‘জনতার’ শাহাব উদ্দিন থেকে ‘মন্ত্রী’ শাহাব উদ্দিন : সস্তা বিশেষণের বাজারে ‘মৌলিক সোনা’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯
দেলোয়ার হোসাইন:
রাজনীতির পাঠশালায় আমি উদাসীন ছাত্র। যতটা আগ্রহ নিয়ে পাঠে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করি, ঠিক ততটাই আশাহত হই। বুঝতে পারি- ‘সমালোচনা’ শব্দটা এখানে নিষিদ্ধ। সমালোচনা নিতে পারাটাও একটা যোগ্যতা। মত প্রকাশের অধিকার (স্বাধীনতা) হিসেবে কোনো বিষয় নিয়ে কিছু বললে বা লিখলে ‘ইনাদের’ খুব ‘লাগে’। তাই পিছনের বেঞ্চে বসে থেকে নিজেই নিজেকে অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করি! তবে রাজনীতির মঞ্চ থেকে নয়, জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে আমারও কিছু বলার আছে…
গত ৩০ ডিসেম্বর রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ‘নিরঙ্কুশ জয়’ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত ২৮৮ জন সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন। তারপর আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা নিয়ে। সারাদেশের খবর ঠিক জানি না, তবে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে মহাজোট থেকে নির্বাচিত ১৭ জন সংসদ সদস্যের প্রায় প্রত্যেকেই ‘মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমানে ঝড় তুলেন তাদের সমর্থকেরা! ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে বিষয়টা নিয়ে অনেকেই ‘ট্রল’ করতে শুরু করেন!
সব গুঞ্জন আর খবরকে ছাপিয়ে গত ৬ জানুয়ারি রোববার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রীর তালিকা প্রকাশ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম। নতুন মন্ত্রিসভায় সিলেট বিভাগ থেকে তিনজন পূর্ণ মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীদের নামের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট সূত্রে মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন তাদের নাম গণমাধ্যমে চলে আসে। এরপর থেকে অভিনন্দনের বন্যায় ফেসবুকের টাইমলাইন এক প্রকার ভেসে যায়! গত ৭ জানুয়ারি সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার ৪৭ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন।
তিনজন পূর্ণ মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসন থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন। লেখার শিরোনামটা তো তাঁর নামেই, তাই…। ‘বড়লেখা-জুড়ী’র ইতিহাসে তিনি হলেন- প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী। এর আগে ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সাবেক তিনবারের সাংসদ এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে বড়লেখা-জুড়ী’র ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছিলেন। আর চারবারের সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাসকে পূর্ণতা দিলেন। তাই ‘মন্ত্রী’ মো. শাহাব উদ্দিনকে জনতার কাতার থেকে অভিনন্দন।
মন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার যাত্রা গত ৭ জানুয়ারি সোমবার থেকে শুরু করলেন শাহাব উদ্দিন। এর আগে টানা তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তিনবার সংসদ সদস্য (বর্তমান মেয়াদ বাদ দিয়ে) ও হুইপ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। এবার মন্ত্রী হিসেবে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার পালা…
ব্যক্তি শাহাব উদ্দিন থেকে শুরু করে হুইপ শাহাব উদ্দিনকে অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়। রাজনীতির মঞ্চে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মুখে সেটা আমরা অনেক বার শুনেছি। তবে সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীর মুখে ‘লিডার’ নিয়ে এমন বিশেষণ বাজারে সস্তা! কিন্তু শাহাব উদ্দিনের বেলায় তা মৌলিক। তিনি ‘জনতার নেতা’, মাটি ও মানুষের নেতা। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তাঁর কোনা ‘দাগ’ নেই। এমন কী তাঁর কোনো প্রতিপক্ষও নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এ নির্বাচনী আসনে অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন, কিন্তু তাঁর সম্মানে আর কেউ দলীয় মনোনয়ন কিনেননি। যা বড়লেখা-জুড়ীর ইতিহাসে ‘বিরল’। একজন শাহাব উদ্দিন আছেন বলে বড়লেখায় আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে কোনো দলীয় কোন্দল নেই। তবে সারাদেশের মতো বড়লেখা-জুড়ীতে অনেক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। প্রতিপক্ষ দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেটা আলাদা প্রসঙ্গ..।
গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের সাথে আমাদের অনেক কথা হয়। দলীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অনেক বিষয় আছে, কিন্তু শাহাব উদ্দিনের বেলায় আজ পর্যন্ত কারো মুখে কোনো ধরণের সমালোচনা শুনিনি। সবাই একবাক্যে বলেন- ‘ভালো মানুষ’। এটা শাহাব উদ্দিনের ‘নিজস্বতা’ আর আমাদের অহংকার! তাঁর সরকারের সময় (চলমান) এ নির্বাচনী আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমরা নিজেদের চোখেই দেখেছি। তাই শাহাব উদ্দিনকে ‘মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই’র দাবি ছিলো যথার্থ।
আপনার কাছে দুই উপজেলার মানুষের অনেক দাবি আছে। আমার আছে, আমাদের আছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী এ নির্বাচনী এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। যার বেশিরভাগই এখনো এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট ওর্ডার) হয়নি। আশা করি এদিকে একটু নজর দিবেন। ‘মন্ত্রী’ শাহাব উদ্দিনের সফলতা কামনা করছি।
লেখক: কবি ও সংবাদিক, সিলেট প্রতিনিধি সাপ্তাহিক দেশ, লন্ডন।