সিরিয়ার নির্যাতিত মানুষের মুক্তি ও আমাদের শিক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
শায়খ আব্দুল কাইয়ুম
সিরিয়ার প্রাচীন নাম হচ্ছে ‘শাম’ । আল্লাহ তায়ালা এই শামকে ‘আরদুল-মাহশার’ বলে ঘোষণা করেছেন । অর্থাৎ হাশরের ভূমি । হাদীস অনুযায়ী এখানেই হাশরের ময়দান হবে । তবে বর্তমান সিরিয়া নামক দেশটিই শুধু ‘শাম’ ছিলো না । শাম ছিলো একটি বৃহত্তর অঞ্চল । ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্দান, সিরিয়া সবগুলো দেশই শাম অঞ্চলের অন্তর্গত ছিলো। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, শাম দেশের মানুষ যদি নষ্ট হয়ে যায়, মুসলমানগণ যদি ইসলাম থেকে দুরে সরে যায়, তাহলে উম্মতের মধ্যে কোনো খায়ের বাকি থাকবে না। তিনি বলেছেন, এই শামের লোকদের মধ্যে যত দুর্বলতা থাকুক, তারা ইসলামকে ধরে রাখবে । তারা নিযার্তিত হলেও ইসলাম ছেড়ে দেবেনা। তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিজয় দেবেন । সারা বিশ্বের মানুষ তাদেরকে বর্জন করলেও আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাদের মুক্তি দেবেন ।
রাসুল (সাঃ) হাদীসে বলেছেন, তোমরা পারলে শাম দেশে যাও । সেখানে বসবাস করো। আল্লাহ তায়ালা আমাকে গ্যারান্টি দিয়েছেন । যখন ফেতনা শুরু হয়ে যাবে। তখন ঈমান শাম দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কেয়ামত পর্যন্ত একদল মানুষ সেখানে দ্বীন ইসলামকে ধরে রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যাবে । বাতিলের কাছে কখনো আত্মসমর্পন করবে না। আল্লাহ তায়ালা অবশেষে ভয়াবহ রক্তপাতের পর সিরিয়ার মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের গত ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবারের জুমার খুতবায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম । তিনি মুলত সিরিয়ায় গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে সিরিয়ার মানুষকে আল্লাহ যে মুক্তি দান করেছেন সে বিষয়েই কথা বলছিলেন।
তিনি বলেন, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহ তায়ালা যে অঞ্চলের মানুষকে এতো মর্যাদা দিলেন, তাদের ওপর এতো নজিরবিহীন নির্যাতন কেন? এতো মোবারক একটি জায়গা, এতো সম্মানিত মানুষ । তাহলে তাদের ওপর এতো অত্যাচার, এতো রক্তপাত কেন ঘটলো।
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা তো মুমিনদের বলেছেন, তাদেরকে তিনি পরীক্ষা করেই ছাড়বেন। অনেক পরীক্ষার কথা বলেছেন । তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আমি মানুষকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণহানির মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। পরীক্ষার মধ্যে যারা পাশ করবে তাদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন।
সিরিয়াবাসী ধর্য্য ধরে কয়েক যুগ ধরে পরীক্ষা মোকাবেলা করেছে । তারা যে এতো নির্যাতিত হওয়ার পর বিজয় পেলেন সেখান থেকে শিক্ষিনীয় কিছু বিষয় আছে । তা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারিকে কিছু সময় দেন । জালিমকে তিনি একেবারে ছেড়ে দেন না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি জালিমকে রশি ঢিলা করে দিই । অবকাশ দেই। সুযোগ দিই। সে কি জানে আমার পরিকল্পনা কত শক্ত। তার রশি যে আমার হাতে ধরা আছে । তারা কত ষড়যন্ত্র করে। আর তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় আমিও পরিকল্পনা করতে থাকি। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা অনেক শক্তিশালী । তাদের যদি এতো ষড়যন্ত্র থাকে, এতো পরিকল্পনা থাকে যে তারা একটি পাহাড়কে সরিয়ে দেবে, আপন জায়গা থাকতে দেবেনা। এমন শক্তিও যদিও মানুষ কোনোদিন যোগাড় করে তার পরেও আল্লাহ তায়ালার কাছে এটা কিছুই নয়। তিনি তা অদৃশ্য করে দিতে পারেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি এভাবে বহু জাতিকে ধ্বংস করেছেন। যারা জুলম চালিয়ে মানুষকে নির্যাতিত করেছে, তদেরকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা এভাবে জালিমকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। আর মজলুমকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দেরিতে হলেও তোমাকে একদিন সাহায্য করবো। পবিত্র কুরআনেই তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মানুষ যখন সুযোগ পায়, যখন সে শক্তিশালী হয়, তখন দুর্বল মানুষকে জুলম করতে থাকে। জুলুমের বড় বড় ঘটনা থেকে যদি আমরা ব্যক্তিগত জীবনে ফিরে আসি, তাহলে দেখবো পারিবারিক জীবনেও আমরা জুলম করি । স্বামী জুলুম করছে স্ত্রীর উপর । স্ত্রী জুলুম চালাচ্ছে স্বামীর উপর । মানুষ ইনসাফ করে চায়না । সুযোগ থাকলে জুলম করবেই। আমরা সিরিয়া থেকে শিক্ষা নিই । জুলুমের পরিনতি ভয়াবহ। আমরা যেন সবধরের জুলম নির্যাতন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি। কারো ওপর জুলম নির্যাতন না করি।
আমরা তওবা করি। ব্যক্তিগতভাবে যদি কারো ওপর জুলুম করি তাহলে তার কাছে ক্ষমা চাই। আল্লাহর কাছে মাফ চাই। ব্যক্তির কাছে মাফ চাই । জুলম থেকে সরে আসি। সবসময় ইনসাফের ওপর চলি । কেউ কারো হক নষ্ট করিনা। কেউ কারো উপর অত্যাচার করিনা । কেউ কারো জায়গা জমি দখল করিনা । আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের জুলুম থেকে নিরাপদ রাখেন। আমিন।