হঠাৎ করেই চলে গেলেন ফজলু ভাই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০১৭
রহমত আলী: অনেকটা হঠাৎ করেই চলে গেলেন ফজলুর রহমান ফজলু ভাই। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে অনেক্ষণ নীরব থাকলাম, আর চিন্তা করতে লাগলাম তার সাথে অনেক স্মৃতির কথা। মনে হলো, মানুষ কি এভাবেই চলে যায় না ফেরার দেশে। কে একজন সপ্তাহ কয়েক আগে আমাকে বলেছিল যে, ফজলু ভাইয়ের অবস্থা ভাল নয়, সম্ভব হলে দেখে আসবেন। আমারও ইচ্ছা ছিল একদিন হসপিটালে গিয়ে দেখা করে আসবো। কিন্তু সে সুযোগ আর হলো না। নিয়তির নির্মম পরিহাসই বাস্তবতায় পর্যবসিত হলো।
ফজলু ভাই এর সাথে আমার পরিচয় খুব দীর্ঘদিন না হলেও ১৫ থেকে ২০ বছরের কম নয়। আমি সাংবাদিকতার পেশায় ও তিনি ছিলেন শিক্ষকতার পেশায় সেই সূত্র ধরেই আমার পরিচয়। তা ছাড়া তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আইনজীবি পরিষদের সহ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এবং সুনামগঞ্জ জেলা এসোসিয়েশনের সেক্রেটারিসহ আরো অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। শিক্ষকতা পেশাই তার মূল পেশা হলেও এক পর্যায়ে তিনি ব্যারিস্টার হিসাবে তার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার অনেক স্বপ্নস্বাদ আর পুরণ হলো না অচিরেই হারিয়ে গেলো সবকিছু। তিনি যেমন ছিলেন একজন ভাল মনের মানুষ তেমনি ছিলেন একজন পরোপকারি ব্যক্তি। কোন কাজে তার কাছে গেলে তিনি তার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতেন। আমি নিজে এক সময় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মাদার টাং সেকশনে কর্মরত ছিলাম। তখন তার কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তিনি শত ব্যবস্ততার মাঝেও আমাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন। আমার অনেক ট্রান্সলেটিং এর কাজ উনার কাছ থেকে করিয়েছি। এক একটি কঠিন ট্রান্সলেটিং এর কাজ যা ছিল আমার স্বপ্নে দেখা বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তিনি সেটা আমাকে ট্রান্সলেটিং করে দিয়েছেলেন বটে, কিন্তুু তার মন্তব্য ছিল এজাতীয় ট্রান্সলেশন- এটাই আমার প্রথম এবং এটাই আমার শেষ। আর কোনদিন এ ধরণের ট্রান্সলেটিং কখনও করবো না। আমি তখন কিছুটা লজ্জিত হয়েছিলাম তার কাছে কিন্তু তবুও এটা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুতরাং সেদিনের কথা এখন আমার মনে ভাসছে এই ভেবে যে, তিনি সেই কাজটি আমাকে না করেও দিতে পারতেন। কিন্তু আমাকে বিমূখ করেননি অন্তত সৌজন্যতার খাতিরে।
ফজলুল হক ফজলু ভাই প্রায় ২০ বছর আগে স্কলারশীপে লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাজ্যে আসেন। তখন তার মামা যুক্তরাজ্য যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ড. আব্দুল মজিদ এদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার উৎসাহ অনুপ্রেরণায় তিনি সেদিন স্বপ্ন দেখেছিলে অনেক দুর এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তুু সে স্বপ্ন সাধ আর পুরণ হলো না। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। ৩ ছেলে ৩ মেয়ে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তার দেশের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার চর মহল্লা ইউনিয়নের আসহাক কাছন গ্রামে। তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দেশেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। স্থানীয় কলেজের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। এদেশে সে কলেজের ফান্ড রেইজিংয়ের জন্য কাজ করেছেন। তার সে সমস্ত কাজের মূল্যায়ন এলাকাবাসী করবেন এটাই প্রত্যাশা।