ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকের সংবাদ সম্মেলন : ওসমানীকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৪
ওসমানীকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুলি ফান্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। গত ১৪ অক্টোবর সোমবার লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময় দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি দাবিগুলো বাস্তবায়নে গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচী কথাও জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের অর্থ সচিব সলিসিটর মোহাম্মদ ইয়াওর উদ্দিন। এসময় বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রব ,যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো: মফিজুর রহমান ,কাউন্সিলার ফারুক চৌধুরী ,বীর মুক্তিযোদ্ধা আহবাব হোসেন চৌধুরী ,শাহ মুনিম ,জামান আহমদ সিদ্দিকী ,মাহবুবুর রহমান কোরেশী ,খন্দকার সাইদুজ্জামান সুমন। উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোস্তফা, শাহ মুনিম, আজম আলী,শাহ সেরওয়ান কামালী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ, শেখ ফারুক আহমদ, আনোয়ার জাকারিয়া খান প্রমুখ ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০২ সালে ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের পর লল্ডন-সিলেট রুটে ডাইরেক্ট ফ্লাইট চালু করা হয়। অনেকবার ডাইরেক্ট ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে। আবার আন্দোলন করার পর চালু হয়েছে। যার ফলে সিলেট প্রবাসীরা সরাসরি বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশও আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে আন্তর্জাতিক হলেও কাজে এখনো আন্তর্জাতিক হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, একমাত্র বিমান ছাড়া অন্য কোনো এয়ারলাইন্সকে ওসমানীতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি সপ্তাহে বিমান ছাড়াও ৭টি বিদেশী এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট উঠানামা করছে। বাংলাদেশ সরকার ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি সিলেটবাসীর সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। বাংলাদেশ বিমানের শতকরা ৯৫ ভাগ যাত্রী সিলেট অঞ্চলের। বিমানের বেশীরভাগ যাত্রী সিলেটী হওয়ায় সিলেটীদের জিম্মী করে বিমানের রিটার্ন ভাড়া সিলেট পর্যন্ত কখনো ১৫০০ কখনো ১২০০, কখনো ১৮০০ পাউণ্ড পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অথচ সমান ফ্লাইটে ঢাকার যাত্রীদের জন্য ৮০০ পাউণ্ড ভাড়া নেওয়া হয়। এটা প্রবাসী সিলেটবাসীর প্রতি আরেক বৈষম্য। যার ফলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটীরা ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে দেশে যেতে পারেন না।
এতে আরো বলা হয়, ওসমানী বিমান বন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ তিন বছর মেয়াদে শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। বিগত চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র শতকরা ২২ ভাগ। অথচ ঢাকার শাহজালাল বিমান বন্দরের কাজ ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে তিন বছর মেয়াদে শুরু হয়ে তা শেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। এটাও সিলেটবাসীর প্রতি আরেকটি বৈষম্যমূলক আচরণ। ওসমানী বিমান বন্দরে প্রবাসী বিমান যাত্রীদের হয়রানী এখনো কমেনি। আন্তর্জাতিক মানের কোনো সেবা নেই। বিমানের চেক ইন কাউন্টারে প্রতিনিয়ত যাত্রীরা হয়রানীর শিকার হন।
এক শ্রেণীর সিলেট বিদ্বেষী কুচক্রিমহল সিণ্ডিকেট তৈরি করে সিলেটবাসীকে হয়রানী করছে উল্লেখ করে বলা হয়, অতীতের সব সরকার সিলেটবাসীর উপরোক্ত সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানরা বাংলাদেশে না গিয়ে তুরস্ক, মরক্কো, মিশর ও ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে হলিডেতে যাচ্ছে। ফলে আমাদের সন্তানরা দেশমুখী হচ্ছেনা এবং বাংলাদেশ বিরাট অংকের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বৃটেনের বিভিন্ন সংগঠন এসব সমস্যার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কমিউনিটি সংগঠণের নেতৃবৃন্দের একটি জরুরী বৈঠকে সম্প্রতি ‘ ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুলি ফান্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ নামে একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিম্নরূপ দাবী পেশ করা হয়।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে, ওসমানী বিমান বন্দরকে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তর করতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় এয়ার লাইন বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি বৃটিশ,তুরস্ক ,কাতার ,আমিরাত ,দুবাই ,ওমান ,সৌদিআরব সহ অন্যান্য দেশের ফ্লাইট চালু করতে হবে। ওসমানী বিমান বন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া হ্রাস করতে হবে এবং ঢাকা ও সিলেটের মধ্যে বিমানের ভাড়ার পার্থক্য দূর করতে হবে। ওসমানী ও শাহজালাল বিমান বন্দরে কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন সেকশনে প্রবাসী যাত্রীদের অহেতুক হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
এতে বলা হয়, দাবীগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, লন্ডন ,ঢাকা ও সিলেটে সংবাদ সম্মেলন। বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ। সিলেট ও লন্ডনে মানববন্ধন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ডেলিগেশন প্রেরণ। বৃটেনের প্রতিটি শহরে সমাবেশ। বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের সাথে জনসংযোগ। সমমনা আন্দোলনরত সংগঠণের নেতৃবৃন্দ নিয়ে বৃহত্তর মোর্চা গঠন।
দাবী বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বলা হয়, ইতিমধ্যে আগামী ১ নভেম্বর শুক্রবার সিলেট কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ন্যায়সঙ্গত এসব দাবি না মানলে বিভিন্ন বয়কট কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। এই আন্দোলনে দলমত সকলের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করা হয়।