ইস্ট লন্ডন মসজিদে এক মহিমান্বিত রজনীর স্মৃতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২০
আকবর হোসেন :: আল্লাহতাআলা রাত দিয়েছেন ঘুমানোর জন্য। কিন্তু কোনও কোনও রাত আছে হাজার রাতের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। সেটি হলো ক্বদরের রাত্রি – অত্যন্ত মহিমান্বিত রজনী। কারণ সে রাতে বিশ্বমানবতার জন্য আল্লাহতাআলা প্রেরিত সর্বশেষ আসমানী কিতাব নাজিল হয়। সে কারণেই ঐ রাতের এতো গুরুত্ব ও মাহাত“। রামাদ্বানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদরের সন্ধানে তাই মসজিদে অবস্থান করেন রোজাদার মুসলমান এবং ক্বদর প্রাপ্তির আশায় রাত জেগে ইবাদাত বন্দেগীতে মশগুল থাকেন।
দু’বছর আগে শেষ ক’দিনের জন্যে ই’তিকাফের সুযোগ পেয়েছিলাম ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ইষ্ট লন্ডন মসজিদে। কিন্তু দু’রাতের বেশি থাকতে পারিনি কারণ মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে জরুরী ভিত্তিতে দেশে যেতে হয়েছিলো। সে রাতের স্মৃতি ও মসজিদের অভিজ্ঞতা নিয়েই আজকের এই লেখার অবতারণা। মুগ্ধ হয়েছিলাম মসজিদের ফাইভ স্টার সার্ভিসে। যদিও এর আগে অন্যান্য ই’তিকাফকারী বন্ধুদের কাছ থেকে মসজিদ কর্তৃপক্ষের ভুয়শী প্রসংশা শুনেছি কিন্তু এবার (২০১৮) নিজে ইতিকাফে বসে তার প্রমাণ পাই।
এবছর রামাদ্বানে করোনাভাইরাসজনিত লকডাউনের কারণে কোনও মসজিদই খোলা ছিলো না। আমরা মসজিদের অনেক কিছুই মিস করি। বিশেষ করে রামাদ্বানে ইস্ট লন্ডন মসজিদে জগদ্বিখ্যাত হাফিজদের তেলাওয়াতের কথা কেউই ভুলতে পারেন না। এবার মসজিদে তারাবীহ হয়নি, ইফতার হয়নি, ইতিকাফও হয়নি। ঘরে বসেই নামাজ রোজা করতে হয়েছে মুসলমানদেরকে। ইস্ট লন্ডন মসজিদে ই’তিকাফে স্থান পেতে হলে লটারী জিততে হয়। ইচ্ছে থাকলেও সবার সে সুযোগ হয় না। অনেকেই ইতিকাফে বসতে চান কিন্তু যারা ভাগ্যবান তারাই শুধু অফার পান। অত্যন্ত সুশৃংখল একটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেখানে ইতিকাফের ইন্তিজাম করা হয়। রেজিষ্ট্রেশনের পর সুনির্দিষ্ট কিউবিকলর (মসজিদের বেইজমেন্টে কাপড় দিয়ে তৈরি থাকার স্থান) নাম্বার, ফোব (যা দিয়ে টাচ করে দরজা খোলা যায়)সহ গাইডবুক ও বিস্তারিত নির্দেশনা পাওয়া যায়। সুন্দর ব্যবস্থাপনা, নিশ্চিন্তে ইবাদাতবন্দেগী, সুমধুর সুরে তেলাওয়াত, জামায়াতে তাহাজ্জুদ নামাজ -ইত্যাদির আকর্ষণে ইতিকাফে যাবার এতো চাহিদা।
মসজিদ প্রতিনিয়ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। কার্পেট, জুতার শেল্ফ, এন্ট্রেন্স, করিডোর, ফয়ার সবকিছূ পরিস্কার। বাথরুম, টয়লেট, অজুখানাতে বিশেষ তদারকির মাধ্যমে মুসল্লীদের ব্যবহার উপযোগীতা সুনিশ্চিত করা হয়। আর ইতিকাফকারীদের জন্য থাকে উত্তম ব্যবস্থা।
শুধু কী পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা? রামাদ্বানে থাকে বিশেষ কমর্সূচী। শেষের দশদিন। খুবই ব্যস্ত মসজিদ। তাছাড়া প্রতিদিনই কযেকশ মানুষের ইফতারীর ইন্তেজাম। এলএমসির গ্রাউন্ড ফ্লোরে অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে ইফতারি বিতরণ করা হয়। ভলান্টিয়ার ভাইবোনদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ইফতারীর পর থেকে নিয়ে ইশা তারাবীহ পর্যন্ত। মসজিদের সাথেই রয়েছে মারিয়াম সেন্টার। সেখানে মহিলারা নামাজ আদায় করেন। সেদিকে যাবার সুযোগ না থাকলেও দলে দলে মহিলাদের আগমন লক্ষ্য করা যায়। মসজিদের বাইরের রাস্তাঘাট খুবই ব্যস্ত থাকে রামাদ্বানে। বিভিন্ন দিক থেকে মুসল্লীদের মসজিদমুখী আগমন, মনে হবে আপনি কোনও মুসলিম দেশে অবস্থান করছেন – আজানের সুমধুর সুরে বিমোহিত হয়ে মসজিদের পানে ছুটে চলা।
মহাকবি কায়কোবাদের বিখ্যাত আজান কবিতাটি মনে পড়ে গেলো। কে ওই শুনালো মোরে আজানের ধ্বনি/মর্মে মর্মে সেই সুর/ বাজিলো কী সুমধুর/আকুল হইলো প্রাণ/ নাচিলো ধমণী/কি মধুর আজানের ধ্বনি। উল্লেখ্য, ইস্ট লন্ডন মসজিদেই শুধু আজান হয়। যদিও সামারের সময় দিন অনেক লম্বা হওয়ার কারণে ইশার সময় আজান হয় না। তারপরও ইফতারের পর আশপাশের মুসল্লীরা দলে দলে মসজিদে আসেন। অনেক দুরদুরান্ত থেকেও মুসল্লীরা আসেন বিশেষ করে উইক এন্ডে। মসজিদের এন্ট্রেন্স থেকে পানির বোতল কেনার অথবা ভেতরেও পানি পানের ব্যবস্থা থাকে। জুতোর ময়লা যাতে ভেতরে না যায় সেজন্য ঢোকার সময়ই পলিথিন ব্যাগ দেয়া হয়। নামাজ শেষে বাইরে বের হলে আপনি পাবেন নানান ইসলামিক সামগ্রীর স্টল। কেউ কেউ আবার যার যার পণ্য কিংবা অনুষ্ঠানের চটকদার লিফলেট বিতরণ করছেন। বিশেষ করে কেক বিক্রি থাকে খুবই জমজমাট। দোকানদারদের অনেকেই বিক্রির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মসজিদের ফান্ডে দান করেন। এছাড়া প্রায় প্রতিরাতেই দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ পাবার আশায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসল্লীরা মুক্তহস্তে দান করেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন প্রজেক্টের আপডেট দিয়ে থাকেন নিয়মিতভাবে এবং সে উদ্দ্যেশ্যেও ফান্ড রেইজ করা হয়। উল্লেখ্য, এই কমিউনিটির মানুষের দানের একটি বিরাট অংশেই গড়ে উঠে আমাদের সকলের গর্বের ধন এই প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ, লন্ডন মুসলিম সেন্টার ও মারিয়াম সেন্টার।
মসজিদের সম্মানিত খতিব ও ইমামগণ প্রতিদিনই রামাদ্বানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বয়ান করে থাকেন। মাসআলা মাসায়েল, জীবন জিজ্ঞাসার জবাব সবই থাকে এসব আলোচনায়। মসজিদে কেউ কোরআন তেলাওয়াত করছেন, কেউ নামাজ পড়ছেন, কেউ আছেন জিকির ও তাসবীহ তাহলীলে মশগুল। কেউবা আবার একটু ঘুমুচ্ছেন অথবা বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ কেউ ছোট ছোট গ্রুপে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় সময় দিচ্ছেন। কেউ আবার বই পড়ছেন অথবা কোরআনের সুরা মুখস্থ করছেন, তাফসীর পড়ছেন, নোট করছেন, লিখছেন। এ যেনো এক বিরাট কর্মশালা। কর্মসূচী শুধু মসজিদ কর্তপক্ষেরই নয়; ইতিকাফকারীদের প্রত্যেকের থাকে একটি নিজস্ব কর্মসূচী। তারা প্রায় সারারাতই জাগ্রত থেকে এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন। একান্তমনে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হন।
ইতিকাফকারীদের রেজিষ্ট্রেশন ফি দিতে হয়। এই ফি দিয়ে থাকা খাওয়ার খরচ কাভার করা হয়। ইফতার, সেহরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দেয়া হয়। এছাড়া ইতিকাফকারীদের নিজেদের পরিবার থেকেও খাবার-দাবার আসে, যা তারা সবার সাথে শেয়ার করেন। চা কফি, রিফ্রেশমেন্টের রয়েছে সুব্যবস্থা। ইফতার থেকে ইশা পর্যন্ত এবং এর পরেও চলে চাকফি পর্ব। যারা সেহরীতে ভাত তরকারী খাবেন না তাদের জন্য সিরিয়েলে, পরিজ, দুধসহ অন্যান্য খাবারেরও ব্যবস্থা থাকে। এককথায় একটি পারিবারিক পরিবেশে আপনি পরম প্রশান্তি মনে ইতিকাফ করতে পারবেন।
একজন ভলান্টিয়ার ভাই প্রতিদিন রাতে সেহরীর পর বাতি নিভিয়ে ঘুমোতে এবং সকাল বেলা আবার নির্দিষ্ট সময়ে জাগিয়ে তুলতে সদা সচেষ্ট থাকেন। আপনি চাইলে রাতে না ঘুমিয়েও থাকতে পারবেন তবে অন্য কাউকে ডিষ্টার্ব করা যাবে না। আবার সকাল বেলা ফজর শেষে ঘুমুতে যেতে পারবেন অথবা ইশরাক, দ্বোহা পড়েও ঘুমুতে যেতে পারবেন। সকালে এক ভাইকে জেগে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করলাম আপনি এখনো ঘুমাননি? তিনি বললেন, ইশরাক পড়বো তাই জেগে আছি। ও হ্যাঁ, সকাল বেলার ব্যায়ামের কথা তো বলা হলো না। বাথরুম সেরে ঘুমুতে যাবো তখন দেখি এক ভাইয়ের নেতৃত্বে ব্যায়ামের কসরত হচ্ছে। তাতে আমিও যোগ দিলাম। কারণ ভরা পেটে ঘুমুতে যাওয়াটা আরামদায়ক নয়। তাই একটু ব্যায়াম করাই উত্তম ভাবলাম। মরিয়ম সেন্টারের পাশের এন্ট্রেন্স দিয়ে মসজিদে ঢুকে যে নতুন অজুখানা ও বাথরুম সেটাই মূলতঃ ইতিকাফকারীরা ব্যবহার করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে মসজিদের ফার্স্ট ফ্লোরে যাবার আগের কিচেনের সামনের জায়গায় ব্যায়ামের ব্যবস্থা হচ্ছে। আর ভেতরের বড় রুমে হলো ইতিকাফের জায়গা যা তারাবীহির সময় সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে নতুবা শুধু ইতিকাফকারীদের জন্য খোলা থাকে, ফোব দিয়ে ঢুকতে হয়। দুর্গন্ধমুক্ত, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বাথরুম ব্যবহার কার না ভালো লাগে! তাছাড়া অজুর জন্যও রয়েছে প্রশস্ত বসার স্থান এবং টেপে রয়েছে যথেষ্ট পানি প্রবাহ।
২৬ রামাদ্বান রাত যাকে আমরা ২৭শা বলে থাকি। লোকেলোকারণ্য মসজিদ। যেনো তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ইফতারের পরপরই মুসল্লীদের আগমন শুরু হয় এবং ইশার সময় মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সে রাতেই সম্ভবতঃ খবর আসে মায়ের অসুস্থতার। তিনি বেশ কদিন যাবত সিলেটের একটি হসপিটালের ইনটেনসিভ কেয়ারে ছিলেন। এর আগেও তিনি ষ্ট্রোক করেছেন তবে এবারের অবস্থা বেশ জটিল। পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন। ডাক্তাররা কোনও কিছু বলতে পারছেন না, কিন্তু আইসিইউতে রাখছেন। অবশেষে তারা রোগীকে ঢাকার বড় হসপিটাল আ্যাপোলে, ইউনাইটেড, স্কোয়ার ইত্যাদিতে নিয়ে যেতে বললেন। আমার এসকল হসপিটালের খরচের বোঝা বহন করার সামর্থ না থাকলেও আল্লাহর উপর ভরসা করে বললাম নিয়ে যাও ঢাকায়; আম্মাকে সুস্থ করে তুলতে হবে। অনেকের কাছেই শুনেছি এরা কিভাবে কসাইয়ের মতো জবাই করে। পরদিন তারা আইসিইউ এম্বুলেন্সে করে ঢাকার দিকে রওয়ানা দিলেন। আর আমিও টিকিটের ব্যবস্থা করে ফেললাম তার পরের দিন। আম্মার জন্য প্রাণভরে দোআ করলাম এবং সবার কাছে দুআর আবেদন রাখলাম। অনেকেই আমার উদ্বিগ্নতা দেখে সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, দোআ করেছেন এবং পরবর্তীতেও খোঁজখবর নিয়েছেন। এজন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান হাবিব ভাই (প্রফেসর মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান) মুসল্লীদের কাছে মায়ের জন্য দোআ চান। মসজিদের খতিব ও ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ূম বিশেষভাবে দোআ করেন। আল্লাহতাআলার অশেষ রহমতে ও সবার দোআয় আমি নিরাপদে বাংলাদেশ বিমানে সিলেট হয়ে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছি এবং আমার এক জার্মান প্রবাসী বন্ধু নজরুল ভাইয়ের গাড়িতে করে হোটেলে গিয়ে বড় ভাই ও চাচাতো ভাই বাচ্চুকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।
আম্মাকে প্রথমে নেয়া হয় ইবনে সিনা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে সিট না থাকায় ইসলামী ব্যাংক হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তা শুনে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ফ্লাইটের পূর্বেই জানতে পারি আম্মার অবস্থা উন্নতির দিকে। আইসিইউতে আমাকে দেখেই সচরাচর যেভাবে তিনি প্রথম সাক্ষাতে আলিঙ্গণ করতে উদ্বত হন সেভাবেই বেড থেকে নড়ে উঠলেন এবং কথা বলা শুরু করলেন। আমি পাশে গেলাম, হাতে হাত রেখে কিছুক্ষণ কুশলাদি বিনিময় হলো। আম্মা তখন কিছু বিড় বিড় করছিলেন। কিন্তু জ্ঞান আছে। আমাকে চিনতে পেরেছেন। তিনি হসপিটালে থাকতে চান না, জিজ্ঞেস করলেন, কেন তাকে সেখানে বেঁধে রাখা হয়েছে? আমাদের কী বাড়িঘর নেই? তিনি কোন হোটেলে? বাড়িঘর কারা যেন নিয়ে গেছে- ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম, ইনশাআল্লাহ আপনি ভালো হয়ে বাড়িতে ফিরে যাবেন। আপনাকে দেখার জন্য লন্ডন থেকে এসেছি। আমি ভালো আছি। আম্মার অনেক সৌভাগ্য যে তিনি অনেকের দোআ পেয়েছেন বিশেষ করে ইস্ট লন্ডন মসজিদ, এমনকি মক্কা শরীফেও তার জন্য দোআ হয়েছে। দোআর সাথে দাওয়াও লাগে। আর এখানে তিনি নামকরা চিকিৎসকদের সেবাযত্ন পাচ্ছেন। এজন্য ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার নার্সদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। আমার ভাগিনা রুম্মানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ, কাজিন শাওনের সহযোগিতা এবং আমার বন্ধু জাকির ভাইয়ের পরিচয় প্রসঙ্গ যথেষ্ট সহায়তা করে। সে যাক, প্রায় ১১দিন ঢাকায় থেকে মায়ের চিকিৎসা শেষে সিলেটে বাসায় তুলে দিয়ে কদিন পর লন্ডন ফিরে আসি। এই বিষয়ে পরবর্তী কোনও সময়ে লিখবো বলে আশা করছি।
লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটে বসে মসজিদে অবস্থানরত রাতের কথা ভাবছিলাম আর অন্যদিকে মায়ের হসপিটালের উদ্দেশ্যে ঢাকা যাত্রা ও চিকিৎসা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম। যেভাবে সবাই মসজিদে মায়ের জন্য দোআ করেছেন মহিমান্বিত রাতে তাতে আমার বিশ্বাস জন্মেছিলো যে, তিনি বেঁচে যাবেন। তবে অন্য আশংকায়ও ছিলো। আল-হামদুলিল্লাহ, আম্মা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন এবং অফিসের ছুটিমতো দুসপ্তাহের মধ্যেই সবকিছু শেষ করে আবার লন্ডন ফিরে আসি।
ওইবছর জীবনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলাম। লন্ডনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের নামাজ- ঈদ ইন দ্যা পার্ক আর করা হয়নি। প্রাণপ্রিয় ইস্ট লন্ডন মসজিদে ইতেকাফ অপূর্ণ থেকে গেলো। আল্লাহপাক হায়াতে বাঁচিয়ে রাখলে আবারো কোনোদিন তা পূর্ণ করার অফুরাণ আশা বুকে রইলো। রামাদ্বানের মহিমান্বিত রাতগুলো আবারো সেখানে কাটাতে চাই। আল্লাহতাআলা যেন সে তাওফিক দান করেন। মসজিদের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট থেকে অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সবার কল্যাণ, সর্বোপরি কমিউনিটির সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের সর্বাত“ক সহযোগিতা ভালোবাসা অটুট থাকুক এই কামনা করি।
লেখক:
আকবর হোসেন
সাংবাদিক। লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
৩১ মে, ২০২০