১৫ তম লন্ডন বাংলা বইমেলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসব ও কিছু কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সালমা বেগম:: ১৫ তম লন্ডন বাংলা বইমেলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধনী অধিবেশনটি বইমেলার প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে এবং সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহযোগিতায় ৯-১০ই নভেম্বর দু’দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডনের বুকে অনুষ্ঠিত এই উৎসব বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে একত্রে উদযাপনের অসাধারণ উদ্যোগ হিসেবে উঠে আসে, যেখানে মিলিত হন নানা বয়স ও পটভূমির শিল্পী, সাহিত্যপ্রেমী এবং সংস্কৃতিসেবীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান:
৯ই নভেম্বর, শনিবার বইমেলা উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইমেরিটাস প্রফেসর ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লন্ডন অ্যাসেম্বলি মেম্বার উন্মেষ দেশাই, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লিড মেম্বার কাউন্সিলার মোস্তাক আহমদ, স্পোর্টস ও কালচার লিড মেম্বার কাউন্সিলার কামরুল হোসেন মুন্না, কাউন্সিলার শান্ত ফেরদৌস, বইমেলার প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা, সদস্য সচিব মজিবুল হক মনি এবং বইমেলা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
উৎসবের মূল আয়োজন:
মেলা উৎসবমুখর পরিবেশে চলেছিল। এটি ছিল একটি চমৎকার আয়োজন, যেখানে বিভিন্ন বয়সী এবং পটভূমির মানুষ একত্রিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে উদযাপন করেছিলেন। বইমেলার প্রথম অংশে শিশুদের পরিবেশনায় নৃত্য, সংগীত ও আবৃত্তি ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাদের একাগ্রতা ও প্রতিভা উপস্থিত দর্শকদের আনন্দিত ও মুগ্ধ করেছে।
এরপর ‘নারী প্রেরণায় সংস্কৃতি’ শীর্ষক একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যা পরিচালনা করেন নিশাদ খুলবো আতিয়া ও আমি নিজে। এই সেশনে নারীরা তাদের জীবনের সাফল্যের গল্প শেয়ার করেন, যা প্রেরণামূলক ও অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল। তাদের সংগ্রাম এবং সাফল্যের কথা আমাদের সকলকে নতুন শক্তি ও আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দিয়েছে। পরবর্তী আকর্ষণ ছিল ১৬টি দেশের কবিদের কবিতা আবৃত্তি। বিভিন্ন ভাষার কবিতার ছন্দ এবং শব্দের মূর্ছনায় মেলার পরিবেশ ভরে ওঠে, যা এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
এছাড়া, বইমেলায় নতুন কবিদের নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা পর্বও ছিল। উত্তরণ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইতে প্রতিটি কবির দুটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পাঠকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিল। নতুন কবিরা তাদের নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেন, যা উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে।
বিশেষ পরিবেশনা:
বইমেলার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পীদের পরিবেশনা। তাদের সুরের মূর্ছনায় বইমেলার পরিবেশ আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। বইমেলায় উপস্থিত ছিলেন বহু কবি, সাহিত্যিক, গবেষক এবং সংস্কৃতিসেবী, যাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং সৃজনশীল আলাপচারিতা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
পাঠকদের সাড়া এবং বইমেলার সাফল্য:
বইমেলার প্রতি পাঠকদের সাড়া ছিল অভূতপূর্ব। এত বেশি লোক সমাগম হয়েছিল যে, নিরাপত্তার কারণে প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিতে হয়েছিল, যা মেলার জনপ্রিয়তা এবং সাফল্যের প্রমাণ।
এই সফল আয়োজনের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন প্রিয় মোস্তফা ভাই, শ্রদ্ধেয় মজিবুল হক মনি ভাই, ফয়সাল, জুবায়ের রহমান, আতিয়া এবং আরও অনেক নিবেদিতপ্রাণ সদস্য। তাদের অসামান্য উদ্যোগ ও পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বইমেলা এক অসাধারণ আয়োজনে পরিণত হয়েছিল।
সমাপনী অনুষ্ঠান:
১০ই নভেম্বর বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি সালেহা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলার কামরুল হোসেন মুন্না, কাউন্সিলার রহিমা রহমান, কবি গোলাম কবির, প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা এবং সদস্য সচিব মজিবুল হক মনি প্রমুখ।
এছাড়া, বাংলাদেশের কন্ঠশিল্পী সাব্বির এবং দোলা তাদের সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যা দর্শকদের আনন্দে মেতে তোলে। এই দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে বইমেলা, চিত্র প্রদর্শনী, শিশুদের পরিবেশনা, বহুজাতিক কবিতা আবৃত্তি, উদীচী, সুরালয়, স্পষ্টসুর, তবলা ও ঢোল একাডেমির পরিবেশনা ছিল প্রধান আকর্ষণ। অনুষ্ঠানে শতাধিক কবি, শিল্পী, লেখক অংশগ্রহণ করেন।
উপসংহার:
আমি এই বইমেলায় অতিথি এবং চিফ গেস্টকে অব্যর্থনা জানাতে পেরে এবং ‘নারী প্রেরণা ও সংস্কৃতি’ সেশনটি পরিচালনা করার সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত গর্বিত। এমন একটি অনন্য উৎসবে অংশ নিতে পারা এবং সৃজনশীল পরিবেশে নিজের অবদান রাখতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। সকল আয়োজক, অংশগ্রহণকারী এবং দর্শনার্থীদের প্রতি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
লেখক : কবি, লন্ডন প্রবাসী।