শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ : বিশৃংখলা কাম্য নয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
মো. রহমত আলী:
গত শুক্রবার ছিল মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষ্যে রাত বারোটার পর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের সামনে সবাই সমবেত হন। উদ্দেশ্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। তাই স্বভাবতই এখানে ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু ছিল সেটা প্রত্যক্ষদর্শীরা ভালভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো সেখানে বাংলাদেশের নদীগর্ভ থেকে জেগে উঠা চর দখলের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর এ চর দখলের দুইটি পক্ষ হচ্ছে আমাদের চিরচেনা সে দু’টি রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারটি দখল করে আছেন। অন্য একটি দলের নেতাকর্মীরা সেখানে পৌছার চেষ্টা করছেন। সাথে সাথে গগনবিদারী শ্লোগান ও হর্ষধ্বনি আকাশ বাতাস মুখরিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শহীদ মিনার কমিটির নেতৃবৃন্দ অসহায়ের মতো পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। মনে হলো এই বুঝি হাতাহাতি থেকে মারামারি শুরু হয়ে যায়। তাই উপস্থিত অন্যরা সতর্কতা অবলম্বন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
অনেক্ষণ এভাবে চলার পর উভয় দলের কিছু সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তাদেরকে শান্ত হওয়ায় ও শহীদ মিনার বেদি থেকে সরে গিয়ে অন্যান্যের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু কে শুনে কার কথা। শেষ পর্যন্ত লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিজেরাই শহীদ মিনার স্থলে গিয়ে অনেকটা জোর করে তাদেরকে সেখান থেকে সরাতে চান। কিন্তু এর পরও তাদের নিভৃত হতে দেখা যায়নি। শহীদ মিনারস্থল থেকে কিছুটা নেমে গিয়ে একে অন্যের সাথে লাথালাথি করতে দেখা যায়। তখন অনেকের মধ্যে দারুণ হতাশার সৃষ্টি হয়। কারণ সেখানে কর্তব্যে ছিলেন না স্থানীয় কাউন্সিলের কোনো কর্মকর্তা, এমনকী স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি।
সে যাই হোক, প্রতি বছর যদি এভাবে মধ্যরাতে হই হুল্লোড় করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ সরগরম করা হয় তবে ভবিষ্যতে এখানে আর হয়তো সমবেত হওয়ার সুযোগ নাও দিতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর যদি তাই হয়ে যায় তখন এ শহীদ মিনারের আসল কাজ ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কতটুকু সম্ভব হবে সেটা ভাবনার বিষয়। তাই আমাদের এখন থেকেই এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিৎ নয় কি?
এবারে আসা যাক শহীদ মিনারের সম্মানের বিষয়টির ব্যাপারে। নিয়ম হলো শহীদ মিনারে যখন কেউ ফুল দিতে যায় তখন মূল বেদিতে যাওয়ার আগে তাকে পায়ের জুতা খুলে নিতে হবে। অর্থাৎ সে ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি যাবে নগ্ন পায়ে। তার তখন মুখে থাকবে না কোনো হাসি, বলবে না কোনো কথা, আর পুস্পস্তবক অর্পন করবে নীরবে সম্মানের সাথে। যদি এ ভাবনা না থাকে তাহলে সেটা হবে শহীদদের প্রতি অবমাননা। আর যদি সেটার ব্যতিক্রম হয় তবে সেটা হবে শহীদদের সাথে বিদ্রুপ করার সামিল। তাঁদের আত্মা শান্তির বদলে পাবে কষ্ট। সুতরাং আমরা যদি আমাদের কাজের মাধ্যমে তাদের কষ্ট হয় তবে সেখানে গিয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কোন কারণ থাকতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে এখন থেকেই আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাতে এখানে এসে সবাই সেই আসল কাজটি করেন। তাঁরা যেন এখানে এসে হাসি দিয়ে শহীদ মিনারে ফুল না দেন। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে যেন পোজ না দেন। উচ্চস্বরে যেন শ্লোগান না ধরেন। জুতা নিয়ে যেন শহীদ মিনারের বেদিতে না উঠেন।
এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই শহীদ মিনারটি সারা বছর থাকে অরক্ষিত, সব সময় দেখা যায় মাদকসেবীরা এখানে বসে আড্ডা দেয়। অনেক ভিনদেশী বা অন্য দেশের লোকজন প্রশ্রাব করার সময় এখানে চলে আসে। সুতরাং এ ব্যাপারে যারা দায়িত্বশীল রয়েছেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন যাতে এর সম্মান ও পরিচ্ছন্ন রক্ষা পায়। এ বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিল অথবা বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকেও তদারকি করা যেতে পারে। আর যদি এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তবে একদিন হয়তো দেখা যাবে তা শুধু নামেই শহীদ মিনার থাকবে, আসল কোন কাজ হচ্ছে না। সুতরাং এখনই আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ ধরনের বিশৃংখলা কারো কাম্য নহে।