আব্দুর রাজ্জাক : একজন কিংবদন্তির গল্প এবং পরজীবী রাজনীতির প্রকাশিত কথা (দুই)
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭
(পূর্ব প্রকাশের পর…)
ছরওয়ার আহমদ :
তখনকার সময় আমাদের এই টেলিভিশন প্রোগ্রামের খবর সমগ্র বিয়ানীবাজারে প্রচার হয়ে যায় এবং প্রোগ্রামটি দেখতে বিয়ানীবাজারের মানুষের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা জন্মলাভ করে। অন্যদিকে রাজ্জাক চাচা ছিলেন পরবর্তী নির্বাচনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী, তাই অনুষ্ঠান প্রচারের বিষয়টি তাঁর কর্মী সমর্থকদের মাঝেও বেশ আগ্রহ জন্মায়। আমাদের সঙ্গীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও প্রচারের দিন বিয়ানীবাজারে মাইকিং করানো হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেই সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন শুধুমাত্র বিকেল ছয়টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করতো। অনুষ্ঠান প্রচারের দিন অনেক আগ্রহ নিয়ে আমরা টিভি’র সামনে বসেছিলাম। প্রতীক্ষার পর এলো সেই আনন্দের দিন ৫ আগষ্ট ২০০০ সাল। আমাদের রেকর্ডকৃত অনুষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে প্রচার হলো। কিন্তু বিয়ানীবাজার উপজেলাকে নিয়ে রাজ্জাক চাচার বক্তব্য অংশটি প্রচার হলোনা! যা ছিলো ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে বিয়ানীবাজারকে উপস্থাপিত বক্তব্য। সঙ্গত কারণেই তাঁর বক্তব্য ছাড়া এবং এটি ছিল অনুষ্ঠানের মূখবন্ধও, আমাদের অনুষ্ঠানই সাদামাটা হয়ে গেলো। যা বিয়ানীবাজার অন্তরা সংগীত বিদ্যালয় পরিবারকে আনন্দের পরিবর্তে চরমভাবে ব্যথিত করলো। একটি সুবর্ণ সুযোগে আমরা মূলতঃ ইতিহাস-ঐতিহ্যের আলোয় শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, আন্দোলন- সংগ্রামের বীরদর্পী আলোকস্নাত বিয়ানীবাজারকেই সমগ্র বাংলাদেশের সামনে উপস্থাপন করতে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। যা হঠাৎ করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিলো না। অনেক ভেবেচিন্তে, রিহার্সেল এবং স্ক্রিপটি অনেক তথ্যউপাত্বে সমৃদ্ধ করেই আমরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে উপণীত হয়েছিলাম। আমাদের চিন্তা চেতনা ও মননে ‘আলোকিত বিয়ানীবাজার’ যাকে ইতিহাসে সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রাচুর্যতার কারণে এই অঞ্চলকে ‘নবদ্বীপ’ বলে অভিহিত করা হতো।
অনুষ্ঠান প্রচারের পর সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজ্জাক চাচা ও তাঁর সমর্থকদের কাছে আমরা অনেকেই প্রচণ্ড লজ্জায় পড়ে যাই। নিজে লজ্জায় যেন মুখ ঢাকতে পারছিলাম না। ভাবনায় আসতো, রাজ্জাক চাচা হয়তো আমাকে প্রতারক ভাববেন। যিনি দু’বার বিদেশ যেতে তাঁর হাতে টাকা না পেয়েও আমার আমানতদার হয়েছেন। আমাদের এতগুলো মানুষকে নিজ বাসায় রেখে বাবুর্চি দিয়ে রান্না করিয়ে সমাদর করলেন, আর আমরা একটি অনুষ্ঠানে তার মাত্র পাঁচ মিনিটের একটি বক্তব্য প্রচার নিয়ে তাঁর সাথে কিনা এতোবড়ো তামাশা করলাম? তিনি একজন আপাদমস্তক ভদ্রলোক। আমাদের কাছ থেকে কোনো কিছু না চেয়ে, শুধু নিজ ভূমি বিয়ানীবাজারের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত দায় মনে করে এবং তার রাজনৈতিক দলের প্রতি আন্তরিকতার বশেই আমাদের ইচ্ছাপুরণে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিলেন। সেই ব্যক্তির সাথে কি এ ধরনের প্রতারণা সম্ভব? এ রকম নানা প্রশ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত দংশন করতো। এরপর আমি অনেকদিন লজ্জায় তাঁর সামনে যাইনি। তবে ক্ষুব্ধ মনে বিটিভি’তে তাঁর বক্তব্য প্রচার না করার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। অবশেষে জানতে পারলাম, যে মানুষটি ছিলেন আমাদের আস্থার ঠিকানা, যাকে আমরা আবেগ ও উৎসাহে উদ্বেলিত হয়ে এক অসম্ভব বৈরী পরিবেশ-পরিস্থিতিকে জয় করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে বিজয়ী করে নেতার আসনে বসিয়েছিলাম, সেই ভদ্রলোকই এই অসম্ভব অমানবিক ও নিষ্ঠুর সত্যকে বাস্তবে রূপায়িত করেছিলেন। ক্ষমতার জোরে বিটিভি’র মহা পরিচালককে বাধ্য করে আমাদের শত প্রচেষ্টার এই অনুষ্ঠান থেকে রাজ্জাক চাচার বক্তৃতার অংশটুকু বাদ দেওয়ানো হয়েছিলো। আমাদের এই আনন্দঘন কাজটিকে বিষাদের চাঁদরে ঢেকে দেওয়ার জন্য আমি আজও তাঁকে ক্ষমা করতে পারিনি। এতো ন্যাক্কারজনক কাজ তিনি করেছেন বা করতে পারেন তা আজও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সত্যি বলতে তখন মনকে শান্তনা দেওয়ার জন্যও কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি। ব্যক্তি স্বার্থ মানুষকে এতো নিচে নিয়ে আসতে পারে এবং এই রকম প্রগতিশীলদের তা আমাদের জীবনে না ঘটলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। সন্দেহ নেই। আসলে কেউ কারো বক্তৃতা প্রচার বন্ধ করে বা মেধার সম্মূখে বালির বাঁধ সৃষ্টি করে তাঁকে তার নীতি-আদর্শকে হত্যা করতে পারে না। মানুষের কর্মই তাকে মানবের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে। যা আজ রাজ্জাক চাচার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।
দুই:
আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের বিষয়ে লিখতে চাইলে বা চিন্তা করলে সর্বাগ্রে তাঁর জীবনের সর্বাপেক্ষা বিয়োগাতœক ঘটনাটি চোঁখের সম্মূখে চলে আসে। যে বিষয়টি আলোকপাত করতে হৃদয়ে তাড়না অনুভব করছি অনেকদিন থেকে। যা অপরাধী মনের ক্ষমা চাওয়ার অভিপ্রায়ও। অপ্রকাশিত বিষয়গুলো লিখতে অনেক ভেবে চিন্তে সাহস অর্জন করতে হলো বটে। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কর্মকৌশল প্রণয়ন ও সকল কার্যক্রমে দলের একজন নগন্য কর্মী হিসাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু ২০০১সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হয়ে যাই, বিধায় ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রমে দৈহিকভাবে অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু প্রবাস থেকে দল ও দলীয় প্রার্থীকে অন্যদের মতো সব সময়, নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলাম। এমনিতেই সদ্য প্রবাসে আসা ব্যক্তির নাড়ীর টান সহজে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
তদুপরি দেশে বিশেষতঃ বিয়ানীবাজারে ফেলে আসা দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্লাটফর্মের অগনিত নেতাকর্মীর সাথে আমার যে সুনিবিড় সম্পর্ক ছিলো, তা নির্বাচনের সময়ে দলের প্রয়োজনে নিজেকে আরো সুনিবিড় করে তুলেছিলো। বিয়ানীবাজারে দলের মধ্যকার নানান সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে দলকে বিজয়ের লক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রবাস থেকে আরো অনেকের মতো আমিও নিবেদিত ছিলাম। ফলে সহজেই ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলাম। তাই ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়ে যুক্তরাজ্যে থাকলেও দেশের নির্বাচনী কার্যক্রমে যে একেবারেই সম্পৃক্ত ছিলাম না একথা বলার কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক কর্মী ছিলাম এবং বিয়ানীবাজারেও দলের কর্মীবান্ধব একজন রাজনৈতিককর্মী ছিলাম, সে হিসাবে সংখ্যাঘরিষ্ট কর্মীরা তা খুব ভালোভাবে জানেন। দুঃখের সাথে বলতে হয়, ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে, ব্যক্তিবিশেষের রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে নেহায়েত খুটকো অজুহাতে এমন একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তিত্ব, প্রতিভাবান সংগঠক ও দক্ষ নেতৃত্বকে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এ প্রসঙ্গে আরেকজন খ্যাতিমান, ত্যাগী ও কিংবদন্তী নেতার নাম আসে অনায়াসে। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিভিন্ন মেয়াদে দীর্ঘদিন যিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহসিক্ত, যাকে জাতির পিতা ‘বিয়ানীবাজারী আজিজ’ বলে ডাকতেন। আমাদের বিয়ানীবাজারে বঙ্গবন্ধু এসছিলেন। সেই সময়, তাঁর বাড়িতে স্বানন্দে খাবার খেয়েছেন (আজিজ সাহেব সব সময় বঙ্গবন্ধুর গল্প করতে গিয়ে বলতেন- বঙ্গবন্ধু আমার স্ত্রীর হাতের রান্না সিলেটিদের প্রিয় হাঁস আর বাশেঁর সমন্ধয়ে তৈরী ‘‘করিল এর তরকারী” জীবনে প্রথম খেয়ে সিলেটি রকমারী রান্নার প্রসংসা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে, বিভিন্ন সময়ে খাবার বিষয়ে তার সহকর্মীদের সাথে আলাপ হলে, সিলেটিদের ‘‘হাঁস ও বাঁশ রেসিপি’র কথা উল্লেখ করতেন এবং সিলেটে গেলে এই খাবারের স্বাদ নেবার জন্য বলতেন। উল্লেখ্য, সিলেট অঞ্চলে বাঁশের চারার কোমল অংশ কুচি করে কেটে হাঁস দিয়ে রেধে খাওয়া হয়, যা আত“ীয়তার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রেসিপি হিসাবে সমাদৃত।) বঙ্গবন্ধু তাঁর মাঝে উজ্জল লিডারশীপআলো দেখেছেন বলেই তিনি ‘‘বিয়ানীবাজারী আজিজ’’ হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং নিজে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁর ভাই আব্দুল মান্নানকে পাকবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে ও তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং আতœীয়-স্বজনদের পাকবাহিনী নির্মম নির্যাতন করে। যিনি তাঁর পুরো পরিবারকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনানুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের দূর্গ বানিয়েছিলেন এবং ১৯৭৫’র ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘদিন জেল খেটেছিলেন। পরবর্তীতে নানান পার্থিব লোভ লালসার মোঁহেও বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রের সাথে আপোস করেননি, সারাটি জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর আওয়ামী লীগের পতাকাকে সমুড্ডীন রাখতে নিজের জীবন-যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন। সেই সর্বোচ্চ ত্যাগী, সর্বজন শ্রদ্ধেয়, বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম এ আজিজকেও দল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় চরম অপমাণ করে। যাকে এদতঅঞ্চলে ‘আজিজ মিয়া’ নামে মানুষ এক নামে চিনতো। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদকে আমি সম্মান করে ‘আজিজ চাচা’ বলে ডাকতাম।
আজিজ চাচা, রাজ্জাক চাচা প্রমূখদের হাতেগড়া সংগঠনে আমার মতো অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যারা এই সংগঠনটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদেরকে তাঁদের নিজ হাতে নির্মিত নিবাস থেকে ‘আশ্রিত’ দ্ধারা অপমানিত হয়ে দল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আজিজ চাচা, তাঁকে অপমান করার ব্যাথা নিয়ে এই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন আর রাজ্জাক চাচা অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। যদিও একসময় তাদের রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছিলো তথাপি পূর্বের সেই জৌলুসে ফিরে আসার পথ কৌশলে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কেননা তখন তাঁরা ছিলেন নিজ গৃহে পরবাসী। পরিস্থিতির আলোকে নিজেদের গুটিয়ে রাখাই ছিলো তাদের পক্ষে অধিকতর মানানসই । এই উভয় নেতার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তা ছিলো সংগঠনে তাঁদের অবদানের প্রেক্ষিতে শুধু বেমানান নয় তাঁদের প্রতি অন্যায় ও নিষ্ঠুর অপমান। ছিলো লঘু পাপে গুরুদণ্ড। প্রকৃত মুজিব সৈনিকরা যা আজও মেনে নেয়নি বা নিতে পারেনা। তাঁদের অপমানের কারণে এখনো মানুষ ক্ষুব্ধ, ব্যথিত। সংগঠনে চাপা ক্ষোভ বিরাজমান। বর্তমান বাস্তবতা হলো বিয়ানীবাজারের এই দুই পরীক্ষিত নেতাকে ‘শাস্তি’ দেয়া আর বাস্তবতার অমিলের দরুন মানুষের কাছে তাঁদের আবেদন ও শ্রদ্ধা দুটোই বেড়েছে আকাশছোঁয়া ।
সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা। চিরদিন মানুষকে দাবিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। কেউ না কেউ মিথ্যার বেড়াজাল ও রাতের অন্ধকার ভেদ করে সত্যের প্রকাশ করবেই। কেননা ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে। তাই সৎ সাহস নিয়েই বলছি, সেদিন তাদের বিরুদ্ধে গৃহিত কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ছিলো স্পষ্টত ভুল এবং আশ্রিত রাজনৈতিক নেতা দ্বারা প্ররোচিত। মূলতঃ বিয়ানীবাজারের গোটা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে এককভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে সকল রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মানসেই তাঁদেরকে সংগঠন থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিলো। যাতে বিনা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবাদে এককভাবে দল পরিচালনা করা যায়। যা একটি দীর্ঘ মেয়াদী গভীর ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার অংশ ছিলো। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি, সেদিন আমাদের শক্তি ও সাহস থাকা সত্ত্বেও এবং অনেক কিছু বুঝতে পেরেও এমন ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ আমরা করিনি। এমনকি জনাব আব্দুল আজিজ ও আব্দুর রাজ্জাক বিশেষ করে যাদেরকে রাজনৈতিক ও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করতেন, যাদেরকে বলতে গেলে রাস্তা থেকে তুলে এনে রাজনীতির শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তাদের পক্ষেও কেউ প্রতিবাদের ‘টু’ শব্দটিও করেনি। সবাই যেন এক অজানা অচেনা ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, যদিও এ সিদ্ধান্তে কেউ সুখি ছিলামনা এবং যেহেতু কেউ প্রতিবাদ করিনি, আসলে আমরা সকলেই সেদিন চিরাচরিত পৌরুষত্বকে বিসর্জন দিয়েছিলাম।
ছরওয়ার আহমদ : সাবেক ভিপি, ছাত্র সংসদ (১৯৯৫-৯৬), বিয়ানীবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বিয়ানীবাজার, সিলেট । বর্তমানে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা।