‘ইসলামোফোবিয়া সচেতনতা মাস’ সম্মেলনে মেয়র লুৎফুর রহমান : টাওয়ার হ্যামলেটসকে সব ধরনের ঘৃণা থেকে মুক্ত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৪
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল, ইস্ট লন্ডন মসজিদ, কাউন্সিল অব মস্ক এবং দারুল উম্মাহর সহযোগিতায় ১৮ নভেম্বর সোমবার টাউন হলের গ্রোসার্স উইংয়ে আয়োজিত “সিডস অব চেঞ্জ” নামের ইভেন্টে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শতাধিক ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
নভেম্বর মাসজুড়ে দেশব্যাপি উদযাপিত ইসলামোফোবিয়া সচেতনতা মাসের অংশ হিসেবে এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সমাজে মুসলমানদের ইতিবাচক অবদানের উদাহরণ তুলে ধরা।
অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে ইসলামোফোবিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন এবং মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রতিনিধি, কাউন্সিল সদস্য এবং অন্যান্য অতিথিদের বক্তব্য শুনেছেন। ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন অংশগ্রহণকারী সকলে। এই আলোচনা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হবে।
সম্মেলনে বক্তৃতাকালে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেছেন, “টাওয়ার হ্যামলেটসের ৯০ পার্সেন্ট বাসিন্দা মনে করেন বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা মানুষ একসঙ্গে ভালোভাবে বসবাস করেন । তবে, অন্যান্য কমিউনিটির মতো, আমাদের বাসিন্দারাও কখনও কখনও ইসলামোফোবিয়া এবং অন্যান্য ঘৃণামূলক অপরাধের শিকার হন।
মেয়র বলেন, “আমরা আমাদের বারাকে সব ধরনের ঘৃণা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । এটি অর্জন করতে আমরা আমাদের ‘টাওয়ার হ্যামলেটস নো প্লেস ফর হেইট ফোরাম,’ ‘হেইট ইনসিডেন্ট কেস প্যানেল’ এবং ‘হেইট ক্রাইম চ্যাম্পিয়নস’ এর মাধ্যমে কাজ করছি, যারা পুলিশ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলে নিশ্চিত করেন যে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীরা যেন সকল ধরনের সহায়তা পান এবং সব ধরনের ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
‘সিডস্ অব চেঞ্জ’ অর্থাৎ পরিবর্তনের বীজ শীর্ষক এই বিশেষ এই সম্মেলনে সমাজে ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে বোঝা বা ধারনা লাভের ওপর তত্ত্ব ভিত্তিক আলোচনা তুলে ধরেন লিডস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অব সোশ্যাল থিওরি এন্ড ডিকলোনিয়াল থট্, প্রফেসর সালমান সাইয়িদ। ‘মিডিয়া এন্ড ইসলামোফোবিয়া’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ জার্নালিস্ট এবং ব্রডকাস্টার পিটার ওবর্ন ।
ইসলামোফোবিয়ার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ কিভাবে সাড়া দেয় এবং স্থানীয়ভাবে গৃহিত উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন মেট্রোপলিটন পুলিশ এর চিফ ইন্সপেক্টর ইশতিয়াক মুনিব । ফেইথ গ্রুপের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন টাওয়ার হ্যামলেটস্ ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ার এবং ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের প্রোগ্রামস ম্যানেজার সুফিয়া আলম। এছাড়া ইসলামোফোবিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়া দুই জন তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সম্মেলনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজি এন্ড কমিউনিটিজ এর কর্মকর্তা আফাজল হক ও আয়ান গুলেইড।
এই সম্মেলনের পাশাপাশি, কাউন্সিল পুরো বারা জুড়ে ইভেন্ট আয়োজন করেছে, যেখানে ইসলামোফোবিয়া এবং অন্যান্য ঘৃণামূলক অপরাধ রিপোর্ট করার পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের সহায়তার বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং বাসিন্দাদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে যে কীভাবে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়।
কেবিনেট মেম্বার ফর সেইফার কমিউনিটিজ, কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী, বলেছেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন অনেক মানুষকে জানি যারা ইসলামোফোবিয়ার শিকার হয়েছেন । একজন মানুষকেও যেন এই সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্যই এমন ইভেন্টগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের আয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং ঘৃণা জনিত কোন আচরণ আমাদের বারাতে বরদাস্ত করা হবে না, সেই বার্তা দেয়।” । ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কিত যেকোনো ঘটনা ১০১ অথবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে রিপোর্ট করতে সম্মেলনে আহবান জানানো হয়।