লন্ডনে ঈদ : সেকাল একাল
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
রহমত আলী:
সম্প্রতি ঈদ উদযাপিত হয়েছে। এই ঈদ এখন আর আগের ঈদের মতো নয়। সময় বদলেছে, পরিবেশ পরিস্থিতিও বদলেছে তাই আগের যেকোনো সময়ের ঈদের চাইতে বর্তমানের এদেশে ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের অন্য এক রূপ পরিলক্ষিত হয়। অথচ এমন এক সময় ছিল যখন এদেশের মানুষের নামাজ, রোজা ঈদ পর্যন্ত পালন করার তেমন কোন সুযোগ ছিল না। এমনকি, কখন ঈদ বা রোজা আসতো সে খবরটুকু পর্যন্ত সময়মত জানতো না। দেশ থেকে আসা চিঠিপত্রে তারা এ সমস্ত কিছু জানতে পারতেন। কিন্তু তাও আবার এ সমস্ত পর্ব চলে যাওয়ার অনেকদিন পর । এদেশে অবস্থানরত আমাদের অনেক পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে জানা যায় এ সময় ধর্মীয় পর্বগুলি তাদের পালন করার নিতান্ত ইচ্ছা থাকলেও সময় সুযোগের অভাবে তারা এগুলি পালন করতে পারতেন না। অনেকে আবার দুঃখ প্রকাশ করে বলে থাকেন যে, এই নামাজ-রোজা করতে না পারার কারণে দেশেও অনেক সময় তাদের পরিবারবর্গ নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হতো। তাদের আয়োজিত কোন ধর্মীয় পর্বে কেউ আসতে চাইতো না। বলা হতো এখানকার রুজি-রোজগার সম্পূর্ণ রূপে হালাল নয়। তারা নামাজ রোজা করে না। অধিকন্তু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিক কার্য সম্পাদন করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে আজকালকার অবস্থা ভিন্ন। প্রবাসীদের বাড়ি ছাড়া অনুষ্ঠান জমে না, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি প্রবাসীদের ছাড়া সম্পন্ন হয় না। এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন মূলত প্রবাসীদের ঘিরেই অনুষ্ঠিত হয়। এ দেশ থেকে চাঁদা তুলে বা ফান্ডরেইজিং করে এ সমস্ত কর্মকান্ডে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দেয়া হয়ে থাকে। অনেকে দেশ থেকে এখানে এসেও অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। সে যাই হোক, এদেশে ঈদ পর্ব অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি পালনের বিষয়গুলি যেন বাংলাদেশের অনুষ্ঠানগুলিকে হার মানিয়ে চলতে শুরু করেছে। যারা বাঙালি পাড়ায় বসবাস করেন তাদের কাছে তো মনে হয় না যে, সুদূর প্রবাসে তারা ঈদ পালন করছেন। মসজিদ ছাড়াও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায়, দল বেঁধে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়া, ঈদের শুভেচ্ছা পৌছে দেয়া, কুরবানী দেয়া, ঘরে ঘরে ঈদ উপলক্ষে রান্নার আয়োজন কোন দিক থেকে এখন দেশের চাইতে এদেশের সবাই এগিয়ে আছেন। রেডিও, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকার স্কুলগুলিসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ঈদের বিশেষ ছুটি পালিত হচ্ছে। ঈদের শেষে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এ সমস্ত অনুষ্ঠানে অনেক নন মুসলিমরও যোগদান করছে। এদেশে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছেও ঈদের আনন্দকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তারা নিজেদের মত করে এগুলি পালন করে থাকে। যদিও এ বিষয়ে কিছু কুসংস্কৃতি ইতিপূর্বে পরিলক্ষিত হতো কিন্তু এখন আস্তে আস্তে তা থেকে তারা সরে আসছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও কমিউনিটি সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। নানা প্রচার মাধ্যমেও এর নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে ট্রেক্সট করে, ম্যাসেজ দিয়ে, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের মাধ্যমে এগুলি প্রেরণ করা হয়ে থাকে। মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের মধ্যেমে এগুলি করা হয়। ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রথা যেন বিলুপ্ত হতে চলেছে। তবে দেশে ব্যানার, ফ্যাস্টুন ও বিলবোর্ডের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ফলাওকরে প্রচারের ব্যবস্থা থাকলেও এদেশে এর তেমন কোন প্রচলন নেই। এদেশে ঈদের কুরবানী সাধারণত অর্ডার দিয়েই সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। সরাসরি কুরবানী দেয়ার সুযোগ এখনও তেমনভাবে সৃষ্টি হয়নি। হয়তো আগামীতেও তার প্রচলন হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে এ ব্যাপারে সরাসরি অবগত করতে অনেকে দেশে গিয়ে কুরবানী দিয়ে থাকেন অথবা মোবাইল বা ভিডিওর মাধ্যমে তা প্রদর্শন করিয়ে থাকেন। এতে তারা বিভিন্ন বিষয় অবগত হয়ে থাকে। সুতরাং ঈদে অনুষ্ঠানিকতা এখন এদেশে সার্বজনিন হয়ে গেছে। প্রবাসীরা এখন আর আগের মত দেশে গিয়ে তা আদায় করার প্রয়োজনীয়তা মনে করেন না।
লেখক: সম্পাদক, দর্পণ ম্যাগাজিন