সিএনএনকে সহোদর স্নিগ্ধ: মুগ্ধ বলত, মা-বাবাকে একদিন গর্বিত করব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: সে শুধু আমার ভাই-ই ছিল না, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। সে আমার শরীরের অংশ ছিল। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম। তার আত্মত্যাগের কারণে আন্দোলনকারীরা শক্তি পেয়েছেন। সে সব সময় বলত– একদিন আমি মা-বাবাকে গর্বিত করব। সেটাই সে করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই যমজ ভাই মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতিচারণ করছিলেন মীর মাহমুদুর রহমান স্নিগ্ধ। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুগ্ধ। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এই শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানির বোতল সরবরাহ করছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনেকগুলো পানির বোতল নিয়ে মুগ্ধ ‘এই পানি লাগবে, পানি?’ বলে এদিক-ওদিক ফেরি করছেন। কিছুক্ষণ পরই একটি গুলি তাঁর মাথায় লাগে। মুগ্ধর মৃত্যুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন আরও তীব্র হয়।
যমজ দুই ভাই মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ জন্মের পর থেকেই অনেকটা অবিচ্ছেদ্যভাবে থেকেছেন। খাওয়া, ঘুমানো, লেখাপড়া, কাপড়চোপড় শেয়ার করা থেকে শুরু করে সব কিছুতে তারা একসঙ্গে থেকেছেন। গণিত নিয়ে অধ্যয়ন করা মুগ্ধ এমবিএতে পড়ছিলেন। অন্যদিকে স্লিগ্ধ আইনে স্নাতক করেছেন। দু’জনের স্বপ্ন ছিল উচ্চতর পড়ালেখার জন্য ইতালি যাওয়ার; সেখানে মোটরবাইকে করে ইউরোপজুড়ে ঘোরার।
মুগ্ধ নিহত হওয়ার দু’দিন আগে রংপুরে নিহত হন আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যুর ভিডিওটিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে বলেছে, পুলিশ কর্মকর্তারা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ গুলি চালিয়েছেন। সংস্থাটি ‘বেআইনিভাবে বল প্রয়োগের নিন্দা’ জানায়। এ দুই মৃত্যু কার্যত কোটি কোটি মানুষকে রাস্তায় নিয়ে এসেছিল, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিণত হয়েছিল মূল ধারার আন্দোলনে। এ আন্দোলনে যারা মারা গেছেন, ইউনিসেফ বলছে, তাদের মধ্যে ৩২টি শিশুও রয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যমটি লিখেছে, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এ সময় ভয়ানক ধড়পাকড় শুরু হলে কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হন। পরে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা।
ঢাকার একটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে কাজ করা ২৩ বছরের বিক্ষোভকারী ফারাহ স্পর্শিয়া বলেন, ‘হত্যা চলছিল, আর কেউ কিছু বলছিল না। আমাদের নিজেদের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য দাঁড়াতেই হতো।’
তিনি বলেন, ‘নিজেদের শক্তি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। কারণ, বিগত বহু বছর ধরে আমরা সবাই নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যহীন বলেই মনে করে আসছি।’ সিএনএন লিখেছে, অস্থিতিশীলতায় স্বজন হারানোর পরিবারগুলো দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে।