আন্দোলনে ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার পুলিশ কর্মকর্তার: পিবিআই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
সিলেট প্রতিনিধি:: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেফতার মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন তাকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১-এ হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন শুনানি শেষে সাদেক কাউসারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন বলেন, ‘রিমান্ডে সাদেক কাউসার দস্তগীর পিবিআইকে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি এক কনস্টেবলের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছুড়েছেন। তবে কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েননি। ঘটনার দিন ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখালে গুলি ছোড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাদেক কাউসার। তবে সাংবাদিক তুরাব হত্যার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ঘটনার দিন পুলিশের অনেকে গুলি ছুড়েছেন। কিন্তু তুরাব কার গুলিতে মারা গেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই।’
গত ১৯ জুলাই দুপুরে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। এ সময় বিএনপি আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের ছোড়া গুলিতে দায়িত্বরত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব আহত হন। পরে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় এর আগে সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। এরপর এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেরপুর থেকে সাদেক কাউসারকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে সিলেট আদালতে নেওয়া হয়। তখন তাকে আদালত ভবনে বিক্ষুব্ধ কয়েকজনকে লাথি-ঘুষি মারতে দেখা গেছে। আদালতে নেওয়ার পর তুরাব হত্যা মামলায় সাদেক কাউসার দস্তগীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
সাদেক কাউসার আন্দোলন চলাকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি শেরপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার দিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির মিছিলে পেছন থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার একজন কনস্টেবলের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে একের পর এক নিয়ে গুলি ছুড়ছেন। সেখানে গুলিতে আহত হয়ে সাংবাদিক তুরাব ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার দেহে ৯৮টি স্প্লিন্টার পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ প্রথমে মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই সময়ে নিহত তুরাবের ভাই থানায় মামলা করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১-এর বিচারক আবদুল মোমেনের আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ (জাবুর)। মামলাটি কোতোয়ালি থানাকে রেকর্ড করতে নির্দেশ দেন আদালত। ওই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীর, উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ঘটনার পর সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার ও উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখকে সিলেট থেকে বদলি করা হয়। গত ৮ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে তুরাব হত্যা মামলার নথিপত্র কোতোয়ালি থানা পুলিশ পিআইবিকে বুঝিয়ে দেয়।