তিন বাঙালি এমপির বিশাল জয় : করবিনের জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভাসলেন তাঁরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০১৭
দেশ রিপোর্ট: আশংকা ছিলো রূপা হককে নিয়ে। কারণ তিনি গত নির্বাচনে মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু নাতনী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিককে নিয়েও সংশয় কম ছিলো না। কারণ ২০১৫ সালের নির্বাচনে কনজার্ভেটিভের প্রার্থীকে এক হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। তবে বেথনাল গ্রীন এন্ড বো আসনের প্রথম বৃটিশ বাঙালি এমপি রুশানারা আলীর ব্যাপারে তেমন কোনো চিন্তার কারণ ছিলো না। কারণ এই সীটটি লেবারের নিরাপদ আসন বলে পরিচিত। ধারণা ছিলো, গতবারের নির্বাচনের চেয়ে কিছু কম ভোট পেতে পারেন। কিন্তু হালে হয়েছে বিপরীত। গত বারের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। গতবার পেয়েছিলেন ৩২ হাজারের কিছু বেশি ভোট। আর এবার পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট। ২০১০ সালের নির্বাচনী প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ধারণা করা হয়েছিলো স্বতন্ত্র প্রার্থী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমাল মাসরুর রুশানারা আলীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো হিসাব নিকাশ ঠিক থাকেনি। আজমাল মাসরুর ৩৮৮৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থান অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে কনজার্ভেটিভ। অথচ ২০১০ সালে ২১ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে রুশানারা যখন প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তখন আজমাল মাসরুর ১০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
রুশানারা আলীর এই বিশাল জয়কে বেথনাল গ্রীন ও বো এলাকাবাসী লেবার লিডার জেরেমি করবিনের বিশাল জয় বলেই দেখছেন। তাদের মতে জেরেমি করবিনের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রুশানারা আলীর বিশাল অর্জনের অন্যতম কারণ। কারণ মানুষ ব্যক্তি দেখে ভোট দেয়নি, লেবার পার্টিকে ভোট দিয়েছে জেরিমি করবিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে।
শুধু রুশানারা আলীই নয়, বঙ্গবন্ধু নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক দুইজনও বিশাল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন জেরেমি করবিনের জনপ্রিয়তার জোয়ারে।
টিউলিপ সিদ্দিক : বৃটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি লেবার পার্টি থেকে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে তিনি প্রায় ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন মোট ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভ দলের প্রায় পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯শ ৪ ভোট। ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় টিউলিপ সিদ্দিক বেশি ভোট পেয়েছেন শতকরা ১৪.৬ ভাগ। বিজয়ী টিউলিপ বলেছেন, ওয়েস্টমিনস্টারে আমি হবো হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের কণ্ঠস্বর। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টুইটারে টুইট করেছেন টিউলিপ। তিনি বলেছেন, হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নে পুননির্বাচিত হওয়ায় আমি উদ্বেলিত। আমাকে সমর্থন করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিককে বিজয়ী করতে দিনরাত ক্যাম্পেইন কলেছেন লেবার সমর্থিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সাথে সাথে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী হ্যামস্টেড ও কিলবার্ণে ক্যাম্পেইনে ঝাপিয়ে পড়েন। নির্বাচনে পুনর্বিজয়ের পর টিউলিপ সিদ্দিক তাদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বেশি ভোট প্রাপ্তির কারণ হিসেবে তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, টিউলিপ সিদ্দিক তুলনামুলক জনসম্পৃক্ত এমপি। ২০১৫ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর এলাকার মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করেছেন। পার্লামেন্টেও বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনালড ট্রাম্পের ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের পর টিউলিপ সিদ্দিকই একমাত্র বাঙালি মুসলিম এমপি যিনি কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ করেছিলেন। শুধু ট্রাম্প ইস্যুতেই নয়, আরো বিভিন্ন বিষয়ে পার্লামেন্টে তাঁর ভুমিকা প্রশংসা পেয়েছে। তিনি পরিচিতি পেয়েছেন সাহসী ও তেজোদীপ্ত পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে।
রুশানারা আলী: রুশানারা আলী ২০১৫ সালের চেয়ে এবার ১০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন। এবার তিনি পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯শত ৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট। জয়ী হওয়ার পর রুশনারা এক টুইটে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সবাইকে। তিনি টুইটে লিখেছেন, আমাকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত করায় বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের সবাইকে জানাই হৃদয় নিঙড়ানো ভালবাসা। এটা আমাকে দেয়া আপনাদের সম্মান।
উল্লেখ্য, রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথে। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি চলে আসেন লন্ডনে। তখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর। লন্ডনে এসে তারা বসবাস শুরু করেন পূর্ব লন্ডনে। মালবেরি স্কুল ফর গার্লস এবং পরে টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে পড়াশোনা করেন। রুশনারা বেড়ে উঠেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসে। তিনি তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
রূপা হক : বৃটেনে পার্লামেন্টে নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রূপা হক। তিনি লন্ডনের ইলিং থেকে লেবার দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী চেয়ে তিনি ১৩ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৭২ ভোট।