আল্লাহ কুরআনে বলেছেন যে, ‘তোমরা তোমাদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করো’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০১৭
প্রশ্নঃ
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন যে, তোমরা তোমাদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করো। এই আয়াতের ওপর আমল করতে গিয়ে আমাদের কিছু ভাইবোন বলছেন যে আমার দায়িত্ব হলো আগে নিজকে, এরপর পরিবারের সদস্যদেরকে তৈরী করুন, তাদেরকে সময় দিয়ে তারবিয়া দিয়ে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন। এরপর আপনি বাইরের দাওয়াতী কাজ করুন। ফলে, কয়েকটা পরিবার অন্য কোন অনুষ্ঠানে আসেন না, বরং তারা নিজেরা নিজেদেরকেই নিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
উত্তরঃ
সূরা তাহরীমের এই আয়াতের অনেক গুরুত্ব। নিজের পরিবারকে সময় দেওয়া ও তাদেরকে লেখাপড়া করানো, তারবিয়া দেওয়া প্রত্যেক বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রীর ওপর ফরজ। এটা ঠিক। কিন্তু এই ফরজ কাজ করতে গিয়ে সমাজের অন্য কে কি করছেন এবং কোথায় কি হচ্ছে এ ব্যাপারে আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই এ কথা আমি কোথাও পড়িনি, বা শুনিও নাই।
বরং কুরআন-হাদীস ও সীরাহ পড়ে আমরা এটাই বুঝি যে একজন মুসলমানের ওপর দায়িত্ব অনেকগুলো। এক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্য দায়িত্ব অবহেলা করা যাবে না। দাওয়াতী কাজ করা ফরজ। কিন্তু পরিবারের সবাইকে জান্নাতী বানিয়ে তারপর অন্যের কাছে দাওয়াতী কাজ করতে হবে এ কথা অবাস্তব। রাসূলুল্লাহ (স) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্যে রোল মডেল ও অনুকরণীয়। কিন্তু তারা তো শুধু মাত্র তাদের পরিবারকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেননি। তারা বরং দ্বীন প্রচারের জন্যে মক্কা-মদীনা ছেড়ে ভারত-চীন-আফ্রিকাতে গিয়েছেন। তাদের এই ত্যাগের কারণেই তো আমরা ইসলামকে পেয়েছি। তারা যদি শুধুমাত্র তাদের পরিবার নিয়ে পড়ে থাকতেন তাহলে মক্কা-মদীনার বাইরের ইসলাম বের হতে পারতো না।
ভালো লোকদেরকে দাওয়াতী কাজ থেকে সরিয়ে রাখার এটা একটা শয়তানী চক্রান্ত। যারা নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে ভালোভাবে মানুষ করতে চান, তাদের উচিত হলো অন্যদের ছেলেমেয়েরাও কিভাবে মানুষ হচ্ছে বা কি করছে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা ও তাদেরকে সাহায্য করা। অন্যের ছেলেমেয়েদেরকে যদি আপনারা মানুষ হতে সাহায্য করেন তাহলে দেখবেন, এর অছিলায় আল্লাহতায়ালা আপনাদের বাচ্চাদেরকেও মানুষ হতে সাহায্য করবেন। আল্লাহ তার দ্বীনকে সবাই মিলে আকড়ে ধরতে বলেছেন, একা একা শুধু পরিবারকে নিয়ে থাকতে বলেননি। আল্লাহতায়ালা কুরআন শিখতে ও শিখাতে বলেছেন, শুধু পরিবারকে শিখাতে বলেননি। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন আমরা সকল মুসলমান একটা শরীরের মত। সবার সুখে-দুঃখে আমাদেরকে মিলে মিশে থাকতে হবে (বুখারী ৬০১১, মুসলিম ২৫৮৬)।
আনাস (রা) রাসূলুল্লাহ হতে একটা হাদিস বর্ণনা করছেনঃ
যে সকালে জাগলো কিন্তু তার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু, সে আল্লাহর সাথে নয়। আর যে সকালে জাগলো কিন্তু মুসলমানদের ব্যাপারে কোন গুরুত্ব দিলো না, সে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য নয়। (বায়হাকী ৭/৩৬১, আল-বানী সিলসিলাতুল আহাদীস আদ-দায়ীফাহ ৩০৯/৩১২)।
এই হাদিসটা মাওযু নয়, দূর্বল হাদিস। আর দূর্বল হাদিস যখন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ এর সাথে মিলে যায় তখন সেই হাদিস দিয়ে প্রমাণ দেওয়া যায় বলে সকল উলামা বলেছেন।
অন্য মুসলমানদের দুঃখ-কষ্টে যাদের মন কাদে না বা মন টানে না, যারা ছুটে যায় না, তারা স্বার্থপর। ইসলামের আমরা স্বার্থপর নই, আমাদেরকে ভ্রার্তৃত্ব শিখিয়েছে সকল জায়গায় সকল ক্ষেত্রে। আমরা যদি নিজেরাই শুধু নিজেদেরকে নিয় ব্যস্ত থাকি, তাহলে আমরা হয়ে যাব জামায়াতচ্যুত। আর উম্মাহ ও বৃহত্তর জামায়াত থেকে বিচ্যুত হয় নিজের ইসলামকেই টিকিয়ে রাখা যাবে না, পরিবারের ইসলাম তো দূরের কথা।
আশাকরি, আমাদের সেই ভাই-বোনেরা তাদের বিষয়টা আবারো চিন্তা করে সবাইকে নিয়ে মিলে মিশে ইসলামের কাজ করবেন। আল্লাহ পাক আমাদের সকলে ক্রুটি-বিচ্যুতিকে ক্ষমা করে দিন এবং ইসলামী উম্মাত ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে থাকার তৌফিক দান করুন।
উত্তর দিচ্ছেন- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদক- মাসিক জায়তুন।