ভিসা আবেদনে জালিয়াতি থেকে বিরত থাকুন —বিবিসিসিআই’র সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে বৃটিশ হাইকমিশনার
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০১৭
০ ডকুমেন্ট জালিয়াতিতে সিলেট শীর্ষে ০ একই ভুয়া সার্টিফিকেটে একাধিক আবেদন
০ ভিসা অফিস ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নাকচ ০ অক্টোবরে সিলেটে এনআরবি কনভেনশন
দেশ রিপোর্টে : বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক ইউকে ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সচ্ছতা অবলম্বনে সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ অবেদনই প্রত্যাখ্যান হয়ে থাকে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করার কারণে। এ ক্ষেত্রে সিলেটের অবস্থান শীর্ষে। সিলেটে ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জাল কাগজপত্র জমা দেয়া হয়ে থাকে। হাইকমিশনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য ওঠে এসেছে যে, একই ভূয়া সার্টিফিকেট ৫/৬ জন আবেদনকারী নিজ নিজ আবেদনে জমা দিয়েছেন।
তিনি ১৯ জুলাই বুধবার দুপুরে ক্যানারি ওয়ার্ফের ওয়ান কানাডা স্কয়ার ভবনের ৩৯ তলায় বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) আয়োজিত এক সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি আরো বলেন, এই জালিয়াতির কাজগুলো কখনও করে অসাধু এজেন্টরা, কখনোবা একজন অপরজনকে পরামর্শ দিয়ে করায়। একজন অপরজনকে হয়তো বলে যে, তোমার শিক্ষাগত সার্টিফিকেটগুলো আকর্ষনীয় না, আমার কাছে যেগুলো আছে সেগুলো দেখতে বেশ ভালো, তুমি এগুলো নাও। প্রতারণা প্রতিরোধে অনেক লোক আমাদের অফিসে কাজ করে। আমরা লোকজনের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে চাই যে, তাঁরা যেনো প্রলুব্ধ না হয়। কাগজপত্রে যদি কোনো গ্যাপ (বিরতি বা অপূর্ণতা) থাকে তবে দয়া করে আমাদেরকে জানান। কাউকে দিয়ে জাল কাগজ তৈরি করাবেন না।
আরেকটি বিষয় বলতে চাই। সেটি হলো, প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ না করার কারণে আমরা ভিসা আবেদন কখনও প্রত্যাখ্যান করিনা। কিন্তু আবেদনপত্রে উল্লেখিত স্ট্যাটাসের তথ্যের সাথে যদি জমা দেওয়া ডকুমেন্টের মিল খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। সুতরাং আপনাদের পরিচিত লোকজনদের বলবেন, কোনো তথ্য আবেদনপত্রে উল্লেখ করা উচিত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত না হলে তা উল্লেখ না করাই ভালো।
অ্যালিসন ব্লেইক আরো বলেন, দিল্লী থেকে বৃটিশ ভিসা অফিস ঢাকায় ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ভিসা প্রসেসিং দিল্লীতে স্থানান্তরের কারণে আবেদনকারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হচ্ছে না। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। ঢাকার অফিসারদের লোকাল জ্ঞানের বিষয়টি গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্টাফ সংকটের কারণে দিল্লীতে শুধু আবেদন প্রসেসিং করা হয়ে থাকে। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয় ঢাকায়। একজন বৃটিশ অফিসার ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
সংবর্ধণা অনুষ্ঠান শেষে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা হয় সাপ্তাহিক দেশ-এর এই প্রতিবেদকের সাথে। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিলো, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবীর পক্ষে বৃটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে কি-না? জবাবে অ্যালিসন ব্লেইক বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপ রেখা কেমন হবে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা কাউকে নির্দেশনা দিতে পারিনা। তবে অংশগ্রহণমুলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বৃটেন গোটা ইউরোপের মধ্যে বাংলাদেশী পণ্যের দ্বিতীয় প্রধান ভোক্তা। এটা নতুন প্রেক্ষাপটেও গুরুত্ব পাবে। দুম্বদেশের মধ্যকার এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক সমুন্নত রাখা আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর ইউরোপ থেকে বৃটেন বেরিয়ে এলেও বাংলাদেশের সাথে চলমান বাণিজ্যিক সম্পর্কে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। সেই সম্পর্ক আরো উন্নত করতে আমরা কাজ করবো। অ্যালিসন ব্লেইক সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করে বলেন, বৃটিশ নাগরিকদের প্রতি আমার আহবান আপনারা বাংলাদেশে ঘুরতে আসুন। বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন, সিলেটের সুন্দর্য উপভোগ করুন।
বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এনাম আলী এমবিইম্বর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দিপু মনি এমপি, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ গওহর রিজভী, যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহা, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহগির বক্ত ফারুক, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র এডভাইজার ড. ওয়ালি তছর উদ্দিন এমবিই, চেম্বার অব কমার্স নর্থ ইস্ট রিজিয়নের প্রেসিডেন্ট মাহতাব মিয়া, চেম্বার অব কমার্সের ডাইরেক্টর আহমদ উস সামাদ চৌধুরী ও ক্যানারী ওয়ার্ফ গ্রুপের ডিজি জন গারউড। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন লন্ডন রিজিয়নের প্রেসিডেন্ট বশির আহমদ। ধন্যবাদজ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন ডাইরেক্টর জেনারেল সাইদুর রহমান রেনু।
ড. গওহর রিজভি বাংলাদেশ নাগরিকত্ব খসড়া আইন নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই উল্লেখ করে বলেন, আইন যাই হোক প্রবাসীদের নাগরিকত্ব ও মর্যাদা দুটোই অক্ষুন্ন থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে একটি নিরাপদ দেশ। গত জুলাইয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুঃখজনক। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে বদ্ধ পরিকর। তিনি বলেন, প্রবাসীরা শুধু দেশের অর্থনীতিতেই যোগান দিচ্ছেন না। তাঁরা তাঁদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখছেন। তিনি সিলেটে আগামী ২১ থেকে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সপ্তাহব্যাপী এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন আয়োজনে সরকারী তরফ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আপনারা কনভেশনে আসুন। আমিও থাকবো। নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশীদেরকে (এনআরবি) যদি আমরা যথাযথ মুল্যায়ন করতে না পারি সেটা হবে আমাদের জন্য হবে দুঃখজনক।
ড. মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ বিনিয়োগের অভূতপুর্ব সম্ভাবনাময় একটি দেশ। তিনি প্রবাসীদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান। বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এনাম আলী এমবিই আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমরা এনআরবিরা সাধারণ নাগরিক নয়; আমরা গ্লোবাল সিটিজেন, চ্যাম্পিয়ন সিটিজেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রবাসীদের জন্য এনআরবি ডে ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, বৃটেন ও বাংলাদেশ দুই দেশই আমার কাছে সমানভাবে গুরুত্বপুর্ণ। আমি দুই দেশকে সমানভাবে ভালোবাসি। তিনি বলেন, বৃটেনের বেস্ট ফুড বাংলাদেশীদের কারণেই। বাংলাদেশীরা এদেশে বৃটিশ সোসাইটির খাদ্যাভাস পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তারাই বৃটিশ সোসাইটির খাদ্যতালিকার মূধ্য খাবারটি প্রবর্তন করেছেন। এনাম আলী এমবিই ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইকসহ অতিথিদেরকে সময় দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বিবিসিসিআই বৃটেন-ও বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধনে কাজ করে যাবে।