সিরাজুল ইসলাম: রাজনীতির এক মুকুটহীন সম্রাটের চিরবিদায়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২০
আবদুল কাদের তাপাদার :: উনসত্তরের উত্তাল দিনে তিনি অবিভক্ত সিলেট জেলায় গড়ে তুলেন ছাত্রলীগের দূর্গ। নেতৃত্ব দেন জেলার প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন রণাঙনে। বিজয়ীর বেশে এলাকায় ফিরে এসে গড়ে তুলেন নিজের প্রিয়দল আওয়ামী লীগকে। ৭৩ সালে একেবারে তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধুর মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দেওয়ান ফরিদ গাজী, সামাদ আজাদের কাছাকাছি অবস্থানে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর যত্নে রাজনীতির মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ান তিনি। হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধুর আদরের মৌলভীবাজারের সিরাজ। পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের এক কঠিন দুঃসময়ে ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জয়জয়কারের দিনে আওয়ামীলীগের হয়ে বড়লেখা আসনে বিজয় লাভ করে সারাদেশে তাক লাগিয়ে দেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু যেভাবে তাকে মূল্যায়ন করেছিলেন সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেভাবেই তিনি বঞ্চিত হন।
রাজনীতির নানা আঁকাবাঁকা পথ মাড়িয়ে এক সময় আওয়ামী লীগের মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন বড়লেখার এই প্রভাবশালী রাজনীতিক সিরাজুল ইসলাম। তবুও আপামর মানুষের ভালোবাসার ঘোরে আটকে থাকা এই মানুষ বিচ্ছিন্ন হতে পারেননি বড়লেখার সমাজ ও জনজীবন থেকে। এমপি, মন্ত্রী না হয়েও সাধারণ মানুষের উদ্ভুদ এক শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় কেটে গেছে তার সারাটা জীবন।তিনি যেনো এই এলাকার রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট।
সিরাজুল ইসলাম। পাথারিয়া পাহাড়ের পাদদেশে, বিশাল জলরাশির হাকালুকি পারের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া এক ক্ষণজন্মা রাজনীতিক। এ অঞ্চলে গত অর্ধ শতাব্দীর রাজনীতি ও সমাজ জীবনে যিনি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে আছেন।
তিনি একাধারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি মুক্তিযুূ্দ্ধের রণাঙ্গনের বীর সেনানী। রাজনীতির মাঠ দাপিয়েছেন। আওয়ামী লীগকে মৌলভীবাজার জেলায় সাংগঠনিকভাবে গড়ে তুলেছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। উনসত্তরের উত্তাল আন্দোলনে ছাত্রলীগকে সিলেট জেলায় সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন।
সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একসময় হয়ে উঠেন বৃহত্তর বড়লেখার রাজনীতি তথা মাটি ও মানুষের নেতা। বড়লেখার সাধারণ মানুষের সাথে তার অন্তরঙ্গতার নিবিড় বন্ধন তাকে করে তুলে এই নিভৃত এলাকার এক অনন্য, অনবদ্য ও অসাধারণ ভালোবাসার মানুষে। যে ভালোবাসায় বেঁধে পড়ে তার জীবনটাও হয়ে উঠে একেবারে সাদাসিধা, সাদামাটা।
সাধারণের সুখ দুখের সাথী হয়েই তিনি এক অদ্ভুত প্রেম ভালোবাসার ঘোরে কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা জীবন। কখনো কখনো রাজনীতির সাঁতার কাটতে গিয়ে আটকে গেছেন। কিন্তু বড়লেখার মানুষ তাঁকে ফেলে দেয়নি, সরিয়ে দেয়নি। এটাই নিজেরমাটির সাথে তার যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সেটারই প্রমাণ।
তিনি দু’দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিলো বঙ্গবন্ধুর মতো তার দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও তাঁকে মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু তার অভিযোগ তিনি এক্ষেত্রে চরম বঞ্চিত হয়েছেন।তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় যেসব উঠেছে বরাবরই
তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
সিরাজুল ইসলাম কৈশোর ও তারুণ্য পেরিয়ে ভরা যৌবনজুড়ে দলের জন্য অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁর একটা স্বপ্ন ছিলো তিনি এলাকায় মন্ত্রীর পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াবেন। একজন পরিপক্ক ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর এই চাওয়া পাওয়ার দাবি তেমন বেশি কিছু ছিল না। তবে তাঁর সে স্বপ্ন বা আশা কোনোদিনও পূরণ হয়নি। তিনি এজন্য বরাবরই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদকে দায়ী করেছেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ বড়লেখার রাজনীতির বরপুত্র:
স্বাধীনতার পরপরই কিছুদিন বালাগঞ্জের একটি স্কুলে এবং পরে বড়লেখা পিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সিরাজুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আবার আওয়ামী লীগে স্বক্রিয় হয়ে উঠেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তিনি বড়লেখা আসনে (জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল, ভাটেরাসহ) বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বিজয় লাভ করেন। তখন থেকেই এলাকাবাসীর কাছে প্রিয় একটি নাম হয়ে উঠে সিরাজ মিয়া। কারো কাছে সিরাজ ভাই, কারো কাছে সিরাজ চাচা। তবে এমপি সিরাজ নামেই তিনি সারাজীবন সমধিক পরিচিত ছিলেন।
তখন সারাদেশে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। বড়লেখায়ও মানুষের মুখে মুখে যেনো একটি নাম রাজনীতির প্রতিশব্দ হয়ে উঠে। চুয়াত্তরে খাদ্যসংকটে দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হয়।এসময় বড়লেখা সদরে বর্তমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে সিরাজ মিয়ার বাসার কাছে প্রতিদিন শিশু খাদ্যসহ সহায়তা বিতরণ করা হতো।
সেসময় তিনি বড়লেখার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যদিও তার সাঙ্গ পাঙদের বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্মসাতের অনেক অভিযোগ উঠে। তারপরও সিরাজুল ইসলাম মানুষের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হননি। কারণ তার একটা রাজনৈতিক ক্যারিশমা ছিলো মানুষের ভুল ভ্রান্তি দূর করার। সুখে দুখে তিনি এভাবেই পাশে থাকতেন সাধারণ মানুষের।
১৯৭৯ সালে সিলেট বিভাগে একমাত্র বড়লেখা আসনেই আওয়ামী লীগের বিজয়:
পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার হত্যাকান্ডের বিয়োগান্তক ঘটনার পর আওয়ামী লীগ টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম এ সময়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তিনি বড়লেখা ও মৌলভীবাজার জেলায় সাংগঠনিকভাবে দলকে গড়ে তুলেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, এম, সাইফুর রহমান সাহেব জিয়াউর রহমানের রাস্ট্রপতি সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা নিয়োগ লাভের পর সিরাজুল ইসলামকে জিয়াউর রহমানের সাথে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম তাতে সায় দেননি।
এরই মধ্যে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে সংসদ নির্বাচন ঘোষণা করেন।বড়লেখা আসনে বিএনপির প্রার্থী ডাঃ আবদুশ শুকুরের ধানের শীষের বিপরীতে নৌকা নিয়ে দাঁড়ান ৭৩ এর জনপ্রিয় এমপি সিরাজ মিয়া। তখন দেশব্যাপী বিএনপির প্রবল গনজোয়ার।
আওয়ামী লীগের নামগন্ধ নেই। নৌকার নাম কেউ শুনতে পারে না। এ অবস্থায় সিরাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত প্রভাব বড়লেখায় এতো বেশি ছিলো যে, তিনি আওয়ামী লীগ নয়, সিরাজ লীগ হিসেবে বিপুল বিজয় লাভ করেন। তাঁর বিজয়ের আরেকটি বড় কারণ এই ছিলো যে, প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থী ডাঃ শুকুর সাহেব কোনো রাজনীতিবিদ ছিলেন না। চিকিৎসক হিসেবে তার একটা পরিচিতি ছিলো। তাছাড়া তিনি এলাকার আদি বাসিন্দা নন। ভারতের করিমগঞ্জ থেকে তার পরিবার এখানে এসে বসতি গড়ে তুলেন। আরেকটি অপপ্রচার ছিলো ডাঃ শুকুরের বিরুদ্ধে যে তিনি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোক। যাক, সিরাজুল ইসলামের বিজয় তার ক্যারিয়ারে তাক লাগানোর মতো হলেও কপাল পুড়লো বড়লেখাবাসীর। কারণ বিজয়ী বিএনপি সরকার। এম, সাইফুর রহমানকে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রী করা হলো। আবারও সিরাজুল ইসলামকে বিএনপিতে যোগদানের আহবান জানালেন সাইফুর রহমান। কিন্তু তাতে সায় দিলেন না সিরাজুল ইসলাম।
কেনো তিনি এমন করলেন? তাহলে কি তিনি মন্ত্রীত্ব চেয়েছিলেন? আর সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি সাইফুর রহমান। তাই তিনি যোগদান করেননি। তবে বরাবরই সাইফুর রহমানের সাথে সিরাজুল ইসলামের একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো। এই সম্পর্কের কারণে বিএনপি আমলে চান্দগ্রাম মৌলভীবাজার সড়ক পাকাকরণ, বিশেষ করে চান্দগ্রাম- বড়লেখা সড়ক পাকাকরণ প্রকল্পটি পাশ হয়।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন সিরাজ:
জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতায় আসেন রাস্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার। মাত্র কিছুদিন পর এরশাদের বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা ছাড়েন বিচারপতি সাত্তার। এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর উপজেলা নির্বাচন ঘোষণা করলে দেশে আগুনের মতো স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে নিভৃত জনপদ বড়লেখায়ও। আটদল, সাতদল আর জামায়াতে ইসলামীর যুগপৎ আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে লাল হয় বড়লেখা শিরিষতলা পয়েন্ট।
মিছিলে গুলি তাক করলে গুলির মুখে নিজের বুক পেতে দেন সিরাজ। গুলি লক্ষ্য ভ্রস্ট হয়ে ছাত্রলীগ নেতা মকবুল হোসেন নীলের শরীরে বিদ্ধ হয়।অনেকেই সেদিন গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন। তবে সবচেয়ে গুরুতর আহত হন নীল। নীল স্কুলে আমাদের সহপাঠী।
এখনকার পৌরসভার মেয়র কামরান চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর আর বড়লেখা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মামুন আমাদের সহপাঠী। আমরা সবাই সেদিনকার সেই মিছিলে ছিলাম।
এরশাদের অধীনে পার্লামেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত সিরাজ, বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে:
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে বড়লেখায় এই প্রথমবারের মতো মনোনয়ন বঞ্চিত হন সিরাজুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এরশাদের প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরীকে হারিয়ে এমপি হন দক্ষিণ ভাগের ইউপি চেয়ারম্যান ঈমান উদ্দিন।
বড়লেখা আওয়ামী লীগে আগুন যেন জ্বলে উঠছে। উত্তর আর দক্ষিণে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। এখানে আরেকটি বড় ঘটনা ঘটলো। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় এরশাদের জাপা থেকে সিরাজুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান এবাদুর রহমান।তবে মনোনয়ন না পাওয়ায় সিরাজুল ইসলাম হরিণ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নৌকার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেন। রাজনীতির এই দুঃসময়ে সিরাজুল ইসলামের নানা নাটকীয় সিদ্ধান্ত তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। পরে এবছরই অনুষ্ঠিত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
তখন থেকেই মূলতঃ আওয়ামী লীগের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয় তার। পরে আবারও তিনি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হলেও মূলধারায় আর ফিরে যেতে পারেননি। মাঝপথে ১৯৮৬ থেকে এমপি ঈমান উদ্দিনের নেতৃত্ব গড়ে উঠলেও আওয়ামী লীগ বড়লেখায় বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সিরাজুল ইসলাম আর ঈমান উদ্দিন রাত দিন তফাত তৈরি করে।
পরবর্তী নির্বাচন ১৯৯১ তে আবারও আওয়ামী লীগ ঈমান উদ্দিনকে প্রার্থী করে। নির্বাচনে জাপা প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরী জয়লাভ করেন। পরাজিত হন ঈমান উদ্দিন এবং ক্ষমতায় যাওয়া বিএনপি প্রার্থী আসাদ উদ্দিন বটল। এরপরই বদলে যায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির হিসাব নিকাশ।
পরবর্তীতে বড়লেখা আওয়ামী লীগের কান্ডারী হয়ে উঠেন আজকের স্হানীয় সংসদ সদস্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এককালে আওয়ামী লীগের বড়লেখার কান্ডারী সিরাজুল ইসলামের হাতে গড়া এই তরুণ ভাগ্যবান নেতা ১৯৮৪ সাল থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তৃণমূলের নেতা- কর্মীদের ভালোবাসা নিয়ে উঠে এসেছেন রাজনীতির কঠিন সিঁড়ি বেয়ে।
১৯৯৬ এ নির্বাচনের আগে শাহাব উদ্দিন গ্রামতলা এলাকায় এক সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন। তাঁকে প্রাণনাশের লক্ষ্য নিয়ে এই হামলা চালানো হয়। বিএনপি ঘরানার দুই জন যুবক এই হামলায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু ঐ হামলার সাথে সিরাজুল ইসলামের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে বড়লেখায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির খোল নলচে উঠে।
পরবর্তী নির্বাচনে ১৯৯৬ সালে মনোনয়ন লাভ করে বিজয়ী হন শাহাব উদ্দিন। তবে সিরাজুল ইসলাম বরাবরই এই হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলেছেন, এর ঠিক পেছনেই তিনিও শাহাবুদ্দিনের সাথে ফিরছিলেন।
৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজনীতির কিংবদন্তী সিরাজুল ইসলামের এক ধরনের অপমৃত্যু ঘটে। আওয়ামী লীগের সাথে নামমাত্র সম্পর্ক থাকলেও তিনি রাজনৈতিক নির্বাসনে চলে যান। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ২০০৪ সালে সিরাজুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপিতে যোগদান করলেও তেমন সক্রিয় হননি।
“সিরাজলীগ” নিজেই রাজনীতির একক প্রতিষ্ঠান:
বড়লেখায় কলেজ প্রতিষ্ঠা, স্কুল কলেজ মাদ্রাসার পরিচালনার সাথেও তার একটা সম্পর্ক ছিলো বরাবরই। বড়লেখার সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনে তার প্রভাব ও সংশ্লিষ্টতা ছিলো অসামান্য।
সিরাজুল ইসলাম এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন বা নেই এটা বড় বিষয় ছিলো না। তিনি সব সময়ই সবখানেই ঘুরেফিরে আসতেন। তাঁকে বাদ দিয়ে একসময় বড়লেখা চলতো না। তাঁর নির্বাচনের টাকা কোনোদিনও তার ছিলো না। এলাকার মানুষ সেই টাকা দিতেন। তিনি কোনোদিন টাকা দিয়ে নির্বাচনের মনোনয়ন কিনেছেন এটা শুনিনি। মানুষের এক আজব ও উদ্ভূত ভালোবাসার ঘোরে বড়লেখাকে জয় করেছেন রাজনীতির এই মুকুটবিহীন সম্রাট।
বড়লেখার মানুষ অনাগত কাল, অনেক দিন মনে রাখবে রাজনীতির এই অভিভাবক, সমাজের এই মুরব্বি এবং দেশের এই প্রবীণ সেবককে।
লেখক: সম্পাদক, এখন সিলেট । সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক জালালাবাদ।