রোহিঙ্গাদের বুকফাটা আর্তনাদ : প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এলেও আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর দিনযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
০ গলা কেটে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ০ নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন ০ গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছাই ০ জনশুন্য বাড়িঘর মগদের দখলে
দেশ ডেস্ক : রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো এখনো জ্বলছে। বর্মীদের আগুন থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ এখনো বন্দি সেখানে। বর্মীরা তাদের সীমান্তে কড়া পাহারা বসিয়েছে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বর্মী যুবকরা (মগ) বিস্তীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পথ আগলে রেখেছে। তারা পুরুষদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলছে। তাদের জেলে পাঠাচ্ছে। নারীদেরকে হয় নির্যাতন করছে, না হয় ফিরিয়ে দিচ্ছে। শিশুদের পরিণতি আরো ভয়াবহ। তাদের আগুনে পুড়িয়ে মারছে। না হয় গলা কাটছে।
বার্মার রাথিডং-এর উউরুপাড়া সংলগ্ন জঙ্গলে এখনো অবস্থানরত আব্দুস সালাম এমনটাই জানিয়েছেন। ১০ দিন আগে বাংলাদেশে পাড়ি দিতে পারা কুতুপালংয়ে বসবাসরত তার মামাত ভাই মোহাম্মদ আরবের মোবাইলে কথা হয় আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি জানান, তার পরিচিত অনেকেই সীমান্তে আটকা পড়েছেন। অনেককে পাঠানো হয়েছে বার্মার জেলে। তাদের সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গেছে আর্মিরা। মগ যুবকদের হাতে থাকা অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে তাদের জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে থাকা মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদের অনেকে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছে। অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত যাওয়া মহিলা ও শিশুরা এখন বার্মার জঙ্গলে জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছে।
প্রাণে বেঁচে কোনোমতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মংডুর শীলখালীর মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, তিনি অনেক দিন জঙ্গলে ছিলেন। সোমবার বাংলাদেশে ঢুকেছেন। তার গ্রামের সব বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মগ যুবকরা। পথে পথে আর্মির গুলির আওয়াজও তিনি শুনেছেন। বাংলাদেশে পৌঁছাতে তার ১৯ দিন লেগেছে জানিয়ে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ইতারা পথে পথে গুলি মারে। মাইয়া পুয়াইন ধরে হাটি পেলার। অইন দরাইয়েনে পুয়াইনদরে পেলাইদের। বত কিয়ারে দরি লই যরগাই। হত কিয়ারে মারি পেলার’।
তার পরিচিত বার্মার চৌপরাং গ্রামের দবির আহমদের পুরো পরিবারকে পথে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, দবির আহমদ তার স্ত্রী খাবি খাতুন, দুই ছেলে দিল মোহাম্মদ ও নুরুল ইসলামকে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি একটি এলাকায় হত্যা করা হয়েছে। রাথিডং-এর চৌপরাং এলাকার মৌলভী আমান উল্লাহও প্রায় অভিন্ন তথ্য দেন। বলেন, তার গ্রামে এখন আর কোনো বাড়ি নাই। সব পুড়িয়ে দিয়েছে মগ যুবকরা। রাথিডং ও মংডুর কোনো গ্রাম আর পোড়ানোর বাকি নেই। চার দিন আগে বাংলাদেশে আসা আমান উল্লাহ বলেন, তার গ্রামের সব লোক বের হয়ে গেছে। তাদের বেশির ভাগ বাংলাদেশে এসেছে। বাকিরা রাস্তাঘাটে, না হয় পাহাড়ে-জঙ্গলে আছে। তার দাবি, বুথিডং ও আকিয়াবে এখনো কিছু রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে তারা বাড়িতে নেই। হয় পাহাড়ে না হয় শহরের দিকে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করছেন মোহাম্মদ আনিছ। তিনি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে দাবি করেন। তার বাবার নাম আতাউল্লাহ বলে জানান। ইংরেজিতেই রোহিঙ্গাদের নাম-ঠিকানা সহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। প্রায় ৩৩১টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে কুতুপালংয়ে ফিরছিলেন মোহাম্মদ আনিছ। বালুখালী ঢালে কথা হয় তার সঙ্গে। মোহাম্মদ আনিছ জানান, বার্মায় ১০ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। এ জন্য তাকে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আনিছ বাংলা বুঝেন না। তবে ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন। এ প্রতিবেদককে তিনি পরিস্থিতির বিস্তারিত অবহিত করেন। বলেন, বার্মায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। ২০১২ সালের একটি হিসাবে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। তার দাবি, এর বেশির ভাগ এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পেরেছে। তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা মারা পড়েছে। বাকিরা লুকিয়ে আছে। তারাও বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা যুবকরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এমন অভিযোগের বিষয়ে পড়াশুনা জানা ওই যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি একবাক্যে তা নাকচ করে দেন। বলেন, ‘রোহিঙ্গা পিপল আর মোস্ট ভার্নারেবল ইন মিয়ানমার, ‘উই আর নট মিলিটেন্টস’।
এদিকে ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের এক সাংবাদিকের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহতা। স্কাই নিউজের রিপোর্টার আশিষ জোশি এক রিপোর্টে সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। দুই সহকর্মীকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কাজ করছিলেন। একদিন মিয়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্তে ছোট্ট একটি মুদি দোকানের সামনে দেখতে পান ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আশিষ লিখেছেন, ‘আমি শুনেছিলাম মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত রেখেছে কিন্তু দিনের বেলা এবং এতটা প্রকাশ্যে ওরা এমনটা করছে তা ধারণা করিনি। আমি ভেবেছিলাম আন্তর্জাতিক ক্ষোভ আর নিন্দা এড়াতে হয়তো তারা রাতের অন্ধকারে এমন দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। মোহাম্মদ সায়েম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে আশিষ জানান, যে গ্রামটি জ্বলছিল সেখানে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসবাস। সায়েমের দাবি, দুই-তিন দিন আগে ওই আগুন জ্বলা শুরু হয়। তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। মোবাইলে তোলা বেশ কয়েকটি ছবিও দেখান এই সহিংসতার।
আশিষ জানান, একটু পর তারা দেখতে পেয়েছেন এক দল মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে আসছে। তারা ওই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাথে আলাপ করতে শুরু করলেন। আশিষ বলেন, ‘প্রথমেই আমরা কথা বললাম, নুর খালিম নামের এক নারীর সাথে। নুর খালিম নামের ওই নারী তার পা দেখালেন। সেগুলো গোলাপি রঙের হয়ে আছে, চামড়া যেন খুলে আসছে। ক্ষত থেকে তখনো রক্ত বের হচ্ছে। তার বাড়িতে আগুন দেয়ার পর এমনই পরিণতি হয়েছে। আর সেই জ্বলন্ত পা নিয়েই কয়েকদিন ধরে হাঁটার পর বাংলাদেশে পৌঁছেছেন। ছয়-সাত বছরের এক মেয়ের কোলে মুজাহিদ নামের পাঁচ দিন বয়সী এক শিশু। দেখলেই বোঝা যায় এ নবজাতক অসুস্থ। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম মুজাহিদের মা রাবিয়াকে। সন্তানের মতো তার অবস্থাটাও করুণ। সন্তান দেয়ার পর পাঁচ দিন হেঁটে এখানে এসেছেন। আরেক রোহিঙ্গা নারী ফাতিমা জানান, আমরা সাতজন একসাথেই ছিলাম। আমি আমার চার ছেলে আর দুই মেয়ে। কিন্তু পাহাড়ের পথ ধরে পালিয়ে আসায় চার ছেলেকে হারিয়েছি। সেনারা আমার পাঁচ বছর ও ১০ বছর বয়সী ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। বাকি দুই ছেলের একজনের বয়স দুই, আরেকজন ছিল তিন বছর বয়সী। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ওরা মরে গেছে।
বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর দিনযাপন
মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। স্যানিটেশনের অভাব, গোসলের পানি তো দূরের কথা। নেই বিশুদ্ধ পানিও। কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিতে সবখানে নোংরা পরিবেশ। দুর্গন্ধ বাতাসে। এমতাবস্থায় সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা আশ্রিত উখিয়া টেকনাফের এলাকাগুলোতে। আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, জ্বর, ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ নানা রোগে। বুধবার উখিয়ার উপজেলায় রোহিঙ্গা আশ্রিত বিভিন্ন পরিদর্শনে দেখা গেছে বৃষ্টিতে সব তাঁবুতে এবং সবখানে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। কোথাও জমাটবদ্ধ পানি। পরিবেশ এমন পচেগলে গেছে যে সেখানে মানুষ তো দূরের কথা কোনো জীব জন্তুর পক্ষেও বসবাস করা কঠিন হবে। এমনি এক পরিবেশের পলিথিনের তাঁবুর নিচে ঘুম, খাবার, বৃষ্টির জমে যাওয়া পানিতে থালা বাসন ধোয়া, এখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ। পানির অভাবে গোসল নেই অনেক দিন। শিশু ও পুরুষেরা তো এখানে সেখানে মলমূত্র সেরে নিচ্ছে কিন্তু মহিলাদের কষ্টের সীমা নেই, তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে রাতের অন্ধকারের জন্য। অন্ধকার নামলেই কেবল তারা প্রাকৃতিক কাজে যেতে পারছেন। প্রতি তাঁবুতে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। সেখানেও দীর্ঘ লাইন। অবস্থা এমন হয়েছে জরুরিভাবে ব্যবস্থা না নিলে রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
কুতপালংয়ের কাছে একটি পলিথিনের তাঁবুতে স্বামী সন্তানসহ পাঁচ জনের বসবাস রোহিঙ্গা নারী জয়নবের (২৪)। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রাম। আবার সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ। ১৫ দিন ধরে কেউ গোসল করতে পারেনি। তিন চার দিন ধরে সন্তানসহ জয়নব সর্দি, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এরকম অবস্থা সব রোহিঙ্গা পরিবারের। সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ না পাওয়ায় রোগ ব্যাধি ছাড়াচ্ছে গণহারে। এক বেলা আহারের সাথে রোহিঙ্গাদের এখন লড়তে হচ্ছে রোগ ব্যাধির বিরুদ্ধেও। আক্রান্তরা আশ্রয়স্থল কিংবা অনেক দূরে মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। মেডিকেল ক্যাম্প পরিচলনাকারী ডাক্তার ও স্বাস্থকর্মীরা রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসা দিলেও ঘাটতি থাকায় অনেককে ওষুধ দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
বুধবার দুপুরে কুতুপালংয়ের একটি পাহাড়ের স্থাপিত হোপ ফাউন্ডেশনের একটি মেডিকেল ক্যাম্পে দেখা যায় রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ লাইন। এদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। লাইনে দাঁড়ানো মায়ের কোলের শিশুরা সর্দি কাশির সাথে ডায়রিয়াও আক্রান্ত। প্রত্যেকের জ্বর ও ডায়রিয়া। সেখানে এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, ঠাণ্ডাজনিত রোগ ছাড়াও ডায়রিয়া চর্মরোগ ও বহু যক্ষ্মা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। রইক্ষ্যং এলাকায় বিজিবি পরিচালিত মেডিকেল ক্যাম্পের পরিচালক লে.কর্নেল ডা. নুরে আলম জানান, চিকিৎসা নিতে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে ডায়রিয়া চর্ম রোগ ছাড়াও অনেক যক্ষ্মা রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা এসব রোগীর তাৎক্ষণিক রক্ত পরীক্ষা করছি ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি সি জাতীয় রোগ ধরা পড়লে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, রোগগুলো সংক্রামক আকারে ছড়াতে পারে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী জানান, এখন প্রতিদিন অনেক রোহিঙ্গা জটিল রোগ নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে কোনো গাফলতি করা হচ্ছে না। গত সোমবার একজন (পরিচয় গোপন রাখা হলো) এইডস রোগীও ভর্তি হয়েছেন সদর হাসপাতালে। ধর্ষণের কারণে নানা জটিলতায় আক্রান্ত রোগীরাও আসছে সদর হাসপাতলে। এসব রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীরা।
কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের মাঝে এ পর্যন্ত ২৬ জন পোলিও, ১৬ জন হাম ও অসংখ্য চর্ম রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিসংখ্যান কয়েক দিন আগের। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমদও জানান, কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে পোলিও রোগী পাওয়া যাওয়ার কথা। তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ পোলিও মুক্ত রয়েছে। কিন্তু শরণার্থীদের মাধ্যমে এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে ২৫ আগস্টের পর থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা গোসলও করতে পারেনি। তাদের শরীর থেকে এক ধরনের দুর্গন্ধের জন্য তাদেরও দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। আক্রান্ত হচ্ছে নানা চর্মরোগে। কুতুপালংয়ের অনিবন্ধিত একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আবদুর রশিদ জানান,তাদের ক্যাম্পে প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গা গত ২০ দিন ধরে গোসল করতে পারছে না পানির অভাবে। খাবার পানিরও তীব্র সংকট। এছাড়া টয়লেট না থাকায় মহিলাদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। রাতের অন্ধকার হলেই তারা প্রাকৃতিক কাজে যেতে পারছে কিন্তু দিনের আলোতে তাদের কষ্টের সীমা থাকছে না।
যৌন নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা নারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় ওই সব নারী মারাত্মক কষ্টে রয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে তারা এসব কথা সকলকে প্রকাশও করতে পারছেন না বলে জানান এক রোহিঙ্গা নারী। তিনি দুই সন্তানের জননী এবং তার কোলে রয়েছে আট মাসের সন্তান। তিনি আছেন কুতুপালংয়ের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে। তিনি জানান, আমাকে বার্মার সেনারা ‘জুলুম’ করেছে। জুলুম মানে কী প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুটা দ্বিধার সাথে বলেন, ধর্ষণ’। তার মতো অনেক রোহিঙ্গা নারী বাংলাদেশে এসে লোকলজ্জার ভয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না বলে জানান অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।
অনেক রোহিঙ্গা নারী জানান, বার্মার সেনাবাহিনীর হামলার সময় যারা পালিয়ে গিয়েছিল তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন। আর যারা পালাতে পারেননি তারা প্রত্যেকে ‘জুলুমের’ (ধর্ষণ) শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ নিহত হয়েছে কেউ ধর্ষণের যন্ত্রণা নিয়ে প্রাণে বেঁচে আছেন। যারা ইতিমধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এক নারী (পরিচয় গোপন রাখা হলো) জানান তার বীভৎস নির্যাতনের কথা। বলেন, ‘জুলুমের’ পর আমরা সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে বাংলাদেশে এসেছি। এখানে এসে আমার মতো অনেক নারীই চিকিৎসা নিতে চেয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছি না। আমি নির্যাতনের পরেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু অনেক মেয়ে আছে যাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা মেজবাহ উদ্দিন আহমদ জানান, এ পর্যন্ত ১৮ জন ধর্ষিতা মহিলা উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরকম সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক নারী মুখ খুলছেন না বলেই তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য কর্মীরা এখন ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন এসব নির্যতিত নারীর। তবে ডা. মেজবাহ উদ্দিন আরো জানান, তাদের সনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে না পারলে বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বেন তারা।
১২১ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে সৌদি
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার বা ১২১ কোটি টাকার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল্লাহ আজিজ। এছাড়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসছে। কিং সালমান সেন্টারের ত্রাণ ও মানবিক বিভাগের কর্মকর্তা এবং সৌদি রয়েল কোর্টের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল রাবিহ’র বরাত দিয়ে সৌদি প্রেস এজেন্সি এ সহায়তার কথা জানায়। আজ ওয়াশিংটনে ইউএস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ সদর দফতরে যুক্তরাষ্ট্র-আরব সম্পর্ক বিষয়ক এক বৈঠকের পর রাবিহ রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার বিষয়টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অবস্থা দেখতে সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ, মানবিক সাহায্য ও আশ্রয়সহ আর কী কী সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে তা তারা দেখবেন।
রাবিহ বলেন, বাদশা’র নির্দেশে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সহায়তায় আমরা বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এছাড়া আগে থেকেই কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছিল।
সু চি’র পুরস্কার স্থগিত করলো ইউনিসন
মিয়ানমারে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর চলমান সহিংসতার জেরে দেশটির নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া একটি পুরস্কার স্থগিত করেছে ব্রিটেনের বৃহত্তম বাণিজ্য ইউনিয়ন ইউনিসন। সুচি তার রাজনৈতিক জীবনে গৃহবন্দী থাকার সময়ে ওই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এ সংস্থাটি ছাড়া ব্রিটেনের আরো কয়েকটি সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয় সুচিকে দেয়া তাদের পুরস্কার এবং সম্মানসূচক ডিগ্রি স্থগিত বা প্রত্যাহারের বিষয়ে পর্যালোচনা করছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের ইউনিসনের প্রেসিডেন্ট মারগারেট ম্যাককি গার্ডিয়ানকে বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা যে পরিস্থিতির শিকার তা সত্যিই ভয়াবহ। তিনি আরো বলেন, আমরা ইউনিসনে তার সম্মানিত সদস্যপদ স্থগিত করেছি। আমরা আশা করছি তিনি আন্তর্জাতিক চাপে সাড়া দেবেন।
এই বার্মিজ নেত্রী যখন বিরোধী দলে থেকে সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধীতা করে গণতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন তখন তাকে সম্মানজনক ডিগ্রি প্রদান করেছিল ব্রিসটল ইউনিভার্সিটি। তারাও সু চিকে দেয়া পুরস্কার পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৯৮ সালে ড. অং সান সু চিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সে সময় তিনি বার্মায় মানবিক অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সু চিকে প্রদান করা ওই সম্মানসূচক ডিগ্রি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এদিকে, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বলছে, তারা সু চির সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি বাতিল করবে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, গণহত্যা বন্ধে সু চির বিরোধী অবস্থান প্রকাশ করতেই আমরা তার সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি বাতিল করব।
গত ত্রিশ বছরে গ্লাসগো, বাথ অ্যান্ড ক্যামব্রিজসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন সু চি। অক্সফোর্ডের উপদেষ্টারা ঘোষণা করেছেন, তারা সু চিকে দেয়া ১৯৯৭ সালের দ্য ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড পুরস্কার পরবর্তী মাসের উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় পুনর্বিবেচনা করবেন। ১৯৯৩ সালে সু চিকে সম্মানিত ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছিল অক্সফোর্ড। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের বিরোধী নেত্রী অং সান সু চি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেন এবং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণে সুচির মিথ্যাচার
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনায় মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সু চি এক প্রকার নীরব অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর এই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন সু চি। ভাষণে সু চি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে ভীত নয় মিয়ানমার। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। শান্তি না আসা পর্যন্ত সেনা অভিযান চলবে। আমরা শান্তি এবং ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না। জাতির উদ্দেশে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তেমন কোনো সমাধানের কথা উল্লেখ না করলেও সেনাবাহিনীর পক্ষেই ঠিকই সাফাই গেয়েছেন এই নেত্রী। ফলে আবারও আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার শিকার হলেন সু চি।
সু চির ভাষণে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে ভাষণ দিয়েছেন তার সমালোচনা আসতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও। তাঁর এ বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রাখাইনরা এ ধরনের মিথ্যাচারের জন্য সুচিকে ধিক্কার জানিয়েছেন। মঙ্গলবারের ওই ভাষণে মিজ সু চি রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেছেন কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিষয়ে কিছু বলেননি। অথচ রাখাইনে ভয়াবহ নির্যাতনের জন্য সেনাবাহিনীকেই দায়ী করছে রোহিঙ্গারা। আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে আসতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক রোহিঙ্গার, আবার অনেকে এসেছেন যারা গুলিতে আহত হয়েছেন কিংবা বয়ে এনেছেন নিজের অগ্নিদগ্ধ শরীর।
অথচ মিস সু চি বলেছেন অধিকাংশ মুসলিমই রাখাইনে অবস্থান করছে। তিনি মুসলিমরা সেখান থেকে পালাচ্ছে কেন সেটিও খুঁজে বের করার কথা বলেছেন। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতারা ইতোমধ্যেই মিস সু চির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এ বক্তব্যকে সেনাবাহিনীর বক্তব্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিজ সু চিকে ফোন করে বলেছেন যে তার বক্তব্যকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন যে শরণার্থীদের যাচাই করে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তবে তিনি একই সাথে ভযাবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার দিকেও নজর দিতে বলেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেছেন, ‘রাখাইনে সামরিক অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মানবিক সহায়তার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিগত নিধন বন্ধে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ তিনি বলেন সহিংসতা বন্ধ করে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য তারা নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে একটি উদ্যোগ নেবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসও সামরিক অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ক্ষোভের দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েফ এরদোয়ান সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় হওয়ার আহবান জানিয়েছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত মিয়ানমারের ট্রাজেডির অবসান না হয। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র বলেছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মিয়ানমার পরিদর্শনে যে আহবান জানিয়েছেন মিস সু চি তা এক ধাপ অগ্রগতি কারণ আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেও রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ করার কথাই বলছেন। আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিস সু চির সমালোচনা করে বলেছে তিনি বালিতে মাথা গুঁজে আছেন। বিবিসি।
কানাডার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবী
এদিকে টরেন্টো নিউজ জানায়, রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং এই গণহত্যায় সমর্থনের দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি উঠছে দেশটির বিভিন্ন মহল থেকে। ইন্টারনেটে এ বিষয়ে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন চলছে, যেখানে পাঁচ দিনে প্রায় ৯ হাজার মানুষ সই করেছেন। শনিবার টরেন্টোতে কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত এমন এক সমাবেশে অংশ নেন খোদ কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। রাখাইনে চলমান সেনা অভিযান সম্পর্কে ফ্রিল্যান্ড বলেন, মিয়ানমার সরকারের অভিযান মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। কানাডার সরকার এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।
সু চিকে ২০১২ সালে কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়। কানাডার ১৫০ বছরের ইতিহাসে বিশ্বের মাত্র ছয়জনকে সম্মানসূচক এ নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। কানাডার আইনে সাধারণ নাগরিক ও সম্মানসূচক নাগরিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য উল্লেখ করা হয়নি। অন্য দিকে দেশটির প্রচলিত আইনে কোনো নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা কানাডা বা কানাডার বাইরে সরাসরি বা অন্য কোনো উপায়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধে জড়িত হলে, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জোগালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

