নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ধর্মগ্রন্থ হাতে শপথের প্রস্তাব
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০১৭
দেশ, ১১ অক্টোবর: ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার শপথ গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া নবম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নিয়ে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে দলটি। তবে বিষয়টি ইসি’র এখতিয়ারে না থাকায় সংলাপে তা প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করা হয়নি বলে জানান দলটির প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। মঙ্গলবার সকালে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে অন্যান্য কমিশনাররা ও ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব এতে অংশ নেন। সংলাপে ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করে বিকল্পধারা। সুপারিশে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের ধর্মীয়গ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করানোর প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। এতে বলা হয়, প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন- ইউএনও, ওসি, প্রিজাইডিং অফিসার, সেনাবাহিনীর সদস্য তারা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে পবিত্র কোরআন/গীতা/বাইবেল ও ত্রিপিটক ছুঁয়ে নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার শপথ নেবেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ শেষে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ ব্যাপারে ইসিকে প্রস্তাব দেই নি। এটা তাদের এখতিয়ারে নেই। এটা সরকার করতে পারে। তবে নবম সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে করা যেতে পারে। কারণ সে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। তিনি জানান, চলতি সরকারের কোনো বৈধতা রয়েছে কিনা তা ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন- যেহেতু অনেক জায়গায় নির্বাচন হয়নি। এর আগের যে সরকার ছিল সেটা গ্রহণযোগ্য।
গতবারের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে। টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আপনি হোম মিনিস্ট্রি নেন, জনপ্রশাসন নেন। আরো একটি মন্ত্রণালয়ের কথা বলেছিলেন। সেই পার্লামেন্টের সদস্যদের নিয়ে, নবম সংসদের সদস্যদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। যে তিনটি মন্ত্রণালয়ের কথা বলেছিল সেগুলো যদি নবম সংসদের প্রধান বিরোধী দলকে দেয়া হয় তাহলে নবম সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে যে সরকার গঠন করা হবে সেটা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার হবে। সেই সরকার ‘সর্বদলীয় সরকার’ নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে মনে করেন বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট। বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানান, নির্বাচনের এক মাস পূর্বে সেনাবাহিনীকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে হবে। তবে বিচারিক ক্ষমতা সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট জানান, প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু কিছু সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এতে বিভিন্ন বিতর্ক এবং জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ মুহূর্ত থেকে আর কোনো সীমানা পুনঃনির্ধারণের প্রয়োজন নেই। না ভোট চালু, ভোটের ছয় মাস আগে অভিযোগ নিষ্পত্তি করার সুপারিশও করেছে বিকল্পধারা।
এদিকে বিকালে ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ইসি’র সঙ্গে সংলাপে বসে। সংলাপ শেষে আবদুল লতিফ নেজামী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে অনৈতিকভাবে জেতার প্রয়াসকে প্রতিহত করা, পোলিং বুথে সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের নির্ভয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা, প্রতিটি কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল জনসমক্ষে ঘোষণা এবং প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সার্টিফিকেট ইস্যু বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। ইসলামী ঐক্যজোটের অন্য উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো- নির্বাচনে কালো টাকা, পেশীশক্তি প্রভাবমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দণ্ডিত ব্যক্তিদের (দুই বছর পর) সংসদ নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ বাতিল করা, যে সব দল ৩০ (ত্রিশ)-এর অধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেবে, সে সব দলকে বেতার ও টিভিসহ সরকারি প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেয়ার বর্তমান নিয়ম বহাল রাখা। ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এর আগে গত ৩১শে জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ১৬ ও ১৭ই আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং ২৪শে আগস্ট থেকে রাজনৈতিক নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।

