টিলাগাঁওয়ে নারী শিক্ষার সুবাতাস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০১৫
প্রায় ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধা সবার সঙ্গে বসে উচ্চারণ করছেন অ-আ-ক-খ। নাম তার আমেনা বেগম। নারী শিক্ষাকেন্দ্রে তার সহপাঠী অন্যদের বয়স অনেক কম। কেন্দ্রের সবাই চটে বসে রপ্ত করছেন অক্ষর জ্ঞান। পড়াশোনার মাপকাঠিতে নারী শিক্ষা কেন্দ্রের সবাই এখন এক। তাদের সম্মিলিত বর্ণধ্বনি বইয়ে দিচ্ছে নারী শিক্ষার সুবাতাস। কমলগঞ্জের টিলাগাঁও গ্রামে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ক্রেল প্রকল্পের আওতায় নারী শিক্ষার এ কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন বিকালে গৃহে সাংসারিক কাজ শেষে গ্রামের বয়স্ক নারীরা ছুটে যান টিলাগাঁও গ্রামের আবুল খায়েরের বাড়িতে। এ শিক্ষা কেন্দ্রের নাম আর্থিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও সাক্ষরতা কেন্দ্র (এফইএলসি)। সবুজ গাছপালা ঘেরা ওই বাড়ির উঠোনজুড়ে প্রতিদিন বসে শিক্ষা গ্রহণ করছেন আমেনা বেগমের মতো অনেকেই। সম্প্রতি সরেজমিনে টিলাগাঁও গ্রামের আবুল খায়েরের বাড়িতে চলা ওই নারী শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নবীন প্রবীণ নারী মিলেই আগ্রহভরে অক্ষর জ্ঞান গ্রহণ করছেন সবাই। কেউ কেউ আবার এক বছরের কোলের শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। নারী শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা আমিরুন বেগম জানান, সবাই লোকলজ্জা, লোকনিন্দা পেছনে ফেলে ভয়কে জয় করতেই উৎসাহ নিয়ে সবাই শিক্ষাগ্রহণ করতে আসেন। আলাপকালে ওই শিক্ষাকেন্দ্রের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য আমেনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষা নেয়ার জন্য আইছি। নিজের নাম এখন লিখতে পারি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বয়স হইলে কিতা হইব, পড়তে চাইলে বয়সে কিতা দরিয়া রাখেরনি। হিকছি দেখইয়া আজ নিজর নাম লেখতাম পারি।’ অপর শিক্ষার্থী আবেদা খাতুন বলেন, ‘আমরা এখানে লেখাপড়া শিখছি। খুবই ভালা লাগের।’ এই কার্যক্রম সম্পর্কে প্রকল্পের সাইট অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি মূলত গ্রামের একেবারে দুস্থ-নিরক্ষর নারীদের শিক্ষাদানের জন্য। যে নারীদের কোন বর্ণজ্ঞানই ছিল না আজ তারা বর্ণ বলতে পারেন। আজ নিজের সইও তারা নিজে দিতে পারেন।’

