নির্বাচনে লেবারের ভরাডুবির কারণ কী?
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
আবু আহমদ হাবিবুর রহমান :: লেবার লিডার জেরিমি করবিন একজন ভদ্র মানুষ। সাদাসিধে জীবনযাপনে তিনি অভ্যস্ত। তবে তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বিষয়টি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও লেবারের শ্যাডো বিচারমন্ত্রী রিচার্ড বার্গন করবিনের নিষ্ঠা ও শালীনতার প্রশংসা করেছিলেন। ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ইইউর সাথে লেবারের নিজস্ব পদ্ধতির বিষয়টি ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট। তিন মাসের মধ্যে পুনর্বার আলোচনা এবং ছয় মাসের মধ্যে গণভোট দিয়ে মানুষের রায় জানা, যা বৃটিশরা পছন্দ করেনি।
জেরিমি করবিন নর্থ লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। লন্ডনে সংখ্যালুঘু ও শ্রমজীবী লোকের বসবাস বেশি। দলীয়ভাবে লেবার পার্টি সবসময় সংখ্যালঘু ও মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে থাকতে চায়। সে হিসেবে লন্ডনের বেশির ভাগ মানুষ সবসময় লেবারকে ভোট দিয়ে থাকে। করবিনকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাইনরিটি ও মধ্যম আয়ের লোকদের প্রধান্য দিতে দেখা গেছে, যা উচ্চবিত্তরা ভালো চোখে দেখেনি।
১৯৩০ সালের পর লেবারের এমন ভরাডুবি কারণ নিয়ে এখন সর্বত্র চুলচেরা বিশ্লেষন চলছে। ব্যক্তিগভাবে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে চাই। যেমন- লেবারের নির্বাচনী মেনিফেস্টো ছিল অনেক বড়। এতোসব প্রতিশ্রুতি পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা কি আদৌ সম্ভব ছিলো? ইশতেহারে “ভোট ফর রিয়েল চেঞ্জ” সৌাগানের সাথে বাস্তবতার সামঞ্জস্য ছিলো কম। ইশতেহারে বেনিফিটের ব্যাপারে ছিলো বেশি উদারতা, তাতে করদাতারা খুশি হননি। বিশেষ করে বেনিফিট ক্যাপ তুলে নেয়া, ইউনিভার্সেল ক্রেডিট বন্ধ করা, বয়স্কদের বিনা খরচে সেবা দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি তুলে নেয়া, ভোট দেয়ার বয়স-সীমা ১৬ বছরে নিয়ে আসা, ফ্রি ব্রড ব্যান্ড চালুসহ অনেক অবাস্তব কথা বলা হয়েছে। ইশতেহারে সমাজের প্রতিটি সেক্টরের বিষয়ে বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। এসব পূর্ণ করতে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হতো।
নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে লেবার দলীয় প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারের মন জয় করার মতো কোনো সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেন নি। যে আসনগুলোতে লেবার সবসময় জিতে, ওইসব আসনে দলীয় বড় নেতাদেরকে কোনো ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। লন্ডন কেন্দ্রিক দলীয় বড় নেতাদের ক্যাম্পেইন মিডিয়াতে চোখে পড়েছে।
পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ব্রেক্সিট নিয়ে ইইউ থেকে বের হওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা সাধারণ জনগণ লুফে নেয়। তবে এখন দেখার বিষয় কনজারভেটিভ এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তাদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কীভাবে ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়ন করেন?
ইশতেহার মতে অতিরিক্ত ৩৪ বিলিয়ন পাউন্ড এনএইচএস (ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস) এর জন্য খরচ করবে কনজার্ভেটিভ। বিশ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার নিয়োগ দেবে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্যে। স্কুলের জন্য বরাদ্দ বাড়বে, সারাদেশে চল্লিশটি নতুন হাসপাতাল তৈরি হবে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বের সাথে একযোগে কাজ করে যাবে। বৃটেনবাসী দেখতে যায়, কনজার্ভেটিভ কি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করে না-কি আশ্বাসে আশ্বাসে আগামী ৫ বছর কাটিয়ে দেয়।
আবু আহমদ হাবিবুর রহমান : কমিউনিটি একটিভিস্ট, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।