রমজানুল মোবারক: হযরত আলীর ইফতার কেমন ছিল?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০১৯
মঈন চিশতী :: রোজা বা সিয়াম সাধনা আমাদের তাকওয়া শেখায়। তাকওয়া আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। এ তাকওয়ার গুণেই মানুষ রহমতপ্রাপ্ত হয়। রোজার গুণে তাকওয়া হাসিল হবে বলে কালামে পাকে আছে- লাআল্লাকুম তাত্তাকুন, যাতে তোমরা মোত্তাকি হতে পার। কিন্তু জীবনভর রোজা থেকেও মোত্তাকি হতে পারি না কেন? নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে।
বলা হয়েছে, কাদ আফলাহা মান তাজাক্কাহা- সেই সফলতা লাভ করেছে, যে আত্মাকে বিশুদ্ধ করতে পেরেছে। প্রকৃত শিক্ষা লাভেই আত্মা বিশুদ্ধ হয়। আর প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে প্রকৃত শিক্ষানগরীতে প্রবেশ করতে হবে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আনা মাদিনাতুল এলেম ওয়া আলী বাবুহা- আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী হল তার দুয়ার।’
হজরত আলী (রা.)-এর ঘরে রমজান কিভাবে পালিত হতো একটি ঘটনার উল্লেখে তা খুব সহজে বোঝা যাবে। কোনো এক রমজানে ইফতারির সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি ইফতারি করতে বসেছেন। কিশোর পুত্রদ্বয় ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন বাবার সঙ্গে বসেছে। সবার সামনে একটি করে রুটি। এমন সময় বাইরে মুসাফিরের হাঁক, ৩ দিনের ভুখা আমি। আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু খাবার চাই। হজরত আলী (রা.) নিজের রুটি ইমাম হাসানের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, বাবা যাও মুসাফিরকে খালি হাতে ফেরাতে নেই, আমার ভাগের রুটি দিয়ে এসো। ইমাম হাসান বলেন, ‘আব্বু আমার ভাগেরটিও মুসাফিরকে দিতে চাই।’ আলী বলেন, ‘মাশাআল্লাহ, দিয়ে দাও।
তাআওয়ানু আলাল বিররে ওয়াত্তাকওয়া। আল্লাহর হুকুমেই তো পরহেজগারি ও নেক কাজে উৎসাহ দেয়া’। বিষয়টি দেখে ছোট ছেলে ইমাম হোসাইন বলেন, আব্বু আমার ভাগের রুটিও দিতে চাই।
মাওলা আলী বলেন, বেশ তো দিয়ে দাও। মা ফাতেমা ছুটে এসে বলেন, তোমরা বাপ-বেটারাই কল্যাণের ভাগী হবে? আমি রাহমাতাল্লিল আলামিনের কন্যা হয়ে পিছে থাকব কেন? বাবা হাসান আমার ভাগের রুটিও নিয়ে যাও। এ দৃশ্য দেখে তাদের গৃহপরিচারিকা উম্মে ফাজ্জা দৌড়ে এসে বলে ভাইয়া হাসান আমার ভাগের রুটিও নিয়ে মুসাফিরকে দিয়ে দাও। নতুবা ইতিহাসে লেখা হবে নবীজির আহলে বাইত দানশীল ছিল, কিন্তু তাদের গৃহকর্মী কৃপণ ছিল।
এই ছিল নবীজির ঘরে বেড়ে ওঠা আলী এবং তার পরিবারবর্গের দানশীলতা। আমরা কী আমাদের ঘরোয়া পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করতে পারি না? আসুন বিষয়টি নিয়ে ভাবার সঙ্গে সঙ্গে এ রমজান থেকে শুরু করি দান।
আমরা রকমারি ইফতারের একটি অংশ যদি নিঃস্ব অসচ্ছল সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বরাদ্দ রাখি তা হলেই আমাদের রোজা সার্থক হবে। আমাদের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়ে এ জীবন তাকওয়ায় পূর্ণ হবে।