দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : সিলেটের ৭ প্রার্থীর দিকে লন্ডন প্রবাসীদের চোখ!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪
নুরুল হক শিপু :: শনিবার দিবাগত রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে যুক্তরাজ্যে বসতি গড়া ৭ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই এ সাতজনের দিকে এখন সিলেটের বিলেতিদের চোখ।
সর্বশেষ ব্রিটেনের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে রাজনীতি করা নেতাদের উপর আরো বেশি ভরসা বেড়ে গেছে প্রবাসী সিলেটিদের। অবশ্য এর শুরুটা হয়েছিলো যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিকুর রহমান চৌধুরীর হাত ধরে।
যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট গিয়ে বিএনপির দাপুটে নেতা এম. ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মনে স্বপ্নের প্রথম বিজ রোপণ করেছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তৎকালীন শীর্ষ নেতা শফিকুর রহমান। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রভাবশালী ও দাপুটে নেতা এম. ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে যুক্তরাজ্যবাসীর প্রথম স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী রাজনীতিবিদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। এর আগে তিনি দেশে কিংবা বিলেতে কোনো নির্বাচন করেননি। তখন শফিক চৌধুরীকে বিজয়ী করতে শত শত যুক্তরাজ্য প্রবাসী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেশে গিয়েছিলেন।
এরপর রাজনৈতিক গ্যাড়াকলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন শফিকুর রহমান। তবে মহাজোটের হয়ে এ আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবির্ভূত হন আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী- জাপা’র শীর্ষ নেতা ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। টানা দুইবার মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া এহিয়ার কপাল পোড়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তাঁকে পরাজিত করে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সিংহাসন দখল করেন আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মুকাব্বির খান।
সিলেট-২ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে রাত পোহানো (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রয়েছে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদেরই দখলে। এরই ধারাবাহবকতায় এবার এ আসনে লড়ছেন ৪ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান, জাপা প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী ও গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান।
সিলেট-৩ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর এ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিব। এবারও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে একই আসনে নির্বাচন করছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, আওয়ামী লীগের বাঘাবাঘা নেতাকে টপকিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক হাবিবের মনোনয়ন পাওয়া ও এমপি নির্বাচিত হওয়ার পেছনের কারিগর ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচিত হয়ে হাবিব নিজে জনসভায় আনোয়ারুজ্জামানের প্রতি কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করেন। এবারও তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের আলোচনায় রয়েছেন।
সিলেট-৬ আসনে দুজন প্রবাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে। তাঁরা হলেন- কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার হোসেন ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত এমপি ও বিরোধী দলীয় হুইপ জাপা নেতা, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সেলিম উদ্দিন।
সারওয়ার হোসেন কানাডা প্রবাসী হলেও যুক্তরাজ্যে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়-স্বজন থাকায় তিনিও রয়েছেন এখানে বসবাসরত সিলেটিদের আলোচনায়। আর সেলিম উদ্দিনের পরিবার-পরিজন ব্যবসা-বাণিজ্য সবই যুক্তরাজ্যে। শুধু সেলিম আর সারওয়ারেই আলোচনা চলছে এমন নয়; শফিকুর রহমান চৌধুরী, এহিয়া চৌধুরী, মোকাব্বির খান, মুহিবুর রহমান ও হাবিবের দিকে সিলেটি বিলেতিদের চোখ।
এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই ৭ প্রার্থীর মাঝে ঠাঁই হবে কয়জনের? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যারাতে।