অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ইউকের নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশের অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রবাসী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (এফওবি), ইউকে আয়োজন করেছে এক বর্ণাঢ্য বার্ষিক নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
গত শনিবার (১১ অক্টোবর) লন্ডনের বিখ্যাত মেফেয়ার ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সংগঠনের ভবিষ্যৎ মানবিক প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ, বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসা, পথশিশুদের পুনর্বাসন ও চোখের দৃষ্টি পুনরুদ্ধার প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আজিজ জানান, এফওবি বর্তমানে বাংলাদেশজুড়ে একটি মোবাইল ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং ইউনিট পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করে জীবন রক্ষার কাজ চলছে। তিনি বলেন, “আমরা খুব শিগগিরই একটি মোবাইল চোখের ছানি অস্ত্রোপচার ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছি, যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষ দৃষ্টি ফিরে পায়।”
১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (এফওবি), ইউকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মানবিক সহানুভূতি ও দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে কাজ করছে। সংগঠনটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাদের নীতি—“Hundred Percent Goes to the Beneficiaries”, অর্থাৎ সংগৃহীত সব অর্থ সরাসরি উপকারভোগীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের (যুক্তরাজ্য) প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমার্শিয়াল কাউন্সেলর তানভির মোহাম্মদ আজিম। তিনি হাইকমিশনারের বার্তা পাঠ করে বলেন, “ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ কেবল একটি প্রবাসী সংগঠন নয়, এটি এক মানবিক শক্তি, যা বাংলাদেশে অসহায় মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনছে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এমপি অ্যান্ড্রু রোসিন্ডেল, এমপি ডেম সিওভেইন ম্যাকডোনাফ, টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার গ্রুপের লিডার কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম, ক্রয়ডনের মেয়র কাউন্সিলর মো. ইসলাম, কমিউনিটি নেতা কে. এম. আবু তাহের চৌধুরী এবং বিবিসিএ সভাপতি তোফাজ্জল মিয়া। তাঁদের উপস্থিতি ও বক্তব্য অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরও অনুপ্রেরণামূলক।
সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. মো. জিয়াউল হক। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আজিজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি সদস্য ও সাবেক সভাপতি মাহবুব ইজদানি খানসহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় সংগঠনের কার্যক্রমভিত্তিক ডকুমেন্টারি, উপস্থাপনা করেন ডা. এম. এ. আউয়াল। এছাড়া কনসালট্যান্ট ব্রেস্ট সার্জন ডা. জাকারুল্লাহ ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও আত্ম-পরীক্ষা’ বিষয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।
তহবিল সংগ্রহ পরিচালনা করেন প্রখ্যাত কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আজমল মাশরুর। তাঁর প্রাণবন্ত আহ্বানে উপস্থিত অতিথিরা বিপুল অনুদান প্রদান করেন। তাঁকে সহায়তা করেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফারহান মাহমুদ খান, সলিসিটার ইমতিয়াজ হোসেন এবং খাদিজা নাসিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট সৈয়দ আরিফ কাজী। সভাপতি ডা. জিয়াউল হক তাঁর সমাপনী বক্তব্যে অতিথি, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সংগঠনের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করেন।
সাংস্কৃতিক পর্বে শিল্পী আল আমিন শাদ, সম্পা দেওয়ানসহ অন্যরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। নিলাম ও র্যাফেল ড্র পর্বে অতিথিদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যজুড়ে বসবাসরত চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, হিসাবরক্ষক ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অংশগ্রহণে স্পষ্ট হয়—প্রবাসে থেকেও মাতৃভূমির অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব, যদি থাকে ভালোবাসা, মানবিকতা ও ঐক্যের শক্ত বিশ্বাস।

ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (এফওবি), ইউকে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে—বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কল্যাণে সর্বশক্তি ও সম্পদ উৎসর্গ করে মানবতার সেবায় অবিচল থাকবে তারা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

