দৈনিক আট গ্লাস পানির প্রয়োজন নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০১৮
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল : দৈনিক আট গ্লাস বা দুই লিটার পানি পান করতেই হবে এমন কথা নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি অপ্রয়োজনীয় বরং এ ধরনের অভ্যাস বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল গত শুক্রবার এ-সংক্রান্ত বিষয়ে পাঁচজন বিজ্ঞানীর মতামত প্রকাশ করেছে। এত দিনের প্রচলিত ধারণাটি বিজ্ঞানীরা বাতিল করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, বরং পানি পান করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। যেটুকু পানি পান করলে প্রস্রাবে হলুদাভাব কেটে স্বচ্ছতা আসে তা-ই একজন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়, এর বেশি প্রয়োজন নেই। অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের উপপ্রধান কারেন ডাইয়ার বলেছেন, শুধু পিপাসা পেলেই পানি পান করা উচিত। আপনার প্রস্রাবের রঙের ওপর নির্ভর করবে আপনার পানি পান করার পরিমাপ। আপনার উদ্দেশ্য হবে আপনার প্রস্রাবের রঙ হালকা হলুদাভাব রাখা। যদি প্রস্রাবের রঙ কিছুটা গাঢ় হয় তখন বুঝতে হবে আপনার ভেতরটা শুকিয়ে গেছে (ডি-হাইড্রেটেড)। তখন কিছুটা বেশি পানি পান করুন এবং পরিষ্কার হয়ে গেলে আর বেশি পান করা যাবে না। বেশি পানি পান করা বিপজ্জনক হতে পারে। আপনার কিডনিই মস্তিষ্ককে বলে দেবে আপনার পানি পানের প্রয়োজনীয়তা।
ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার এবং অ্যাকাডেমিক গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট ভিনসেন্ট হো বলেন, দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার প্রয়োজন নেই। ১৯৪৫ সালে ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্স, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড’ ঠিক করে দিয়েছিল একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আড়াই লিটার পানি প্রয়োজন আর্দ্রতা হারিয়ে যায় এমন পরিবেশে। আমরা খাবার থেকে প্রচুর পানি পান করি। যেমন ফুলকপি বা বেগুনে ৯২ শতাংশ পানি থাকে। এর বাইরে দিনে আট গ্লাসের বেশি পানির প্রয়োজন নেই।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিপি ও সিনিয়র লেকচারার মাইকেল ট্যাম বলেন, ডায়রিয়া বা বমি না হলে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য আট গ্লাস পানির বেশি দরকার নেই। ব্যায়াম করলে অথবা গরমের দিনে অতিরিক্ত ঘামে বেশি পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আমরা খাবার থেকেও পানি পেয়ে থাকি। এর বাইরে কোমল পানীয়, ফলের রস অথবা সতেজ ফল ও শাকসবজি থেকেও আমরা পানি পেয়ে থাকি। এ ছাড়া স্নেহ, শর্করা বা আমিষজাতীয় খাবার শক্তিতে পরিণত হওয়ার পরও দেহে পানি উৎপাদন করে থাকে। মাইকেল ট্যাম বলেন, আট গ্লাস পানি পান করতে হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়ম নয়, কেবল পিপাসা পেলেই পানি পান করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্র্নের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্স গবেষণা ফেলো জন বার্টলেট বলেন, দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাহিদা একজনকে পানির প্রয়োজনীয়তা ঠিক করে দেয়। একজন মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঠিক করে দেবে তার দেহে কতটুকু পানি প্রয়োজন। এটা আট গ্লাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। গবেষণা বলছে যে দেহে সামান্য পানি শূন্যতা (ডি-হাইড্রেশন) দেখা দিলেই মানুষের মানসিক ও শারীরিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যে মানুষটা খুব বেশি কার্যকর (শারীরিক পরিশ্রম করেন) এবং যে উষ্ণতম পরিবেশ বাস করেন তার পানির চাহিদা একটু বেশিই থাকবে।
নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব স্পোর্টস, এক্সারসাইজ অ্যান্ড নিউট্রিশনের সিনিয়র লেকচারার টবি মান্ডেল বলেন, আপনার শরীরে কতটুকু পানি প্রয়োজন তার নিরূপণের অনেক দিক রয়েছে। আপনার শরীরের আকার বা আপনি কতটুকু ঘামেন এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কত, আপনি গর্ভবতী বা আপনার দুগ্ধদান অথবা আপনার খাদ্যের মানের ওপর নির্ভর করে আপনি কী পরিমাণ পানি পান করবেন। আপনার প্রস্রাবের হলুদ রঙ অথবা প্রস্রাবের রঙহীনতা ঠিক করে দেবে আপনার পানির প্রয়োজনীয়তা। প্রস্রাবে কোনো রঙ না থাকলে বুঝতে হবে যে আপনি যথেষ্ট পানি পান করছেন। অতিরিক্ত পানি পান শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে বলে জানান টবি মান্ডেল।