ভোটে রেকর্ড সৃষ্টি করলেন মাসরুর : ‘মানুষের ভালোবাসায়ই আমার জীবনের বড় পাওয়া’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০২৪
লন্ডন, ১১ জুলাই ২০২৪ : আজমাল মাসরুর। একজন ইমাম ও টিভি উপস্থাপক। বিশেষ করে মূলধারার মিডিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মুসলিম ইস্যুতে বলিষ্ট মতামত দিয়ে দেশে বিদেশে অর্জন করেছেন সুখ্যাতি। মূলত ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত বেথনাল গ্রীন ও বো আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটদলের প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি রাজনীতিক হিসেবে কমিউনিটিতে আলোচনায় ওঠে আসেন। ওই নির্বাচনে তিনি লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলীর সাথে লড়ে ঘরে তুলেছিলেন ১০,২১০ ভোট। রুশনারা আলী পেয়েছিলেন ২১,৭৮৪টি। ১১ হাজার ৫৭৪ ভোটের ব্যবধানে রুশনারা বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হননি।
২০১৭ সালের আগাম নির্বাচনে ফের রুশনারা আলীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আজমাল মাসরুর। ওই নির্বাচনে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে পেয়েছিলেন ৩৮৮৮ ভোট। আর রুশনারা আলী জিতেছিলেন ৪২,৯৬৯ ভোটে।
এরপর আর তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেননা-এমনটিই ধরে নিয়েছিলেন কমিউনিটির মানুষ। কিন্তু মে মাসের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী রিশি সোনাক আকস্মিক সাধারণ নির্বাচনের ঘোষনা দিলে তিনি ফের তোরজোড় শুরু করেন। কমিউনিটির বিশিষ্টজনের মতামত নেন। অধিকাংশই তাঁকে প্রার্থী না হওয়ার পক্ষে মতামত দেন। তবে শেষতক টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি কোয়ালিশনের ব্যানারে নির্বাচনে প্রার্থী হোন আজমাল মাসরুর।
প্রচারণার প্রথম দিকে কমিউনিটির মানুষের তেমন সাড়া না পেলেও নির্বাচনের দিন তারিখ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তাঁর পক্ষে কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। প্রথমদিকে প্রচারণা চলাকালে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন-এমন কথা তাঁর ক্যাম্পেইনারদের মুখেও জোর গলায় বলতে শুনা যায়নি। কিন্তু শেষ সপ্তাহের প্রচারণাচালাকে টাওয়ার হ্যামলেটসের রাস্তাঘাট, অলি-গলিতে আজমাল মাসরুরকে নিয়ে আলোচনা ছিলো সরব। তাঁর পক্ষে একধরনের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন-এমন কথা অনেকের মুখেই শোনা যায়।
অবশেষে আসে ৪ জুলাই নির্বাচনের দিন। নির্বাচনী সেন্টারগুলো ঘুরেও দেখা যায় আজমাল মাসরুরের পক্ষে বেশ জোয়ার। রাতে এক্সেল সেন্টারে চলে গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গণনা। গণনায় চলে হাড্ডাহাডিড লড়াই। ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্তও বুঝা যায়নি কে নির্বাচিত হচ্ছেন। কাউন্টিং সেন্টার থেকে সবসময় খবর আসছিলো রুশনারা-মাসরুর নেকটু নেক। একধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৭ ঘণ্টা সময় কাটে দুই প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের।
গণনা চুড়ান্ত হলে প্রার্থী ও সমর্থকদের ডেকে নিয়ে কথা বলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ভারপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার স্টিভ হোসি। তখনই হাসি ফুটে ওঠেতে দেখা যায় রুশনারা আলীর বিষন্ন বদনে। দু’পক্ষের কর্মী সমর্থক ও সাংবাদিকরা অনুমান করতে পারেন রুশনারা আলীই শেষযাত্রায় ওঠে আসছেন। পঞ্চমবারের মতো বিজয় ধরে রাখছেন। ৫টা ৪০মিনিটে রিটার্নিং অফিসার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ স্টেইজে দাঁড়িয়ে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনা করেন। রোশনারা আলী লাভ করেন ১৫,৮৯৬ ভোট। আজমাল মাসরুর পান ১৪,২০৭ ভোট। অল্পের জন্য রক্ষা পান রুশনারা আলী। মাত্র ১,৬৮৯ ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হোন।
২০১৭ সালের নির্বাচনে যেখানে রুশনারা আলী ৩৯,০৮১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন, ৭ বছরের ব্যবধানে একই আজমাল মাসরুরের সাথে মাত্র ১,৬৮৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেন। মাত্র ৫ সপ্তাহের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে কিভাবে আজমাল মাসরুর কমিউনিটির মানুষের মন জয় করলেন। কিভাবে তিনি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলেন। লেবার পার্টির ভোটদূর্গ খ্যাত এই আসনে টানা চারবার নির্বাচিত লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলীকে কেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আবতীর্ণ হতে হলো-এটাই এখন কমিউনিটিতে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু। রোশনারা আলী লেবার সরকারের মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছেন। লেবার পার্টির সমর্থক-কর্মীরা দারুণ উল্লসিত। আনন্দিত কমিউনিটির সাধারণ মানুষও।
তবে কী কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আজমাল মাসরুর রুশনারা আলীর নিরাপদ ভোটদূর্গে কম্পন সৃষ্টি করেছিলেন-এটাই এখন টক অব দ্যা কমিউনিটি। কমিউনিটির সচেতন মানুষ মনে করেন, রোশনারা আলী সেই কারণটি খুঁজে বের করে তা মেরামত করার চেষ্টা করবেন। কিভাবে তিনি কমিউনিটির মানুষের কাছাকাছি আসতে পারেন, মনজয় করতে পারেন- সেই দিকেই গুরুত্ব দেবেন।
তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেওয়া বিবিসি পোস্ট ইলেক্টশন সাক্ষাৎকারে আজমাল মাসরুর বলেছেন, আমি বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী আসনের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ অভিভূত। আমি যখন, যেখানে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে গিয়েছি সব বয়সের মানুষ আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন। আমাকে তাঁরে ঘরে নিয়েছেন। খেতে দিয়েছেন। ওয়াশরুম ব্যবহার করতে দিয়েছেন। নির্বাচনে হারজিত আছে, থাকবে। এতে আমার কোনো দুঃখবোধ নেই। আমি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। এটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া।