কোরবানী না দিয়ে এই টাকা দিয়ে বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করছেন…? জেনে নিন ইসলাম কি বলে…
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০১৭
প্রশ্নঃ
শায়খ, বাংলাদেশে অনেক বুদ্ধিজীবী এখন জোর ফতোয়া দিচ্ছেন এই বলে যে কোরবানী না দিয়ে এই টাকা গরীব ও বন্যাদুর্গত লোকদেরকে দিয়ে দেন। আসলে এটা ঠিক কি না। আপনার কিছু দিক নির্দেশনা দিবেন দয়া করে।
উত্তরঃ
অনেক ধন্যবাদ।
দেশের মানুষের এই কষ্টে আমরা সবাই দুঃখিত এবং সবাই কম বেশী বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন এবং আরো করা দরকার। আমি অনুরোধ করব- আগে যার যার নিজের এলাকার লোকদের খবর নিয়ে দেখুন কার কি লাগবে। সে হিসাবে সাহায্য দিতে হবে। কিন্তু কোরবানী বাদ দিয়ে টাকা দেওয়ার ফতোয়াটা গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ কোরবানী দিয়েও তো অনেকেই সাহায্য করছেন। ঈদের সময় এই লোকগুলো বা তাদের বাচ্চারা যে কোরবানীর গোস্ত খেতে চায়, সে কথা কি এই ফতোয়াদাতারা ভুলে গেছেন? আর যারা এই ফতোয়া দিচ্ছেন তারা নিজেরা কি কোরবানী দেন?
উনারা তো এমন ফতোয়া দিতে পারতেন যে যারা সিগারেট খান তারা এ সপ্তাহ সিগারেট খাওয়া বন্ধ করেন। যারা সিনেমা দেখেন তারা সিনেমা না দেখে বন্যার্তদেরকে পয়সা দেন। যারা মদ খান তারা মদ খাওয়া ছেড়ে সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
এগুলো না করে কোরবানী বন্ধ করে টাকা দেওয়ার জন্যে এতো উঠে পড়ে লাগার তো দরকার নাই।
অথচ কোরবানী হলো এমন এক ইবাদত যা বছরে মাত্র একবার আসে। আর এক কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহ কোরবানীর পশুর লোম গুনে গুনে আল্লাহ সাওয়াব দেন। কোরবানীর সাওয়াব আর সাদাকার সাওয়াব আলাদা। দেখুন হাদিস শরীফে কি বলা হয়েছেঃ আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন যে- নাহরের দিন আল্লাহর কাছে কোরবানীর চেয়ে প্রিয় আমল আর কিছু নেই। কিয়ামতের দিন কোরবানীর শিং, পশম ও চামড়া উঠানো হবে। এর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌছে যায় (মানে আল্লাহ পছন্দ করে কবুল করে নেন)। তাই তোমরা এই রক্ত দিয়ে মেখে নাও। (নাসায়ী ও তিরমিজি, শায়খ আলবানী বলেছেন হাদিসটি সহীহ)।
যায়েদ বিন আরকাম থেকে বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) এর সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, এই কোরবানীগুলো আসলে কি?
তিনি বললেন এগুলো হলো তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ) এর সুন্নাত। তারা বললেন- এতে আমাদের কি হবে? তিনি বললেন- প্রতিটা লোমের জন্যে একটা সাওয়াব হবে। তারা বললেন পশমের কি হবে (ছোট পশুর)? তিনি বললেন প্রতিটা পশমেও একেকটা সাওয়াব হবে। (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ)।
এ ছাড়াও কোরবানীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (স) এর আরো অনেক বাণী আছে। যে কারণে হানাফী মত অনুযায়ী কোরবানী করা ওয়াজিব। অন্যদের মতে এটা সুন্নাত। ফলে, যারা সাহেব এ নেসাব বা কোরবানী দিতে সক্ষম তারা যেন যথারীতি কোরবানী দিয়ে যান। বরং আমি বলব- বন্যাগ্রস্থ পরিবারের সুন্দর ঈদের জন্য বরং এবার আরো বেশী করে কোরবানী করা দরকার। কারণ ঈদের দিনে বাচ্চারা যদি একটু গোশত খেতে না পারে তাহলে বাবা-মায়ের মনে কত কষ্ট লাগবে চিন্তা করে দেখেছেন?
যারা কোরবানী বাদ দিয়ে টাকা সাদাকার দেওয়ার কথা বলছেন তারা কোরবানীর আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও মানবীয় গুরুত্ব ও মূল্য গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছেন বলে মনে হয় না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে তার দ্বীনকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদক- মাসিক জায়তুন।