর্মে এ-লেভেল অথবা কোর-ম্যাথস নিয়ে পড়ালেখা করবে তাদেরকে ৬শ পাউন্ডের একটি প্রিমিয়াম দেবে সরকার। এছাড়া গণিত বিষয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দের পাশাপাশি নতুন গণিত-স্কুল প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলার। অন্যদিকে, কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের শিক্ষকের সংখ্যা তিন গুণ করে ১২ হাজারে উন্নীত করে সকল সেকেন্ডারি স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষাকে বিস্তৃত করারও ঘোষণা রয়েছে বাজেটে।
ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি হিসাবে আগামী দুই বছরে ৩ বিলিয়ন পাউন্ড আলাদাভাবে জমিয়ে রাখারও ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলার। প্রয়োজন হলে এই অংক আরো বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা আরো বাড়িয়ে ১১, ৮৫০ পাউন্ড নির্ধারণ করা হবে। আর উচ্চ হারে ট্যাক্স পরিশোধের সর্বনিম্ন সীমাকেও বাড়িয়ে ৪৬,৩৫০ পাউন্ডে নির্ধারণ করা হবে। এই দুই সীমা আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলার। ইংল্যান্ডের এনএইচএস-কে ২.৮ বিলিয়ন পাউন্ডের রিসৌর্স ফান্ড দেয়ার ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। এর মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড শিঘ্রই বরাদ্দ দেয়া হবে যাতে চলতি শীত মৌসুমের জন্য এনএইচএস ইংল্যান্ড তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।

