নতুন রাজনীতির সূচনা হলো
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২৪
জেরেমি করবিন:: টেমে টেমে ওয়াঙ্গা ও আমি উত্তর লন্ডনের ফিনসবারি পার্কে একটি অফিস বিল্ডিং শেয়ার করতাম। একটি কক্ষে আমাদের নির্বাচনী টিম কাজ করত; ইজলিংটন উত্তরের বাসিন্দাদের অনেক সমস্যার সমাধানে ওরা সাহায্য করেছিল। পাশের কক্ষে ছিল কঙ্গোলিজ কমিউনিটি কাউন্সিল, যেটি কঙ্গোলি শরণার্থীদের সহায়তা দেয়। লোকেরা যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অফিসগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে। টেমে ইজলিংটনের বাসিন্দাদের জন্য একটি স্তম্ভ– বরাবরই তিনি তা ছিলেন এবং ইজলিংটনে এমন অসংখ্য লোক রয়েছে, যারা তাঁর কাছে ঋণী। গর্ব করে বলতে পারি, আমিও তাদের একজন।
উত্তর ইজলিংটনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় টেমে শত শত লোককে বলেছিলেন, আমাকে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে নির্বাচিত করতে। আমার পক্ষে ভোট চাইতে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য আমরা একটি ‘ফোন-ব্যাংকিং’ সিস্টেম স্থাপন করেছিলাম, তবে টেমে তা ব্যবহার করেননি। তাঁর কাছে পরিচিতজনের নম্বরসংবলিত যে বই ছিল, সেটি ধরে তিনি তাঁর বন্ধুদের এবং প্রতিবেশীদের একে একে ফোন করেছিলেন। স্বগোত্রীয়দের জন্য টেমে একজন নিবেদিত মানুষ। তাই আশ্চর্যের কিছু নেই যে তারা তাঁর কথা শুনেছিল।
এ নির্বাচন আসলে আমার ছিল না। এটি ছিল আমাদের সমাজের বিষয় এবং এ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল আমাদের সবার একসঙ্গে থাকা। টেমে এমন হাজার হাজার লোকের মধ্যে একজন ছিলেন, যারা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রচার অভিযানে তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন– ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বাড়ি বাড়ি যাওয়া, বাসিন্দাদের এবং দোকানে দোকানে পোস্টার অফার করা, পারিবারিক এবং অন্য সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা পাঠানো, সমাবেশ আয়োজন, কারুকাজ করা বা গভীর রাত পর্যন্ত যারা ডেটা এন্ট্রির কাজ করেছে, তাদের জন্য কাপের পর কাপ চা তৈরি করা।
আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে সেলফি তোলার জন্য স্কুল ও ট্রেনস্টেশনের বাইরে লিফলেট বিলি করিনি। কীভাবে একসঙ্গে আমাদের বিশ্বকে উন্নত করতে পারি, সে সম্পর্কে লোকদের তাদের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে উৎসাহিত করার জন্য আমরা লিফলেট বিলি করেছি। আমরা সমাবেশ করেছি, কারণ আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনী এলাকাজুড়ে মানুষ আমাদের তৃণমূলের প্রচারণায় উজ্জীবিত হোক এবং যোগ দিক। আমরা শেষ মুহূর্তের ভোট খুঁজতে উপাসনালয় ও কমিউনিটি সেন্টারে যাইনি। একে অপরের জীবনকে উন্নত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার– আমাদের মধ্যে কার্যকর সংহতি গড়তে আমরা তাদের কাছে গিয়েছিলাম। এই বন্ধন যে কোনো ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তৈরি বন্ধনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল।
উদযাপনের সময় অবশ্য শেষ। ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কাজ এখন শুরু করতে হবে। এখানে ইজলিংটনে আমরা রাজনীতি করার একটি নতুন উপায়ের বীজ রোপণ করছি। এর শুরু আমাদের প্রথম পিপলস ফোরাম দিয়ে। এ ফোরাম বাসিন্দাদের জন্য একটি সুযোগ এনে দিচ্ছে, যেখানে তারা প্রতি মাসে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে পারবেন। এখানে তারা আমাকে আগামী মাসের জন্য নির্দেশনাও দেবেন। এটি হবে স্থানীয় প্রচারণা, ট্রেড ইউনিয়ন, ভাড়াটিয়াদের ইউনিয়ন, ঋণগ্রস্তদের ইউনিয়নগুলোর একটা মঞ্চ; যেখানে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলন সংঘটিত করার সুযোগ মিলবে, যে আন্দোলনের লক্ষ্য হবে আমরা যে ধরনের বিশ্বে বাস করতে চাই, তেমন একটা বিশ্ব গড়ে তোলা। এখানে আমরা আমাদের উদ্বেগ ও আশা নিয়ে আলোচনা করব। একে অপরকে এভাবে ক্ষমতায়িত করব। সত্যিকারের গণতন্ত্র দেখতে এমনটাই হয়।
সাধারণ নির্বাচন জনগণের ক্ষমতার পূর্ণ প্রকাশের সুযোগ দেয়নি। বরং আমরা দেখেছি, বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভিভাবকরা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, যার পরিণামে উৎসাহ-উদ্দীপনাহীন এক ভূমিধস বিজয় আমরা দেখেছি। এই নির্বাচনে ১৯১৮ সালের পর দ্বিতীয়-সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে এবং ১৯৪৫ সালের পর দুটি প্রধান দল মিলিতভাবে সর্বনিম্ন ভোট পেয়েছে। একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ তখনই কেবল বাড়বে, যখন সরকার জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রকৃত পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়।
জনগণের এ শক্তি কোনো একটা দিকে যাবেই। এটিকে সংগঠিত করে একটি নির্দিষ্ট দিকে পরিচালনা করা দরকার। এ কারণেই আমাদের প্রচারণা তাদের নিয়ে, যারা আমাদের বিজয়ে দেশের প্রতিটি কোণে সামাজিক শক্তি গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। একবার আমাদের তৃণমূল মডেল অন্য কোথাও অনুসৃত হলে একটি নতুন আন্দোলন জন্ম নেবে, যা বিদ্যমান দ্বিদলীয় ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করবে। এ এমন এক আন্দোলন, যা শিশু দারিদ্র্য, অসমতা ও অন্তহীন যুদ্ধের একটি বাস্তব বিকল্প প্রস্তাব করে। চরম ডানপন্থিদের সত্যিকারের বিরোধিতা করে, যে রাজনীতি বিভাজনমূলক বক্তব্য দিতে একটু কুণ্ঠা করে না, একই সঙ্গে বর্ণবাদের পক্ষে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির বিরুদ্ধাচরণ করে।
এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিকেই ধাবিত হবে, সন্দেহ নেই। তবে একজন ব্যক্তিকে ঘিরে একটি নতুন, কেন্দ্রীভূত পার্টি তৈরি করার চেষ্টা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো। মনে রাখবেন, শুধু একবার নিচে থেকে শক্তি তৈরি হলে আমরা শীর্ষে থাকা লোকদের চ্যালেঞ্জ করতে পারব।
অন্য স্বতন্ত্র এমপিরা কবে, কোথায় সবচেয়ে কার্যকরভাবে প্রধান দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তা লক্ষ্য করুন। তারা নিজেদের জন্য এবং যারা উপেক্ষা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের শক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছিল তাদের শান্তি ও মানবতার দাবি। এটি সেই ধরনের শক্তি, যা সর্বত্র তৈরি করা দরকার। কোনো ভুল করবেন না, এটি কেবল শুরু। এটি এমন এক আন্দোলনের সূচনা, যা সারাদেশে সমাজের দ্বারা ও সমাজের জন্য বিজয় এনে দেয়। ক্ষমতায় থাকা লোকেরা বিপদে থাকা জনগণের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করে।
আমরা যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বলি, তা কোনো দিবাস্বপ্ন নয়। উত্তর ইজলিংটনে আমাদের সমাজ প্রমাণ করেছে, একটি সুন্দর বিশ্ব সম্ভব। আমরা প্রমাণ করেছি, আপনি একটি সুসংগঠিত তৃণমূলীয় প্রচারের মাধ্যমে দলীয় যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। আমরা প্রমাণ করেছি, আপনি ভিন্নমতকে চূর্ণ করতে চাইলে তার পরিণামও ভোগ করতে হবে।
আমরা প্রমাণ করেছি, টেমে টেমে ওয়াঙ্গার মতো লোক সঙ্গে থাকলে আমরা যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারাতে পারি এবং জিততে পারি।
জেরেমি করবিন: ব্রিটিশ লেবার পার্টির সাবেক নেতা এবং দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র এমপি