দাইউস কি (কে)?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রশ্নঃ
আমরা কিতাবে বা শায়খদের কাছে একটা শব্দ শুনি দাইউস। আমি আসলে এই কথাটা অর্থ ভালো করে বুঝি না। আপনি যদি এই শব্দটার আসল মানে কি এবং এটা আমাদের জানা থাকা দরকার কেন।
উত্তরঃ
দাইউস কথাটা মূলত হাদিসে এসেছে। এটা কুরআনে আসে নাই। হাদিস পড়লে বুঝা যায় যে সাহাবায়ে কেরামও এই শব্দটার সাথে খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। আব্দুল্লাহ বিন আল-হারেছ (রা) হতে বর্ণিত একটা হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন যে আল্লাহ তিনটা জিনিস তার নিজের হাতে তৈরী করেছেনঃ আদমকে তার নিজের হাতে গড়েছেন, তাওরাত নিজের হাতে লিখেছেন, আর ফেরদাউস নিজের হাতে নির্মাণ করেছেন। এরপর তিনি (আল্লাহ) বলেনঃ আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম করে বলছি- এখানে (ফেরদাউসে) মাদকাসক্ত প্রবেশ করবে না, আবার দাইউসও প্রবেশ করবে না। তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন যে আমরা তো মাদকাসক্তকে তা জানি, কিন্তু দাইউস কি (কে)? তখন তিনি বললেন যে তার পরিবারে ‘বদ’ কাজের স্বীকৃতি দেয়। (হাদিউল আরওয়াহঃ ইবনুল কাইয়েম ৯৮)।
এবার আরেকটি হাদিস দেখুন। এটা ইমাম আল-মুনযেরী আত-তারগীব ও আত-তারহীবে (৩/২৫০) বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (স) বলেন যে তিন (ধরণের ব্যক্তি কখনই জান্নাতে যাবে না- দাইউস, পুরুষালী মহিলারা আর মাদকাসক্তরা। তখন তারা বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ, মাদকাসক্তদের তো আমরা চিনলাম, কিন্তু দাইউস কে? তিনি বললেন- দাইউস হলো সেই ব্যক্তি যে তার পরিবারে কে প্রবেশ করলো তা ভ্রুক্ষেপ করে না। তখন আমরা বললাম- পুরুষালী মহিলা কারা? তখন তিনি বললেন যারা পুরুষের মতো হয়ে থাকতে চায়।
এই দুই হাদিস দ্বারা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হলো যে দাইউস হলো সেই ব্যক্তি যে তার পরিবারের মহিলা সদস্যাদের মান-সম্মান, চরিত্র ও ফ্রি মিক্সিং এর ব্যাপারে কোন খেয়াল করে না, বরং এটাকে মৌন সম্মতি দেয়। আমাদের সমাজে বহু মুসলমান আছেন যারা পরিবারে পর্দা-পুশিদাকে বাড়াবাড়ি ও সেকেলে বলে মনে করেন। অথচ একজন স্বামী বা বাবার দায়িত্ব হলো তার স্ত্রী বা মেয়েদের ঘরে কারা আসছে যাচ্ছে বা উঠাবসা করছে তা খেয়াল করা এবং এ ব্যাপারে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখা। যারা নিজেরা পরিবারের কর্তা হয়েও এ ব্যাপারে খেয়াল করেন না তারা জান্নাতে যেতে পারবেন না। অবশ্য যে মহিলারা অন্য পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশার ভ্রুক্ষেপ করেন না এবং নিজের মান-সম্মান ও চরিত্রকে হেফাজতও করেন না তারাও জান্নাতে যাওয়ার আশা করতে পারেন না। সামাজিকতার নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় ইসলাম যে বিধি নিষেধ দিয়েছে তা কিন্তু সকল ধর্মেই আছে। ইসলামকে এ কারণে চরমপন্থী মনে করার কোন কারণ নেই। তাওরাত ও বাইবেল নারীদের মুখ ঢাকা ও তাদের মান-সম্মান রক্ষা করার ওপর কি রকম তাকিদ দেওয়া হয়েছে তা পড়লেই বুঝা যায়। এখনো খৃষ্টান ‘নান’রা হিযাব পরে থাকেন এবং পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে বিরত থাকেন (দেখুনঃ Encyclopaedia Judaica, New York: Peter Publishing House, 1971 ,16/84, James Orr, eds. The International Standard Bible Encyclopaedia, Chicago: Howard Severance Company, 1915, 5/3047).
আমি অবাক হয়ে দেখেছি অনেক মাওলানাদের ঘরেও পর্দা-পুষিদা নেই। পরিবারে একেবারে অবাধ মেলামেশা হয় এবং এ কারণে গোচরে-অগোচরে অনেক অনৈতিক কর্ম-কান্ড হয়। ভাবী-দেবরের পরকীয়া প্রেম, পরিবারের অন্য সদস্যদের ভেতর পরকীয়া প্রেম ও যিনা ব্যভিচারের কথা আমরা কতই শুনি ও জানি। এগুলো সবই হয় অবাধ মেলামেশার কারণে। আর যে পুরুষেরা এগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন তারাই হলেন দাইউস। আর এই দাইউসরা জান্নাতে না যাওয়ার কারণ হলো তারা অন্য নারী-পুরুষকেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাচানোর কোন চেষ্টা করে না, অথচ পরিবারের কর্তা হিসাবে তারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। কিন্তু তারা সমাজের ভয় করেছেন বেশি, মানুষের সমালোচনাকে ভয় করেছেন বেশি, কিন্তু আল্লাহকে ভয় করেননি। আর যারা আল্লাহকে ভয় না করে মানুষকে ও তাদের সমালোচনাকে বেশি ভয় করেন তারা কিভাবে জান্নাতে যাবেন?
প্রশ্নঃ
নামাযের আগে মুখে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করে বলাকে আমাদের কিছু ইমাম ও মাওলানারা উত্তম বলেছেন। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাই। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তরঃ
অনেক ধন্যবাদ। আমি তো আসলে কোন ইমাম নই বা এমন বড় কোন পন্ডিতও নই। কিন্তু একজন মুসলমান হিসাবে একটা সহজ কথা আমি বুঝি- তাহলো আমাদেরকে ইসলাম শিখতে হবে আল্লাহর কাছ থেকে এরপর আল্লাহর রাসূল (স) এর কাছ থেকে। সালাত এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে, জিব্রাঈল (আ) এসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন ও শিখিয়ে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সেভাবে তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছেন। সালাত কিভাবে শুরু করতে হবে, কিভাবে পড়তে হবে কিভাবে শেষ করতে হবে রাসূলুল্লাহ (স) সবই করেছেন ও শিখিয়ে দিয়েছেন।
আপনারা হাদিসের কিতাবগুলো পড়ে দেখুন তো নামায শুরু করার আগে মুখে মুখে নিয়ত বলার কোন হাদিস পাওয়া যায় কি-না? যদি না পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে যে রাসূলুল্লাহ (স) মুখে মুখে নিয়ত বলতেন না। আর রাসূলুল্লাহ (স) যেহেতু করেননি, তাই আমরাও তা করা দরকার নেই। যদি কেউ বলেন যে রাসূলুল্লাহ (স) করেননি, কিন্তু এটা করা উত্তম, তাহলে তা হবে একদম বোকামী। কারণ এর অর্থ দাড়াচ্ছে এই যে রাসূলুল্লাহ (সা) নামায শিখিয়েছেন কিন্তু তিনি উত্তম নামায শিখাননি, আমাদের ইমামের কাছ থেকে উত্তম নামায শিখতে হবে। এটা রাসূলুল্লাহ (স) প্রতি চরম অপমান। এই ধরণের কথা যদি কেউ বলেন তাকে তওবা করা উচিত। যারা রাসূলুল্লাহ (স) এর আমলের বাইরে গিয়ে নিজের মন মতো ইসলামকে পালন করতে চান তারা ভীষণ বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন, আছেন বিদয়াতের মধ্যে। ইবাদতের নামে যারা বিদয়াত করেন, রাসূলুল্লাহ (স) তাদেরকে জাহান্নামের হুশিয়ারী দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।