বিয়ানীবাজারের মাথিউরা ইউনিয়ন : প্রশাসনের নিদের্শনা ছাড়াই আ’লীগ নেতা ও ইউপি আলতাফ হোসেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান !
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২৫
সিলেট প্রতিনিধি, ৬ আগস্ট ২০২৫ : আবারও প্রশাসনের কোনও নিদের্শনা ছাড়াই সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন।
রোববার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় নিজ বলয়ের ৫ ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে চেয়ারম্যানের কার্যালয় খুলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
২০২৪ সালে ৫ আগস্টের পূর্বে উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের মিছিলের প্রথম সারিতে ছিলেন এই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আলতাফ হোসেন।
গত ২১ মে মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করে চেয়ারম্যানের চেয়ার দখল করেন আলতাফ হোসেন। এ নিয়ে ইউনিয়নবাসী প্রতিবাদী হয়ে উঠলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনার তদন্ত করতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
এ কমিটি ২৩ মে তদন্ত শুরু করে এবং ৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সিলেটের জেলা প্রশাসক বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন।
এ সিদ্ধান্তের বিপরীতে পরে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কমর্কতাসহ ৮ জন সরকারি কর্মকর্তাকে বিবাদী করে গত ৮ জুলাই উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন তিনি।
এ রিটের শুনানী শেষে ১৩ জুলাই উচ্চ আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নির্দেশনা জারি করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রশাসনিক কোনও নির্দেশনা পাওয়ার আগেই রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন।
মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন পালন করছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন পরিষদের সচিব মো. তাজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে আলতাফ হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে কোন অফিস আদেশ পাইনি। ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন হাইকোর্টে রিটের কাগজপত্র দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।’
ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফয়জুল ইসলাম নজমুল বলেন, ‘পরিষদের ৬জন সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আলতাফ হোসেন মেম্বারের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । বিভ্রান্তমুলক পরিবেশ তৈরী, প্রভাব খাটানোসহ নানা অভিযোগ উল্লেখ করে গত সপ্তাহে ইউপি সদস্যরা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর আরো দুইটি অভিযোগ প্রদান করেন।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি না নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আলতাফ হোসেন মেম্বার আইন ভঙ্গ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এবং বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় ছোট ভাই বিএনপি নেতা হওয়ায় তার প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের চেয়ার বার বার দখল করার অপচেষ্টা করছেন আলতাফ।’
ইউপি সদস্য সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘কোন ধরনের অফিস আদেশ ছাড়াই আলতাফ হোসেন চেয়ারম্যানের কক্ষের দরজা খুলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আলতাফ হোসেনের বলপ্রয়োগ ও অবৈধ দায়িত্ব পালনের সত্যতা পেলেও তার বিরুদ্ধে আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সেকারণে আলতাফ হোসেন নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্টের রীট করে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছে।’
সমাজকর্মী সাদিকুর রহমান বলেন, ‘বহিষ্কার হওয়ায় চেয়ারম্যান মো. আমান উদ্দিন ও ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন- দুজনেই আওয়ামী লীগের পদবীধারী। নতুন বাংলাদেশে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ফ্যাসিস্টদের চাই না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আমান উদ্দিনের মতো আলতাফ হোসেনেরও অপসারণ দাবি করছি।’
তার বক্তব্যের সাথে একমত হয়ে আরেক সমাজকর্মী ফরহাদ মোহাম্মদ তদন্ত কমিটিসহ সিলেটের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যর্থতাকেই দায়ি করে বলেন, ‘তারা ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন।’
এ ব্যাপারে আলতাফ হোসেন জানান, ‘মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ হিসাবে চেয়ারম্যানের অবর্তমানে আমার দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। বিভিন্ন তাল-বাহানায় সেটি না হওয়ায় আমি হাইকোর্টে রীট করে দায়িত্ব পালনের অনুমতি পেয়েছি।’
কোন অফিস আদেশ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিটের অনুমতির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি আদালতের রায় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কোন অফিস আদেশ পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার নিকট আসেনি।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তাফা মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের আদেশে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন হাইকোর্টে রিট করেছেন- এমন একটি রিটের কাগজপত্র ডাকযোগে পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি দায়িত্ব নেবেন কি নেবেন না- সে ব্যাপারে কোন অফিস অর্ডার আমি পাইনি।’
অফিস আদেশ ছাড়া দায়িত্ব পালন করার আইনগত বৈধতা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি হাইকোর্ট দেখবেন। আমি কোন মন্তব্য করতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এক অনুষ্ঠানে সাবেক সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মাথিউরা ইউনিয়নের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন।

