সিলেটে দুই চৌধুরীকে নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০১৭
দেশ ডেস্ক: সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট নেতার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এখন রীতিমতো ঝড় বইছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতার পক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অশালীন মন্তব্য করে যাচ্ছেন। বিষয়টি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, আক্রমণাত্মক ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহরূপ ধারণ করতে পারে বলে দলের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এতে দল এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। সিনিয়র নেতারাও বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন এবং তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরাও হতাশায় ভুগছেন। দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে জুনিয়র কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে একে অপরকে জড়িয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে বলে সিনিয়র নেতারাও স্বীকার করেছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন চাইলে অবশেষে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার কারণে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি থেকে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থকদের নিয়ে বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে তাদের নিজ নিজ বলয় গড়ে ওঠেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উভয় বলয় চাঙ্গা। গত ২৬শে অক্টোবর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দেশে অবস্থান করার পর থেকে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য প্রদানের মাধ্যমে একে অপরকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী দল। দুই প্রার্থীর মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরাই অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই চৌধুরী সরব রয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বেশ কয়েক জন সিনিয়র নেতা মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়ন কেড়ে আনতে এই আসনের সাবেক এমপি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হার্ডলাইনে রয়েছেন। সিলেট-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় তাদের দলীয় অনুসারীরাও সরব রয়েছেন। শফিকুর রহমান চৌধুরী যুক্তরাজ্য প্রবাসী হলেও নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি এমপি হওয়ার পর থেকে দেশে অবস্থান করছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও কিছুদিন পর পর দেশে এসে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন। দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি জাতীয় পার্টির অনুকূলে চলে যায়। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এই আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সক্রিয় রয়েছেন। তাদেরকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দাল মিয়া বলেন, কাউকে খাটো করা বা গালমন্দ করা মোটেই কাম্য নয়। এগুলো যারা করছে, তারা মূলত দলের ভালো চায় না। আর এগুলো করে কারো দলীয় মনোনয়ন ঠেকানো যাবে না। এখানে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যেই আসবেন দলীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন মন্তব্য করে সম্মানী কোনো ব্যক্তির মান সম্মান ক্ষুন্ন করা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগ ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কিছু অতি উৎসাহী ছেলেরা হয়তো এসব কাজ করছে। আমি এসবের পক্ষে নেই। আমার পক্ষে কারো বিরুদ্ধে কোনো খারাপ মন্তব্য করার প্রশ্নই ওঠে না। তারপরও এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আমি আমার সমর্থকদের সাফ জানিয়ে দেব। তিনি বলেন, জনসেবা করার ইচ্ছা এবং শখ আমার আছে। দলের কর্মী-সমর্থকের উৎসাহতেই আমি দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করছি। তাই বলে আমি দলের ঊর্ধ্বে নই, দলীয় সিদ্ধান্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করবে। সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কে কার পক্ষে-বিপক্ষে কি করছে না করছে সেটা আমি জ্ঞাত নই। আমি দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকার কারণে এসবে সময় দিতে পারি না। কেউ যদি এগুলো করে থাকে, তাহলে আমি এর পক্ষে নই। আওয়ামী লীগকে দুর্বল ও জায়ামাত-বিএনপিকে শক্তিশালী করতে কতিপয় মহল এসব কাজ করতে পারে। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আমি মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। সূত্র: মানবজমিন

