বর্ণাঢ্য আয়োজনে দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন করলো লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২৪
লন্ডন, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ : বর্ণাঢ্য আয়োজনে লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি তাদের দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন করলো । গত ৯ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে স্কুলের সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন । অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমান এবং হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন । এই সন্ধ্যাটি বিগত দশ বছরে স্কুলের সাফল্যের পেছনে থাকা সকলের কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং নিষ্ঠার এক উজ্জ্বল উদাহরণ ছিল।
প্রধান শিক্ষক আশিদ আলী তাঁর বক্তব্যে স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের এবং ছাত্রছাত্রীদের আস্থা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান । তিনি তাঁর সহকর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেন। স্কুলের শুরুর দিনগুলোতে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছিল, তা স্মরণ করে তিনি বলেন, এক সময় এখানে কোনো স্কুল ভবন, শিক্ষক বা ফলাফল ছিল না, আর আজ এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা পরিবারগুলোকে একটি অতিরিক্ত মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানের অতিথি মেয়র লুৎফুর রহমান স্কুলের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং এর ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমি আজ এখানে স্কুল, ম্যানেজমেন্ট এবং ছাত্রদের সমর্থন করতে পেরে আনন্দিত । আমি চাই আমাদের ছাত্ররা দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করুক, পেশাদার হোক, সফল ব্যক্তি হোক এবং তারা যেন ভবিষ্যতে পরামর্শদাতা এবং আদর্শ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠে। তার কথাগুলো সকলের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে যে, ছাত্ররা আগামী দিনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন লন্ডন অ্যাসেম্বলি সদস্য উনমেশ দেশাই, কাউন্সিলর ফারুক চৌধুরী, লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা গভর্নর পিটার ম্যান ও অধ্যাপক সানাওয়ার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে একাডেমির প্রাক্তণ সহযোগী প্রধান ডঃ মাইকেল হারফাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর সময়কাল সম্পর্কে উষ্ণ স্মৃতিচারণ করেন এবং স্কুলের সাফল্যের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এখানে কাজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং আমরা এই বছর কিছু অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেছি।”
২০২৪ সাল লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল, কারণ তারা কেবল তাদের দশম বার্ষিকী উদযাপন করেনি, বরং তাদের প্রথম গ্রাজুয়েট শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাও অংশগ্রহণ করেছিল । অনেক প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ইতিমধ্যেই ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউসিএল, কিংস, এলএসই, কুইন মেরি এবং অক্সব্রিজের মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। গত কয়েক বছর ধরে লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি ধারাবাহিকভাবে চমৎকার জিসিএসই ফলাফল অর্জন করেছে এবং স্কুলটি ভবিষ্যতে এই সাফল্যের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে ।
স্কুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ডঃ সোফিনা ছাত্রদের সাফল্যের জন্য গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “স্কুলের জন্য এই দশম বছর একটি বিশাল সাফল্য ছিল । আমরা আমাদের ছাত্রদের নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। তারা টাওয়ার হ্যামলেটসের গর্ব এবং তাদের মাধ্যমে ছোটদের জন্য আদর্শ তৈরি হয়েছে।” তিনি স্কুলের সমৃদ্ধ বহির্ক্রমণ কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বাইরে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিচ্ছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টির নেতা কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামও স্কুল কমিউনিটিকে অভিনন্দন জানান । তিনি বলেন, আমরা লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের চমৎকার কাজের জন্য অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি তারা আরও উন্নতি করবে। আমরা ভবিষ্যতে আরও অনেক বার্ষিকী উদযাপনের অপেক্ষায় আছি।”
লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির শিক্ষার্থীরা ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানে চমৎকার অগ্রগতি করেছে । স্কুলটি শিক্ষার্থীদের বহির্ক্রমণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ডিউক অব এডিনবার্গ প্রোগ্রাম, বাসভ্রমণ, থিয়েটার এবং গ্যালারির মতো জায়গায় দিবা ভ্রমণ। স্কুলটি স্থানীয় সমাজের কল্যাণে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ, টাওয়ার হ্যামলেটস ফুড ব্যাংকের জন্য খাদ্য সংগ্রহ এবং বাংলাদেশে শিক্ষাসামগ্রী ও পানির কূপ সরবরাহের মতো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে । শিক্ষার্থীরা স্কুলের সুবিধাগুলো উন্নত করার জন্যও নিজেদের সংকল্প দেখিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নতুন খেলার মাঠের জন্য প্রচারণা, যা ২০২২ সালে প্রায় এক মিলিয়ন পাউন্ডের ব্যয়ে সম্পন্ন হয় এবং এই প্রকল্পের জন্য কোনো বাইরের তহবিলের প্রয়োজন হয়নি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের এবং স্কুলের কর্মচারীদের প্রতি তাদের নিরলস প্রতিশ্রুতির জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানানো হয়। পাশাপাশি স্কুলের গভর্নরদের স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্যও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় । সন্ধ্যাটি শেষ হয় ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদ এবং গর্বের বার্তা দিয়ে, যেখানে প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করেন যে, স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাই আগামী দিনের নেতা এবং আদর্শ হবে।