করোনাভাইরাস: সবার মাঝে ইয়া নাফসি, পাল্টে গেছে সালাম ও কুশল বিনিময়ের রীতিনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মার্চ ২০২০
মো: রেজাউল করিম মৃধা :: করেনাভাইরাস এখন এক আতঙ্কের নাম। কোভিড-১৯ সারা বিশ্বকে বিছিন্ন করে ফেলেছে। সবাই যেন ঘরে বন্দি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এখন আর কেউ ঘরের বাইরে যায় না। মাত্র কয়েক দিন আগেও যেখানে ছিল প্রাণচঞ্চল আজ সেখানে মন্থর। যেসব স্থানগুলো ছিলো লোকে লোকারণ্য আজ সেখানে ভূতুড়ে অবস্থা। কেউ নেই। ফাঁকা জন শূন্য।
আপনারা সবাই সারা বিশ্বের খবর জানেন। আর এসব খবর জানার জন্য সব সময় আমরা উদ্বিগ্ন থাকি। কোথায় কখন কে মারা গেলেন? কে কে নতুন করে আক্রান্ত হলেন। কোন দেশে কত জন মারা গেলো? কতজন নতুন করে আক্রান্ত হলো?
এসব খবর শোনে মনটা খারাপ হয়ে যায় আবার যখন শুনেতে পাই নতুন কেউ আক্রান্ত হয়নি তখন মনটা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠে। স্বস্তি ফিরে আসে।
ইউকে’র কথাই ধরা যাক। এ পর্যন্ত ৪৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেই গত শুক্রবার থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সেই সাথে মসজিদ, মাদ্রাসা সহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয় গণজামায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পাব, রেস্তোরাঁ, জিম, রেস্টুরেন্টসহ বহু প্রতিষ্ঠান। সঙ্গত কারণেই প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।
দু’দিন আগেও খাবারের গ্রোসাঈগুলোতে, সুপার মার্কেটসহ ছোটখাটো মার্কেটগুলোতে ছিলো কাস্টমারদের উপছে পড়া ভিড় । কিন্তু আজ এখনকার চিত্রটা পুরো ভিন্ন। সব কিছুই ফাঁকা। বড় মার্কেট থেকে শুরু করে স্ট্রীট মার্কেটগুলোতেও সেই কাস্টমার নেই। চারদিকে দিকে হাহাকার ।
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত বা কএনা মুরুব্বিরসহ সবার সাথে দেখা হলে সালাম দেওয়া, হাত বা বুক মিলানো ছিল চিরাচরিত নিয়ম কিন্তু আজ এই করোনাভাইরস মহামারিতে সেই রীতিনীতি পাল্টে দিয়েছে। এখন বুক মিলানো তো দূরের কথা, হাত মিলানোই হয় না। খুব পরিচিত হলে কনুই শেক করা হয়। সমবয়সী হলে পায়ে পায়ে ও লাথির মাধ্যমে কুশল বিনিময় হচ্ছে। আবার অনেকে দূরে দাঁড়ায়ে কথা বলেন। অনেকে মাস্ক পরেন, আবার অনেকে এখন মাস্ক পরেন না। তবে কিছুটা দূরত্ব রেখেই কুশল মিনিময় করেন। যত দ্রত কথা শেষ করে চলে যান।
গত শুক্রবার কোন মসজিদেই বৃহৎ জামাত হয়নি, তবে মসজিদ নামাজ আদায় করেছেন। আমাদের ডিউটি তাই দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে ইন্টারভিউ করে দুপুর ২টায় ইস্ট লন্ডনের ছোট্ট একটি মসজিদে আমি এবং চ্যানেল এস সিনিয়র রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিল ভাই এবং ইমামসহ সর্বমোট ৭ জন জুম্মার নামাজ আদায় করলাম।
যে কথা বলছিলাম- মসজিদে প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকতেই হুজুরকে সালাম দিলাম, হুজুর সালামের জবাব দিয়ে হাত মেলানোর জন্য হাতটি এগিয়ে দিলেন কিন্তু আমি পুরো হাত এগিয়ে দিয়ে হাতের মুষ্টি দিয়ে টাচ করলাম। তখন আমার নিজের কাছে বেশ খারাপ লেগেছিল। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। কিন্ত কিছুই করার নেই। শনিবার ১২টার দিকে সামান্য কেনা-কাটার জন্য হোয়াইটচ্যাপেল মার্কেটে গেলাম। সেখানে অনেকটাই ফাঁকা, সামান্য কয়েকটি দোকান বসেছে। লোকজন ও তেমন নেই। প্রাণহীন মনে হলো তারপর কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন। এরমধ্যে অনেক জন পরিচিত কিন্তু কার ও যেন সময় নেই সবাই তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত । যেসব বন্ধুরা দেখা হলে বুকে জরিয়ে ধরতো হ্যান্ডশেক না করার তো প্রশ্নই আসেনা অথচ করোনাভাইরাস নামের মরণঘাতী আজ সবাইকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সালামের রীতিনীতি পরিবর্তন করে দিচ্ছে। সবই এখন যার যার ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি শুরু করছেন। দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন।
যে যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন , সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই কঠিন মহামারি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।