সিলেটে অপহৃত ব্রিটিশ নাগরিক দেলোয়ার খুনের মামলায় যুক্তরাজ্যে গ্রেফতার হন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৪
দেশ ডেস্ক :: সিলেটে অপহৃত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক দেলোয়ার হোসেনের কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ। তাকে কারা কোথায় নিয়েছে এ নিয়েও তথ্য নেই পুলিশের কাছে। তবে পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য দিয়েছে পরিবার। সেই তথ্য ধরে পুলিশ যা পেয়েছে তাতে আরও কৌতূহল বেড়েছে পুলিশের।
পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য ও পুলিশি তদন্তে পাওয়া গেছে, ১০ বছর আগে যুক্তরাজ্যে এক স্কুলছাত্র খুনের সন্দেহভাজন আসামি ছিলেন দেলোয়ার। গ্রেফতারও হন। পরে জামিনে বের হয়েই ২০১৪ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। দেশে বিয়ে করেন। দুই সন্তানের বাবা তিনি। বিয়ের পর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় পিরোজপুরে বাবার তৈরি বাড়িতেই থাকছেন। তবে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের কোনো তথ্য নেই ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে। এ নিয়ে তদন্তও চলছে। পুলিশ বলছে, তাকে পাওয়া গেলে জানা যাবে সে কোন পথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
গত ২ মে রাত ৯টার দিকে নগরীর কাজির বাজার সেতুর দক্ষিণ অংশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ও পোশাক ব্যবহার করে তুলে নেওয়া হয় দেলোয়ার হোসেনকে। এ ঘটনায় দক্ষিণ সুরমা থানায় অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করের তার স্ত্রী। মামলার তদন্ত চলাকালে ৬ মে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসেন অপহৃত দেলোয়ারের বাবা সাকিক মিয়া। সেদিন রাত ৮.৫৫ মিনিটে ০১৭৩৬৬৮২০৯৬ নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেলোয়ারের স্ত্রীর মুঠোফোনে একটি কল আসে। ৮ মিনিট ৮ সেকেন্ড স্ত্রী ও বাবার সঙ্গে কথা বলেন দেলোয়ার। কী কথা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছেন দেলোয়ারের বাবা।
এসব বিষয় জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা বলেন, ফোন কল পেয়েই তার বাবা ও স্ত্রী দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন। সেই জবানবন্দিতে তারা বলেন, সেদিন দেলোয়ার প্রথমে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং জানান তিনি ভালো আছেন। পরে তার বাবা সাকিক মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় দেলোয়ার বলেন, বাবা তুমি তো জানো আমাকে কোথায় নেওয়া হবে, লন্ডনের ঝামেলার কারণে আমাকে নেওয়া হয়েছে, তুমি দ্রুত আমার সন্তানদের লন্ডনে নেওয়ার ব্যবস্থা করো, সেখানে সপ্তাহে দুদিন আমার সঙ্গে তাদের দেখা হবে।
সোহেল রেজা জানান, লন্ডনের ঝামেলা সম্পর্কে তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, লন্ডনে এক স্কুলছাত্র খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন দেলোয়ার। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ চলে আসেন। তার পর তাকে অনেকবার চেষ্টা করেও লন্ডনে ফিরিয়ে আইনের মুখোমুখি করতে পারেননি তার বাবা।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, তার বাবার কথার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে যে তথ্য পায় তা হলো, সেন্ট্রাল লন্ডনের পিমলিকো এলাকায় ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হানি নিচাম নামের ১৬ বছরের এক স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে একটি কিশোর গ্যাং। এ ঘটনায় দেলোয়ার সন্দেহ ভাজন হিসাবে গ্রেফতার হয়।
এদিকে ২০১৪ সালে দেলোয়ারের বাংলাদেশে প্রবেশের কোনো তথ্য নেই ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে উপকমিশনার সোহেল রেজা বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ওই বছরের ১৮ আগষ্টে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে যান। এর পর আর তার ব্যবহৃত পাসপোর্টে বাংলাদেশে আসার কোনো তথ্য নেই।