একগুচ্ছ স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২৪
আহমেদ ইকবাল চৌধুরী:: ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বা ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধ দেখিনি। কিন্ত ১৯৯০ ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান দেখেছি। এবং ২০২৪ এর মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারলেও ডিজিটাল মিডিয়ার বদৌলতে দেখতে পেরেছি। এ যেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। এ এক নতুন স্বাধীনতা। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে কিভাবে দেখতে চান- এ নিয়ে ১৮ কোটি মানুষের সাথে আমি ও নতুন দিনের স্বপ্ন দেখি। আসন্ন অন্তবর্তিকালীন সরকার বা পরবর্তি নির্বাচিত সরকারের প্রতি আমার কিছু ভাবনা, দাবী বা আবদার নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১- এ মহুর্তে সবচেয়ে জরুরী কাজ হলো শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে এনে আইনের শাসন প্রতিষ্টা করা। দুষ্কৃতীকারীরা যে অরাজকতা, লুটপাট, হামলা করছে, তা খুবই পরিকল্পিত ভাবে আমাদের ছাত্র সমাজের এ অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য করছে। এতে অতি উৎসাহী হয়ে কোন দলীয় নেতা কর্মী জড়িত থাকলে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।ভিন্নমতের প্রতি সম্মান রেখে প্রতিহিংসা পরায়ন না হয়ে সকলের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা না হলে যে লাউ সেই কদু।
২- শহীদদের একটি চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তত করে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দিতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিলে প্রবাসীরা এ প্রকল্পে সহযোগীতা করবেন বলে আমার বিশ্বাস। এতে মৃত পুলিশ ভাইদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, কেননা এরাও এ মাটির সন্তান। হয়তবা শ্বৈরাচারের চাপিয়ে দেওয়া আদেশ পালন করতে গিয়ে অনেক নিরীহ পুলিশ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩- যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং কেউ পংগুত্ব বরণ করলে তার যোগ্যতা অনুয়ায়ী তাকে কাজের ব্যবস্থা করে পরিবারের জীবিকার্জনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
৪- ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ঢাকা সহ প্রত্যেক জেলায় শোকরানা/ আনন্দ উৎসব বা Appreciation Day পালন করলে ছাত্র ছাত্রীরা উজ্জীবিত থাকবে। আমাদের ছোট ছোট ভাই ও বোনেরা এবং কোমলমতি কয়েকটি শিশু যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তা কিন্ত বিরল।
৫- দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের এ মহানায়কদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার অনুরোধ করছি। দেশের এ ক্রান্তিকালে দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনী ও সেনাপ্রধান যে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।সেনাপ্রধাকে যথার্থ সম্মাননা দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
৬- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্ররা রাজনীতি করবে তাদের অধিকার নিয়ে , প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে সরকারের সাথে দরকষাকষি করবে। লেজুবৃত্তিক রাজনীতি নয়, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে একটি সুন্দর দেশ গঠনে দলীয় রাজনীতি করতে পারে।
৭- স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম/ সিলেবাস পরিবর্তন করে একটি মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এস এস সি পর্যন্ত সকল ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামুলক করতে হবে।
৮- উচ্চশিক্ষা যেমন অনার্স ও পাস, এ দুই ধরনের শিক্ষা বিলুপ্ত করে শুধু অনার্স ব্যবস্থাই চালু রাখা শ্রেয়। এ দুই ধরনে সার্টিফিকেট চাকুরীর ক্ষেত্র বৈষম্য তৈরী করে, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে বলে মনে হয় না।
৯- লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক উচ্চপদস্থ কর্মরত। তাদেরকে স্ব সম্মানে নিজ দেশে ফিরিয়ে দিয়ে আমার দেশের শিক্ষিত, মেধাবী বেকারদের চাকুরীর ব্যবস্থা করতে হবে।
১০- পুরো বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রকৃত অর্থে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রবর্তনের লক্ষে কাজ করতে হবে। উঁচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিতে হবে।
১১- বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিচার করতে হবে। খুনিদের ছাড় দিলে চলবে না।
১২- সকল প্রকার মানবতাবিরোধী আপরাধ, যেমন গুম – খুনের বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে স্বীকৃত একটি ট্রাইবুনাল গঠন করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
১৩- সকল পলাতক অপরাধীদের অতি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এবং দেশ থেকে কেউ যাতে পালাতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৪- সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনাহাকে ফিরিয়ে এনে রাজসাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করে কথিত যুদ্ধপরাধের বিচারের রি-ট্রায়েল করতে হবে। যা হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে।
১৫- তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকারী বিচারপতি খাইরুল হককে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। শেখ হাসিনা ফ্যাসিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান সবচেয়ে বেশী।
১৬-দেশে এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে, যা নিয়ে প্রতি ৫ বছর অন্তর আমাদেরকে বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জীবন দিতে না হয়। সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে যা একটি জাতীয় দলিল হিসাবে কাজ করবে। এই পদ্ধতির Loophole এর কারণে আবার যেন কেউ শ্বৈরশাসক হয়ে না উঠে।
১৭- জাতীয় সংসদকে যুক্তরাজ্যের আদলে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করতে হবে।
১৮- দল এবং সরকার Separate entity. দলীয় প্রধান সরকার প্রধান হলে তাকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।
১৯-দুই টার্মের বেশী কেউ একাধারে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
২০- প্রবাসীদের রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
২১- বিমান বন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের জায়গা জমি কেনা বেচা সহজ উপায়ে করতে পারে, আইডি বা NID এর যাতাকলে নিষ্পেষিত হতে না হয়। তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে।
২২- প্রবাসী বান্ধব স্বচ্ছ Investment পদ্ধতি চালু করতে হবে। যাতে প্রবাসীরা নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হয়।
২৩- প্রবাসে দলীয় লেজুড্ ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রাবাসীদের রাজনীতি হবে প্রবাসীদের অধিকার নিয়ে। কোন মন্ত্রী এমপি প্রবাসে আসলে দলীয় গন্ডির বাহিরে গিয়ে তিনি যেন সার্বজনীন হয়ে উঠেন।
২৪- দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করতে হবে। একেবারে উপর থেক নীচ পর্যন্ত দুর্নীতি নির্মুল করতে হবে। দলীয় প্রীতি, স্বজন প্রীতি বন্ধ করতে হবে।
২৫- পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা PSC কে ঢেলে সাজাতে হবে।
২৪- বিগত ১৫ বছরে আবেদ আলী বা তার সহযোগীদের ধারা যারা চাকুরী পেয়েছেন তাদের ছাঁটাই করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সৎ ও মেধাবীদের রিক্রুট করতে হবে।
২৬- ৫ই আগষ্ট শ্বৈরাচার পতন দিবস বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ছুটি ঘোষণা করতে হবে।
২৭- পাচার হয়ে যাওয়া সকল টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং পাচারকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাদের দেশদ্রোহী হিসাবে বিচার করতে হবে।
২৮- বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া টাকার সুষ্ঠু তদন্ত করে জাতির সামনে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। এবং দোষীদের আলাদা ট্রাইবুনাল করে বিচার করতে হবে।
লেখক: ব্যাংকার, লন্ডন প্রবাসী