মুক্তামণির সফল অস্ত্রোপচার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০১৭
দেশ, ১৩ আগস্ট: ডাক্তারের মুখে হাসির ঝিলিক। বললেন, দ্বিতীয় দফা অপারেশনও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগের চেয়ে মুক্তামণি অনেকটা সুস্থ। তবে এখনও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। গতকাল অপারেশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তার এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তামণির অপারেশন ও তার পরবর্তী সকল বিষয় তুলে ধরা হয়। ডাক্তার সামন্ত লাল সেন প্রথমেই বলেন, এই অপারেশনটা সফলভাবে শেষ করার পেছনে ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে সবাই অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এ ব্যাপারে সবার দোয়া কামনা করে বলেন, আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ডাক্তার আবুল কালাম বলেন, অপারেশন করে মুক্তামণির রক্তনালির টিউমার কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। প্রায় দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের মাংসপিণ্ড তার হাত থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে থেকে ঝুঁকি কমলেও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি এখনও মুক্তামণি। এক প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার আবুল কালাম বলেন, মুক্তার সোল্ডার ও চেস্ট ওয়ালে অ্যাফেক্ট করেছে। এটা প্রাথমিক অপারেশন ছিল, প্রতি সপ্তাহে একটি করে আরো পাঁচ থেকে ছয়টি অপারেশন করা লাগবে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য রোগীর মতো অপারেশনের পর মুক্তামণিকেও ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ দিন মনিটর করে তারপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ভাববো।
গতকাল সকাল ৮টা ২০ মিনিটে মুক্তামণিকে ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারে। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে অপারেশন শুরু হয় পৌনে ৯টার দিকে। ডাক্তার সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে পনের জন সার্জারি ও সাত জন অ্যানেসথেশিয়া ডাক্তারের সমন্বয়ে তাদের সফল অপারেশন করা হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপারেশন শেষে ডা. সামন্ত লাল, ডা. আবুল কালাম, ডা. দিলীপ, ডা. নরেশ (এন.আই.টি.বিডি), ডা. মকবুল (ভাস্কুলার), ডা. সুব্রতসহ অপারেশন টিমের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। শুক্রবারও ১২ বছর বয়সি মুক্তামণির গায়ে জ্বর ছিল। অসুস্থতার কারণে যেই হাতটি গত তিন বছর ধরে নড়াতে পাড়েনি মুক্তামণি সুস্থ হওয়ার জন্য শত কষ্ট সহ্য করে শুক্রবার এম.আর.আই করার সময় হাতটি বুকের উপর নিয়ে আসে। তবে অপারেশনের আগে তার গায়ে জ্বর ছিল না। বরং অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে পিতা ইবরাহিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে মেয়ে মুক্তামণি তাকে বলেন, আমার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন, আমি সুস্থ হবই। অপারেশন চলাকালে পুরো সময় অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে ছিল মুক্তামণির বাবা ইবরাহিম ও মা আয়েশা। কথা বলতে গিয়ে তাদের চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছিল পানি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবাইশা গ্রাম থেকে গত ১১ই জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয় মুক্তামণি। মুদি দোকানি মুক্তামণির পিতা কোনোভাবেই এই বিরল রোগের চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভার নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ই আগস্ট মুক্তার বায়োপসি পরীক্ষা করার পর তার রক্তনালীতে টিউমার ধরা পড়ে। ডাক্তার সামন্ত লাল সেন ও ডাক্তার আবুল কালামের নেতৃত্বে সার্জারি বিভাগের ১৫ জন ও অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ৭জন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে মুক্তামণির চিকিৎসা শুরু হয়। মুক্তামণির শুধু একটাই ইচ্ছা সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে চায় সে। মুক্তামণির বাবা-মা শুধু একটা কথাই বলেছেন, আমার মেয়ের জন্য দোয়া করুন, মেয়েটা যেন আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে যায়।