‘সপ্তর্ষির’ নামকরণ ও আপসানা বেগম এমপির আর্লি ডে মোশন (লন্ডনের রোজনামচা-৩)
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২০
মোঃ রহমত আলী :: গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডন ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল “বাংলাভাষী” এর পাঁচ বছরে পদার্পন এবং এর সম্পাদক অলিউর রহমান খাঁন এর কাব্যগ্রন্থ ‘সপ্তর্ষি’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান নিয়ে এক মনোরম সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ও আলোচ্য বিষয় ছিল, কাব্যগ্রন্থ ‘সপ্তর্ষি’। এর বিষয়বস্তু যাই হউক, বইয়ে নামকরণ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল সবার মধ্যে। এ সময় অনেকেই বইটি হাতে পাওয়ার পর ‘সপ্ত’ এর অর্থ সবাই মোটামুটি অবগত হতে পারলেও এর সাথে অন্য অংশ ‘র্ষী’ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। তবে কবি এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়ার পর কিছুটা অবগত হন অনেকে। তিনি বলেন, ৭ জন মহিলা কবির কবিতা নিয়ে এই কবিতার বই রচিত হয়েছে বিধায় এর নামকরণ হয়েছে ‘সপ্তর্ষি’। কিন্তু এর পরেও কথা থেকে যায়। বিশেষ করে শেষ অংশটি অনেকের বোধগম্য হচ্ছিল না।
আসলে এ নামকরণটি হয়েছে সাতটি তারার সমন্বয়ে গঠিত নক্ষত্রমণ্ডল এর অনুকরণে। মহাকাশে উত্তরগোলার্ধ থেকে সারা বছরই এই নক্ষত্রগুলিকে দেখা যায়। উপমাহাদেশের জ্যোতির্বিদগণ সাত জন ঋষির নামে এই সাতটি নক্ষত্রের নামকরণ করেন। তাই এই নক্ষত্রমণ্ডলটি ‘সপ্তর্ষিমন্ডল’ নামে পরিচিত হয়। ঋষিগণ হচ্ছেন- ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত্য, অত্রি, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ ও মরীচি। আর সেটার অনুসরণেই এ বইয়ের নামকরণ বলে প্রতিয়মান হয়।
সে যাই হউক, এখানে যে সাতজন নারীর কথা বলা হয়েছে তাদের ৩জন থাকেন আমেরিকায় ও ৪জন থাকেন বৃটেনে। যারা বৃটেনে আছেন তারা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং কাব্যগ্রন্থ থেকে তাদের কবিতা পাঠ করার সুযোগ পেয়েছেন। আর এ কাব্যগ্রন্থের উপর আলোচনা করে তাদের ব্যাপাকভাবে উৎসাহিত করেছেন কবি মুজিবুল হক মনি। অন্যান্য বক্তাও তাদের বক্তব্যে বিলেতের এ কর্মময় জীবনে ঘরসংসার পরিচালনার সাথে সাথে এ কাব্যচর্চাকে এক অনন্য সাধারণ কাজ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তবে আমি আমার বক্তব্যে এতে একটি বাড়তি কথা যোগ করেছিলাম। আর তা হচ্ছে, স্থানীয় কাউন্সিল যেখানে বাংলা ভাষা চর্চার সূযোগকে সংকুচিত করতে যাচ্ছে সেখানে এ মহিলারা কাব্য রচনা করে কিছুটা হলেও এর সম্প্রসারণ কাজে ভূমিকা রাখছেন। সাথে সাথে তাদের পরিবারের অন্যান্যদের বিশেষ করে ছেলেমেয়েদেরকেও বাংলা চর্চায় উৎসাহিত করার কাজ করে যাচ্ছেন। আমার এ কথাটি অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জনমত’র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশাও সমর্থন করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস সেক্রেটারি আশিকুন্নবী চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: এমদাদুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতা কেএম আবু তাহের চৌধুরী, সাপ্তাহিক জনমতের সহকারী সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন, কবি আতাউর রহমান মিলাদ ও আফসার খান সাদেক প্রমুখ। কাব্যগ্রন্থ থেকে আবৃত্তি করেন উপস্থাপক ও আবৃত্তিকার নজমুল হোসাইন। অনুষ্ঠানে সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক জনাব তাইসির মাহমুদ উপস্থিত হলেও এদিন পত্রিকার ডেড লাইন থাকায় তিনি কিছু সময় পর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসেন। তবে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা তার বক্তব্যের সাথে সাথেই চলে আসায় তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে উপস্থিত হওয়া ক্লাবের বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী তার চেয়ারে আসন গ্রহণ করে শূন্যস্থান পুর্ণ করেন। এ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন প্রথম দিকে উপস্থিত থাকলেও পরে আর তাকে আর দেখা যায়নি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দেওয়ান সাঈম চৌধুরী। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন কবি আব্দুছ সালাম চৌধুরী আমার পাশেই বসা ছিলেন। তিনি তার একটি কাব্যগ্রন্থ ‘অনুভবের জানালা’ আমাকে প্রদান করলেন। আমি তখন তার অন্যান্য বই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম। তিনি জানালেন এ পর্যন্ত তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি প্রদত্ত বইটির কবিতাগুলিতে পেলাম, চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক বন্ধু আর স্বজনদের নানাবিধ কথামালার সংমিশ্রন। সাথে সাথে রয়েছে নিজেকে আয়নায় জাগ্রত রাখার অভিলাষ। এই বইটি আমাকে দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সময় সুযোগমত তা নিয়ে আলোচনার অভিলাষ ব্যক্ত করি। এদিন উক্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় আমি হোয়াইচ্যাপেল হয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানস্থল ব্রিকলেনের মাইক্রোবিজনেস সেন্টারে যখন যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ দেখতে পেলাম প্রচন্ড টান্ডার মধ্যে হোয়াইচ্যাপেল এর ‘সোনারগাঁও রেস্টুরেন্টে’র সামনে বেশ কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটু অগ্রসর হয়ে দেখলাম উক্ত রেস্টুরেন্ট থেকে গরম গরম জিলাপি ক্রয় করার জন্য মানুষের এ লাইন। আসলে রমজান মাস আসার আগেই এখানে এ লাইন দেখে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই। তাই একটা ছবি না তুলে পারলাম না।
গত সপ্তাহে আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত কমিউনিটির লোকজনের সাথে এগিয়ে এসেছেন পপলার এন্ড লাইম হাউজ আসনের নব নির্বাচিত এমপি আপসানা বেগম। তিনি এ সার্ভিসকে বহাল রাখার জন্য পার্লামেন্টে একটি ‘আর্লি ডে মোশন’ উত্থাপন করেছেন। বিষয়টি আমি চলার পথে না দেখলেও বিভিন্ন মিডিয়ায় তা দেখেছি ও পড়েছি।অবশ্য এ ব্যাপারে তার ভূমিকা নতুন নয়। এমপি নির্বাচিত হবার পূর্বেও এ সার্ভিস রক্ষার দাবীতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এটা প্রথম ভূমিকা। আর্লিডে মুশন হচ্ছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমন একটি বিষয় যা অন্যান্য এমপিদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করার একটি প্রক্রিয়া। তাই এ নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক হলে ব্যাপকভাবে এ আন্দোলনের পক্ষে মতামত ও চাপ সৃষ্টি হবে বলে আপসানার প্রত্যাশা আর এ জন্যই তার এ প্রচেষ্টা। তিনি ইতিমধ্যেই সমর্থন পেয়েছে ১০জন এমপি’র যারা এতে সাইন দিয়েছেন। তবে এর মধ্যে অন্য কোন ব্রিটিশ বাঙালি এমপির নাম বা সাইন দেখা যায়নি।
আপসানা বেগম লেবার পার্টি থেকে নবনির্বাচিত একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী এমপি। নিজ এলাকা তথা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পার্লামেন্টে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছেন। অতি সম্প্রতি তিনি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পেশিয়েল নীডস ইন এডুকেশনের শিক্ষার্থীদের ১২ মিলিওন পাউন্ড ‘সেন্ড ক্রাইসিস ইনভয়েস’ সম্বলিত একটি ব্যানার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশেও অংশ নেন। এ সময় মেয়র জন বিগসসহ অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ মেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তিনি টিএফএল শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া নিয়ে পার্লামেন্টের বাইরে এক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। তা ছাড়া আরো অনেকবিষয়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।
এদিকে যে কথাটি একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম সেটি হচ্ছে, যে পত্রিকায় ‘চলার পথে’ কলামটি লিখে যাচ্ছি সেই ‘সাপ্তাহিক দেশ’ পত্রিকার সম্পাদকের জন্মদিনের কথা। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না হওয়ায় তা আমার জানার সুযোগ হয়নি। তাই আমার পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ও শুভকামনা করছি।